দিবস উদযাপনের ডামাডোলেই আটকে পড়েছি

লেখাটা ঠিক কোথা থেকে, কীভাবে শুরু করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে পতাকা তৈরি, শিক্ষকদের গ্রুপ ছবিতে অচেনা চেহারার জাতীয় পতাকা, মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুদার ভাস্কর্যের কান উড়িয়ে দেওয়া, কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুর। এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা একটা বিষয়ে পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে যারা এইসব ভাংচুর সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত, তারা অন্তত দেশে কার, কী, কেন ভাঙতে হবে, কোন কোন সৃষ্টিতে হাত দিলে বেশ সাড়া ফেলা যাবে, এটা জানে।

লেখাটা ঠিক কোথা থেকে, কীভাবে শুরু করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে পতাকা তৈরি, শিক্ষকদের গ্রুপ ছবিতে অচেনা চেহারার জাতীয় পতাকা, মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুদার ভাস্কর্যের কান উড়িয়ে দেওয়া, কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুর। এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা একটা বিষয়ে পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে যারা এইসব ভাংচুর সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত, তারা অন্তত দেশে কার, কী, কেন ভাঙতে হবে, কোন কোন সৃষ্টিতে হাত দিলে বেশ সাড়া ফেলা যাবে, এটা জানে।

আর দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কীভাবে রক্ষা করতে হবে এটা যাদের জানার কথা তারা আসলে কিছুই জানে না বা জানতে চায়ও না।সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশে এমন একটা শক্তির উত্থান ঘটছে, যারা কোন কিছু নিয়েই মাথা ঘামায় না। যাদের কাছে ইতিহাস নিছক একটা ছিঁচকাঁদুনে বিষয়।

কিছুদিন আগে ভারতীয় একটি বাংলা চ্যানেলে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে ধারাবাহিক সিরিজ নাটক দেখাল। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার বাসার ছোট-বড় সব সদস্য নেতাজীর উপর নির্মিত ধারাবাহিকটি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে এবং নানারকমের প্রশ্ন করে সেইসময়ের ইতিহাস জানারও চেষ্টা করছে। সেখানেই নতুন করে বাঘা যতীনের কথা উঠে এল। আর তাই যখন পত্রিকার পাতায় খবর বের হলো যে কে বা কারা বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে, তখন দেখলাম বাসার কম পড়াশোনা জানা মানুষগুলোই আমার কাছে জানতে চাইলো কেন বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙা হলো? উনি না ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন? আমি এর যুৎসই কোনো উত্তর দিতে পারিনি।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন উৎখাত করে উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে বাংলার এক অসম সাহসী মহান বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া গ্রামে। কয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্য রাতের অন্ধকারে ভাঙার অপচেষ্টা করেছে একটা গ্রুপ। বাঘা যতীনের ইতিহাস মাত্র ২৪ বছর বয়সের ইতিহাস। অথচ ওই ছোট বয়সেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তরুণটি। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা সংগ্রামের এক রণক্ষেত্রে পরিণত হল বুড়িবালামের তীর। বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে বাঘা যতীন মারা যান। একটা খুব সাধারণ নাটক দেখতে গিয়ে আমরা আবার নতুন করে যেন ইতিহাস পড়লাম। নতুন করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জানলাম।

ঠিক এর উল্টোদিকে আমাদের কথা ভাবুন তো। আমরা ইতিহাস ভিত্তিক কোনো কাহিনী কি সাফল্যের সঙ্গে নামাতে পেরেছি? সেই মুক্তির গান, জীবন থেকে নেয়া, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ওরা ১১ জন, আবার তোরা মানুষ হ অথবা আগুনের পরশমণি এই নিয়েই তো চলছে। বারবার দেখাতে দেখাতে এই সিনেমাগুলোকে খুবই সস্তা বানিয়ে ফেলেছি আমরা। সেই সঙ্গে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে না পারাতে আমরা এক ইতিহাস বিবর্জিত মূর্খ জাতিতে পরিণত হতে চলেছি।

একটা সময় ছিল যখন একা এই বিটিভিই ভালো ভালো নাটক বানিয়ে আমাদের জাতীয় দিবসগুলোকে—বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফ্রেব্রুয়ারিকে আলোকিত করে রাখত। নামকরা সব নাট্যকার, পড়াশোনা জানা পরিচালক-প্রযোজক, গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই মিলে দারুণ শক্তিশালী টিম ছিল। কিন্তু সময়ের আবর্তে এক বিটিভি থেকে আরও ১০০টি চ্যানেল এসেছে, কিন্তু আমাদের গৌরবগাঁথা, প্রচার-প্রচারণা কি শক্তিশালী হয়েছে? এর উত্তর আমার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গায়ের জোরে বা চমক দিয়ে জ্ঞানকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা যায় না।

এইসব সস্তা টাইপের ভারতীয় বাংলা চ্যানেল যদি নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু, দস্যু রাণী ফুলন দেবী, সিরাজউদ্দৌলা, টিপু সুলতান, প্রথম বাঙালি নারী ডাক্তার কাদম্বিনীকে নিয়ে কাহিনী দেখাতে পারে এবং দুই বাংলার দর্শক যদি তা গ্রহণ করে, তাহলে আমরা এমনই কিছু করিনা কেন? খুব সহজ ভাষায় ইতিহাস তুলে ধরার কাজটা খুব জরুরি।

বহুবার বহুজনকে বলেছি শুধু জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ নিয়েই একটি ধারাবাহিক করেন। সেটা হলে এমন একটি ধারাবাহিক হতো, যা হতো খুবই হৃদয়স্পর্শী। এম আর আক্তার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’ এর কি কোন নাট্যরূপ দেওয়া সম্ভব ছিল না? মুহাম্মদ জাফর ইকবালের তো এমন বইয়ের অভাব নেই। হুমায়ুন আহমেদ লিখে গিয়েছেন অসংখ্য বই। কই আমরা কি কখনো ভেবেছি এইসব নিয়ে কোনো নাটক-সিনেমা বানানোর কথা। এমনকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পাক-ভারত উপমহাদেশ নিয়ে যে তিনটি উপন্যাস লিখেছেন, সেইগুলো নিয়েইবা আমরা ভাবিনা কেন?

এখনকার সময়টাই এমন, মানুষ বই পড়ে না, পড়ে কোন কিছু জানতে চায় না, শুধু ভিডিও দেখে। শিশু বুড়া সবাই এখন সিঙ্গেল ট্র্যাক্ড। সবাই কি যেন এটা ঘোরের মধ্যে আছে। জ্ঞান নামক জিনিষটার মতো এত হেলাফেলার জিনিষ যেন এখন আর হয় না। এইসব দিবস পালন, মুক্তিযুদ্ধ, বীর সেনানী, দেশ, জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, মানব উন্নয়ন সূচক সব খুব হালকা বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাস করেন মানুষ ভালো কিছু গ্রহণ করতে ভুলে যাচ্ছে। শুধু টাকা-আনা-পাইয়ের জীবন আমাদের। পি কে হালদার, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক আমাদের চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর তাই ইদানীং বারবার মনে হচ্ছে যদি সহজভাবে চকলেট মোড়ানো রাঙতায় পুরে সাধারণ মানুষের হাতে বিশেষ করে শিশুদের হাতে ইতিহাস, জ্ঞান বিজ্ঞান, প্রকৃতি, পরিবেশ তুলে দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো বা কিছু একটা নতুন করে শুরু হলেও হতে পারত।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একবার বলেছিলেন, এই প্রজন্মের কাছে নেই কোনো পাড়া-মহল্লার শিশু সংগঠন, নেই কোন ক্রীড়াচক্র, নেই পাড়াভিত্তিক লাইব্রেরি। এদের জগত ভিডিওকে ঘিরে। কাউকে কিছু চিন্তা করতে হয় না, সব সামনে চলে আসে। শুধু টেকনোলজিটা শিখে নিলেই চলে। এরমধ্যে থেকে কে, কতটা কী গ্রহণ করবে বা গ্রহণ করার যোগ্যতা রাখে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

স্যারের মুখে সেদিন সেই কথাটা শুনে সত্যিই আমার মনে হয়েছিল আমরা পেছনে হাঁটছি। ৭০/৮০ এর দশকে আমরা যখন খেলাঘর করতাম, তখন আমাদের জন্য সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল খেলার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানার আনন্দ। কেউ আমাদের হাতে ধরে, মারপিট করে বা বকা দিয়ে দেশ, দেশের ইতিহাস, গান-বাজনা, বিতর্ক করা, ছবি আঁকা, স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস উদযাপন, শহীদ কবিতা আবৃত্তি, দেয়াল পত্রিকা তৈরি করা শেখায়নি। বাসা থেকে যতোটা শিখেছি, খেলাঘর এবং গার্লস গাইড থেকে এর চেয়ে অনেক বেশি শিখেছি।

আমরা অনেকেই একটা সময় খেলাঘর করতাম, গার্লস গাইড, বয় স্কাউট, চাঁদের হাট, শাপলা শালুক করতাম। প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায়, জেলা শহরে, গ্রামে-গঞ্জে সবখানে বাচ্চারা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিত। আমরা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক কিছুই জেনে গিয়েছিলাম। একটি ভালো বিষয়ভিত্তিক দেয়াল পত্রিকা তৈরি করতে গেলে যে সেই বিষয়ে অনেক কিছু জানতে হয়, তাতো অবশ্যম্ভাবী ছিল। পাড়ায় পাড়ায়, এলাকায় এলাকায়, এক খেলাঘরের সঙ্গে অন্য খেলাঘরের বা একটা সংগঠনের সঙ্গে আরেকটা সংগঠনের মধ্যে সুস্থ, সুন্দর প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। আর এই প্রতিযোগিতার কারণেই আমাদের জানার পরিধি ব্যাপক হতো। সাথে ছিল সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া।

এই যে সেদিন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ হাসি হাসি মুখে, নির্লজ্জ ভঙ্গীতে ভুল জাতীয় পতাকা হতে ছবি তুলেছেন, সেটা কিন্তু তাদের একার দায় নয়। এ সম্পর্কিত কোনো চেতনা, দায়বদ্ধতার শিক্ষা তাদের দেওয়া হয়নি। পরীক্ষায় পাশ করেছে, শিক্ষক হয়েছে, ছাত্রও পড়াচ্ছে কিন্তু নিজেদের আলোকিত করার কোন শিক্ষাই তারা সত্যিকার অর্থে পায়নি। আর যে কারণেই এইরকম দুর্বীনিত আচরণ ও মূর্খ কর্মকাণ্ডের প্রকাশ। হয়তো খুঁজলে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলে এমন কিছু পাওয়া যাবে।

আমাদের পতাকাটা উড়ানোর বা হাতে ধরে ছবি তোলার ব্যাপার না। এটা আবেগ অনুভূতি আর ভালবাসার ব্যাপার। একাত্তরে বেশির ভাগ পতাকাই ছিল বাসায় মায়ের হাতে বা অপেশাদারদের সেলাই মেশিনে করা। মাঝখানে হলুদ রঙা বাংলাদেশের মানচিত্র বানানোটা কঠিন ছিল। লাল বৃত্ত করাটা তো বেশ সহজ ছিল। আর তাই পতাকা বানানো নিয়ে আমাদের নতুন করে কিছু ভাবতেই হয়নি।

আমাদের পরিবারগুলোতে দেখেছি জাতীয় পতাকা হাতেই সেলাই করা হতো। এখন যেভাবে রাস্তায় রাস্তায় জাতীয় পতাকা বিক্রি করা হচ্ছে, বিষয়টি ঠিক এত সহজ ছিল না। আম্মাকে দেখেছি নিজের সেলাই মেশিনে বসে জাতীয় পতাকা সেলাই করতে। আর এই সেলাই করতে গিয়েই তাদের শিখতে হয়েছিল এর মাপ ও তৈরির প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারীভাবে গৃহীত হয়েছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একই রকম দেখতে একটি পতাকা ব্যবহার করা হতো, যেখানে মাঝের লাল বৃত্তের ভেতর হলুদ রঙের একটি মানচিত্র ছিল। ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল পরবর্তীতে পতাকাকে সহজ করতেই। কিন্তু তাতেও কি কোন লাভ হলো? আমরা কি কিছু শিখেছি?

১৯৭১ সালের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ছাত্র নেতা আ স ম আব্দুর রব। শেখ মুজিবুর রহমান মার্চ ২৩ তারিখে তার বাসভবনে, স্বাধীনতা ঘোষণার আগে এই পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনের পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা সহজ পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

কিন্তু বাংলাদেশের এই পতাকা তৈরির ইতিহাস কি আমরা অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে, সিনেমা, নাটকে তুলে ধরতে পেরেছি? আমরা ঠিক কয়জন মানুষ জানি এই গল্প? এত ইন্টারেস্টিং একটি অর্জন নিয়ে আমরা কি পারতাম না এমন কিছু তৈরি করতে, যা মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেখত, অনুভব করত, প্রচার করত। সরকারের এত বড় একটি তথ্য মন্ত্রণালয় রয়েছে, প্রচার প্রচারণার পিছনে কোটি কোটি টাকা অযথা খরচ হচ্ছে, কিন্তু ভালো কিছু কি হচ্ছে? কতটা হচ্ছে?

আমাদের বুঝতে হবে আজকের এই দুনিয়া ডিজিটাল দুনিয়া। এখানে ভালো খারাপ যাই হচ্ছে ডিজিটালি হচ্ছে। কাজেই সাধারণ মানুষ ও শিশুদের কাছে আমাদের সেইভাবেই ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তাদের জানাতে হবে, মানতে বাধ্য করতে হবে জাতীয় পতাকা, জাতীয় দিবস, জাতীয় বীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে। খুঁজে বের করতে হবে কোন পদ্ধতিতে তথ্য দিলে মানুষ গ্রহণ করবে।

যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় ত্রাণ শিবিরের দিন-রাত, সেখানে কত শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকরা কাজ করেছেন, পরিচালক ঋত্বিক ঘটক বাংলাদেশের জন্য পথে দাঁড়িয়ে হাত পেতে ভিক্ষে করেছেন, পণ্ডিত রবিশংকর স্টেজ পারফরমেন্স করেছেন। কোথায় সেইসব ইতিহাস? আমরা কি জানি এবং জানাতে চেয়েছি কাউকে? কত মানুষের কত অবদানে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে সে কথা তুলে ধরার কোন চেষ্টা চোখে পড়ে না।

আমরা কেমন জানি শুধু দিবস উদযাপণের ডামাডোলে আটকে পড়েছি। যার যা খুশি তাই করছে। যেভাবে খুশি দিবস উদযাপন করছে। কোথাও কোন জবাবদিহিতা নাই, কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো খবর নেই।

আর আমরা যারা নিজেদের সচেতন শক্তি বলে মনে করছি, তারাও কি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ কথাবার্তা বলা ছাড়া, আর চেতনা চেতনা করে গলা ফাটানো ছাড়া কিছু করছি? এমন কোনো সৃজনশীল কাজ কি করছি, যা দিয়ে আমরা মানুষের মনে সহজে ইতিহাস নিয়ে ঢুকে যেতে পারব? ভুলে গেলে চলবে না ডিজিটাল জগৎটা এখন সকলের কাছে উন্মুক্ত। যারা যেভাবে সহজ করে কনটেন্ট দিবে, মানুষ সেভাবেই গ্রহণ করবে। দুর্বল মন নিয়ে সবসময় প্রার্থনা করছি ‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি’।

শাহানা হুদা রঞ্জনা: সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

6h ago