ভয় ধরানোর পর স্বস্তির জয়

মঙ্গলবার ওমানের আল-আমেরাত স্টেডিয়ামে ওমানকে ২৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।  বাংলাদেশের ১৫৩ রানের জবাবে ওমান ৯ উইকেটে করেছে ১২৭ রান। 

নাঈম শেখের ফিফটিতেও আগে ব্যাট করে খুব চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। রান তাড়ায় ওমান উড়ন্ত সূচনা আনার পর জতিন্দর সিংয়ের ক্যাচ মাহমুদউল্লাহর হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাই হানা দিচ্ছিল আতঙ্ক। চোখ রাঙানি তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ারও। তবে শেখ মেহেদী হাসান আর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের দারুণ হিসেবি বোলিং দলকে রাখল ম্যাচে। শুরুতে উইকেট আনা মোস্তাফিজুর রহমান শেষেও নিলেন উইকেট, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট আনলেন সাকিব আল হাসানও।  স্বস্তির জয়ে টিকে থাকল বাংলাদেশের মূল পর্বের আশা।

মঙ্গলবার ওমানের আল-আমেরাত স্টেডিয়ামে ওমানকে ২৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।  বাংলাদেশের ১৫৩ রানের জবাবে ওমান ৯ উইকেটে করেছে ১২৭ রান। 

তবে ম্যাচের ফল জানান দিচ্ছে না যে কতটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ওমান। একটা পর্যায়ে ১২ ওভারে ৩ উইকেটে ৯০ ছিল তাদের স্কোর। ওই জায়গা থেকে দুবার জীবন পাওয়া জতিন্দর সিং ৩৩ বলে ৪০ করে আউট হওয়ার পর বদলে যায় ছবি। পরের ২৪ বলে ২২ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে খেলা থেকে ছিটকে যায় তারা।

ব্যাট হাতে ২৯ বলে ৪২ আর ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব। তবে দলের জয়ে অবদান আরও কজনের। একাদশে ফিরে এই ম্যাচে শুরুটা বেশ মন্থর করার পর দুবার জীবন পান নাঈম শেখ, তা কাজে লাগিয়ে তিনি করেন ৫০ বলে ৬৪।  অফ স্পিনার মেহেদী ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট, সাইফুদ্দিনের ৪ ওভারে কেবল ১৬ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নেন ৪ উইকেট। 

১৫৪ রান তাড়ায় নেমে তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে ১২ রান তুলে ফেলে ওমান। দ্বিতীয় ওভারে শুরুতেই বিপদজনক আকিব ইলিয়াসকে ফেরান মোস্তাফিজ। তবে ৫ ওয়াইডে ১১ বলের ওই ওভারেও আসে আরও ১২ রান।

সাইফুদ্দিনের পরের ওভারে গালিতে জতিন্দর সিংয়ের ক্যাচ লাফিয়ে ধরতে পারেননি মোস্তাফিজ। ২ রানে জীবন পান জতিন্দর ।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল করতে এসেও তাকে ফেরানোর বড় সুযোগ এসেছিল মোস্তাফিজের সামনে। তার ব্যাক অফ দ্য হেন্ড ডেলিভারির বল উড়াতে আকাশে তোলে দেন জতিন্দর। ১০ রানে থাকা এই ব্যাটসম্যানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ওই ওভারে এক ছক্কা মেরে প্রজাপতি ক্যাশপ উইকেটের  পেছনে ক্যাচ দিলে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশের।  পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৭ তুলে ওমান।

তৃতীয় উইকেটে এরপর ৩৪ রানের জুটি পেয়ে যায় ওমান। জতিন্দরের সঙ্গে আরেক পাশে টিকে দলকে ভাল অবস্থার দিকে নিতে থাকেন জিসান মাকসুদ। যদিও তিনি ছিলেন বেশ মন্থর। প্রথম কয়েক বলে রানই বের করতে পারেননি। পরে তাসকিনকে ফ্লিক করে ছক্কায় উড়িয়ে কিছুটা রান বাড়ান। রানের চাপে শেখ মেহেদীকে স্লুগ সুইপ করতে গিয়ে মোস্তাফিজের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন। ১৬ বলে ১২ করে থামে তার দৌড়।

দুবার জীবন হয়ে ওমানের আশা-ভরসা ছিলেন জতিন্দর। খেলছিলেনও সাবলীল। সাকিবকে ফাইন লেগ এক বাউন্ডারি মারার পর আবার সেই চেষ্টাই গিয়ে কাল হয় তার। ৩৩ বলে ৪০ করে তিনি জমা পড়েন লিটন দাসের হাতে।

১৩তম ওভারে ৩ উইকেটে ৯০ থেকে হুট করে পথ হারায় স্বাগতিকরা। পরের ২৪ বলের মধ্যে একের পর এক উইকেট পতনে তালগোল পাকিয়ে ফেলে অনভিজ্ঞ দলটি। 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে চরম মন্থর শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ৯ বলের সবগুলো খেলে নাঈম করেন ২। স্ট্রাইক পেয়ে অস্থির হয়ে যাওয়া লিটন টাইমিং গড়বড় করেন বারবার। একবার জীবন পেয়ে ৭ বলে ৬ রান করে বিলাল খানের পেসে থামেন তিনি। বাঁহাতি পেসার বিলালই ভুগিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।

তিন নম্বরে নেমে সাকিবও শুরুতে ধুঁকতে থাকেন। পাওয়ার প্লেতেই ২২টি ডট বল খেলে বাংলাদেশ। ১৯ বলে তখন ১৫ রানে নাঈম।

পাওয়ার প্লের পরও চড়াও হতে সময় লাগে তাদের। ১৮ রানে প্রথম জীবন পান নাঈম। ফায়াজ বাটের শর্ট বল উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন নাঈম। জতিন্দর সিং ক্যাচ নিতে গিয়ে উলটো  ছক্কা বানিয়ে দেন । পরের ওভারে আবার জীবন পান তিনি। মোহাম্মদ নাদিমের বলে মিড উইকেটে তার লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেন প্রজাপতি ক্যাশপ।

জীবন পেয়েও আরও সতর্ক হন নাঈম। নিজেকে আরও কিছুটা সময় গুটিয়ে রাখেন তিনি। সাকিব ততক্ষণে হাত খুলতে শুরু করেছেন। কয়েকটি বাউন্ডারিতে রান বাড়ান তিনি। পরে তাতে যোগ দেন নাঈমও। আলগা বল পেয়ে উড়ান চার-ছক্কা।

এক পর্যায়ে তার রান ছিল ৩৩ বলে ৪২। পরে ৪৩ বলে করেন ফিফটি। সাকিব চালিয়ে খেলে সে পথেই এগুচ্ছিলেন। ২৯ বলে ৪২ করার পর সরাসরি থ্রোতে রান আউটে কাটা পড়েন।

নাঈম আরও কিছুক্ষণ ছিলেন। পরে ৩ চার, ৪ ছক্কায় ৫০ বলে ৬৪ করে ইতি টানেন তার ইনিংস।

দ্রুত রান বাড়াতে নুরুল হাসান সোহানকে পাঁচে, আফিফ হোসেনকে ছয়ে নামিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই অভিজ্ঞ মাহমদুউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম নেমে যান নিচে।। এই ফাটকা কাজে লাগেনি। সোহান ৪ বলে ৩ করে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন। আফিফ ৫ বলে ১ রান করে বিদায় নেন। সাত নম্বরে নেমে প্রথম বলে ৪ মারলেও পরে ৪ বলে ৬ করে উইকেটের পেছনে ধরা দেন মুশফিক। সাইফুদ্দিন বিদায় হন প্রথম বলেই।

শেষ দিকে অধিনায়কই চার-ছয়ে রান বাড়িয়ে দলকে দেড়শ পার করতে ভূমিকা রাখেন। শেষ ওভারে যদিও বিলাল তাকে বোল্ড করে দেন। তবে তার ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংসটাও ছিল যথেষ্ট কার্যকর।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ :  ২০ ওভারে ১৫৩ (নাঈম ৬৪, লিটন ৬, শেখ মেহেদী ০, সাকিব ৪২, সোহান ৩, আফিফ ১, মাহমুদউল্লাহ ১৭,  মুশফিক ৬, সাইফুদ্দিন ০, তাসকিন ১* , মোস্তাফিজ ২ ; বিলাল ৩/১৮ , কালিমুল্লাহ ২/৩০ , ফায়েজ  ০/৩০ , নাদিম ০/৩৫,   আকিব ০/১৬,  জিসান   ১/১৭)

ওমান :   ২০ ওভারে ১২৭/৯  (আকিব ৬, জতিন্দর ৪০ , প্রজাপতি ২১, জিসান  ১২, আয়ান ৯ , সন্দিপ ৪, নাসিম ৪, কালিমুল্লাহ ৫ ,  নাদিম ১৪*, ফায়েজ ০, বিলাল ০*  ; তাসকিন ১/৩১,  মোস্তাফিজ ৪/৩৬, সাইফুদ্দিন ১/১৬, সাকিব ৩/২৮ , শেখ মেহেদী ১/১৪ )

ফল: বাংলাদেশ  ২৬  রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

3h ago