মাস্ক পরলে করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা কমে ৩৪ শতাংশ: গবেষণা

মাস্ক পরলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। সম্প্রতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাড়ে তিন লাখ মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানের কারণে মাস্কের ব্যবহার তিন গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
mask_3sep21.jpg

মাস্ক পরলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। সম্প্রতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাড়ে তিন লাখ মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানের কারণে মাস্কের ব্যবহার তিন গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

'দ্য ইমপ্যাক্ট অব কমিউনিটি মাস্কিং অন কোভিড-১৯: আ ক্লাস্টার-র‌্যান্ডমাইজড ট্রায়াল' শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন স্ট্যানফোর্ড মেডিসিন স্কুল ও ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে গবেষণাটি করা হয়।

দেশের ৬০০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের ওপর দৈবচয়ন পদ্ধতিতে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমণ রোধে কাপড়ের মাস্কের চেয়ে সার্জিক্যাল মাস্ক বেশি কার্যকর।

এমন একটি সময় গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যখন বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিতে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ ছাড়া, গণটিকাদানের অবস্থাও বেশ শোচনীয়। দেশের ৮০ শতাংশ (১৩ কোটি ৫১ লাখ) মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার প্রচার কাজ শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র চার শতাংশ মানুষ টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। টিকাদান কর্মসূচি যদি বর্তমান গতিতে চলতে থাকে, তাহলে ৮০ শতাংশক মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগে যাবে।

গত ১ সেপ্টেম্বর ইনোভেশনস ফর পোভার্টি অ্যাকশনের ওয়েবসাইটে গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় এনজিও গ্রিনভয়েস এবং ইনোভেশনস ফর পোভার্টি অ্যাকশন বাংলাদেশ এ গবেষণার অংশীদার ছিল।

গবেষকদের প্রধান আহমেদ মুশফিক মোবারক গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সঠিকভাবে মাস্ক পরলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৬০ বছর ও তার বেশি বয়সীদের মধ্যে উপসর্গযুক্ত সংক্রমণের হার ৩৪ শতাংশ কমে যায়।'

বিশ্বে এ ধরনের যতগুলো গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক মোবারক আরও জানান, দুটি ধাপে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। প্রথম ধাপে গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন মানুষকে কীভাবে ধারাবাহিকভাবে মাস্ক পরার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করা যায়। দ্বিতীয় ধাপে দেখেছেন, তাদের নেওয়া উদ্যোগে কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমেছে কি না।  

গবেষকরা কিছু এলাকায় বিনামূল্যে সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করেছেন, মানুষকে মাস্ক পরার গুরুত্বের কথা বলেছেন, মাস্ক ছাড়া কাউকে পাওয়া গেলে তাকে মাস্কের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন এবং সবাইকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় নেতাদের যুক্ত করেছেন। এসব এলাকাগুলোকে তারা 'ট্রিটমেন্ট এরিয়া' নাম দিয়েছিলেন।

আবার কিছু এলাকায় গবেষকরা এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেননি। সেসব এলাকার নাম দেওয়া হয় 'কন্ট্রোল এরিয়া।'

অধ্যাপক মোবারক বলেন, 'আমরা দেখেছি, ট্রিটমেন্ট এরিয়ায় মাস্কের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। কন্ট্রোল এরিয়ায় মাস্ক পরার হার ছিল ১৩ শতাংশ। ট্রিটমেন্ট এরিয়ায় এ হার ৪২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।'

এ ছাড়া, ট্রিটমেন্ট এরিয়াতে সামাজিক দূরত্বও কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে ওই গবেষণায়।

আরও দেখা গেছে, মুখ ও নাক ঢেকে সার্জিক্যাল ফেস মাস্ক পরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমানোর একটি কার্যকর উপায়।

গবেষক দলের নেওয়া এ সংক্রান্ত উদ্যোগের ফলে উপসর্গযুক্ত কোভিডের হার নয় শতাংশ এবং কোভিডের মতো লক্ষণের হার ১১ দশমিক নয় শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

গবেষণার সারাংশে বলা হয়েছে, 'আমরা স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি, সার্জিক্যাল মাস্ক সার্স কোভিড-২ (করোনার) উপসর্গযুক্ত সেরোপ্রিভেল্যান্স কমাতে কার্যকর।' সেরোপ্রিভেল্যান্স সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির মাত্রা সম্পর্কে ধারণা দেয়। অতীতের সংক্রমণ বা টিকা দেওয়ার কারণে তৈরি হওয়া মানুষের ইমিউনিটি পরিমাপের গোল্ড স্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয় এটি।

আরও বলা হয়, সার্জিক্যাল মাস্কের উচ্চ ফিল্টারেশন দক্ষতা রয়েছে। এটি সস্তা, ধারাবাহিকভাবেও পরা হয়।'

স্থানীয় নেতাদের মাস্ক পরা, মাস্ক বিতরণ এবং অন্যান্য প্রচারমূলক কার্যক্রম মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।

গবেষণার সহলেখক আলমগীর কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গবেষকরা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাপড়ের মাস্কের চেয়ে সার্জিক্যাল মাস্ক বেশি ফলপ্রসূ বলে জোরালো প্রমাণ পেয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'আমরা যদি স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে গ্রামীণ এলাকায় গণসচেতনতা অভিযান শুরু করতাম, তাহলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তীব্রতা এড়ানো যেত।'

ইনোভেশনস ফর পোভার্টি অ্যাকশন বাংলাদেশের সিনিয়র অপারেশন ম্যানেজার কবির আরও বলেন, 'ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হলে করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, 'আমরা বারবার বলেছি, মাস্ক পরার বিকল্প নেই। আমরা গণসচেতনতা অভিযান শুরু করেছি এবং এ ধরনের প্রচার আরও জোরদার করা হবে। প্রত্যেককে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এমনকি টিকা নিলেও।'

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

The deadline for completion of the Rooppur Nuclear Power Plant project has been extended to 2027, and a unit of the plant will be commissioned this December if transmission lines are ready.

1h ago