বিশেষ গণটিকাদান কর্মসূচি ৬ দিন নয়, চলবে ১ দিন

মূলত ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের টিকাদানের ব্যাপক উদ্যোগটি শুরু হওয়ার অল্প কয়েকদিন আগে একটি বড় ধরনের বাঁধার মুখে পড়েছে। ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে সরকার গতকাল রাতে টিকাদান কর্মসূচির সময়সীমা ছয় দিন থেকে কমিয়ে এক দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

মূলত ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের টিকাদানের ব্যাপক উদ্যোগটি শুরু হওয়ার অল্প কয়েকদিন আগে একটি বড় ধরনের বাঁধার মুখে পড়েছে। ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে সরকার গতকাল রাতে টিকাদান কর্মসূচির সময়সীমা ছয় দিন থেকে কমিয়ে এক দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগে সরকার ছয় দিনের কর্মসূচিতে এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু এখন সেটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমে আসবে।

একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা জানান, 'ভ্যাকসিনের ডোজের স্বল্পতার কারণে ৭ থেকে ১২ আগস্টর টিকাদান কর্মসূচির সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। আপাতত টিকা দেওয়ার ব্যাপক উদ্যোগটি শুধুমাত্র ৭ আগস্ট (শনিবার) পরিচালিত হবে। প্রাক-নিবন্ধনের ভিত্তিতে প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বয়স্ক, নারী ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।'

গতকাল রাতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর এই কর্মকর্তা জানান, 'আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারিনি।'

দেশে চার হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৩২৮টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশন আছে। গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি করে টিকাদান বুথ থাকবে এবং শুধুমাত্র এই কেন্দ্রগুলো থেকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

সরকার বারবার যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিনের মজুত থাকার দাবি করলেও টিকাদানের ব্যাপক উদ্যোগটি হোঁচট খেল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, টিকাদানের ব্যাপক উদ্যোগটির মাধ্যমে ছয় দিনে কমপক্ষে এক কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সরকারের হাতে প্রায় এক কোটি ভ্যাকসিন মজুত আছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপক উদ্যোগ শুরু হওয়ার আগে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কর্মীরা সরকারকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যাপারে সহায়তা দেবে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব ডা. মো. শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'টিকাদানের ব্যাপক উদ্যোগ চলাকালে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে দৈনিক ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।'

ইউনিয়নের ডিজিটাল কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং এটি শনিবারের আগেই শুরু হবে। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সহায়তায় ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের এসব কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তারিকুল ইসলাম জানান, 'বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই নিবন্ধন করা হবে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, উপজেলা নির্বাচন অফিস তাদের নিবন্ধনে সহায়তা করবে।'

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, শনিবার প্রথম দিনে শুধুমাত্র নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 'যাদের এনআইডি কার্ড নেই, তাদের অন্য উপায়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে', বলেন তিনি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, শনিবারে তার জেলায় ৩৯ হাজার ২০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হতে পারে, তবে পরবর্তী দিনগুলোতে এ সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা অন-স্পট বা তাৎক্ষণিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, 'মানুষ অন-স্পট নিবন্ধন করে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাকসিনের ডোজ নিতে পারবেন।'

এ ছাড়া, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে— স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা তাদের এলাকার মানুষের কাছে টোকেন দিতে পারবেন, যে টোকেনটি দেখিয়ে তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। এই কর্মকর্তা আরও জানান, 'এ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে যাতে ভ্যাকসিন কেন্দ্রে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়।'

গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১৩ লাখ নয় হাজার ৯১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২১ হাজার ৬৩৮ জন। এদের মধ্যে ৭৯ শতাংশের বয়স পঞ্চশোর্ধ্ব।

কর্মকর্তারা জানান, টিকাদানের বিশেষ উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে মূলত বয়স্ক মানুষের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে। দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৪৪ লাখ মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয়— উভয় ডোজই পেয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কোনো দেশের জনগোষ্ঠীর অন্তত ৮০ শতাংশকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।

বর্তমানে গ্রাম ও জেলা শহরগুলোতে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন ও সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে মডার্নার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

ভ্যাকসিনের ডোজের স্বল্পতার কারণে গণটিকাদান কর্মসূচি প্রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত ছিল। ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া স্থগিত করা হয়। এর নয় দিন পরে নিবন্ধন প্রক্রিয়াও স্থগিত করে দেওয়া হয়।

১৯ জুন থেকে সরকার সীমিত আকারে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে এর আওতা বাড়ায়।  

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

The deadline for completion of the Rooppur Nuclear Power Plant project has been extended to 2027, and a unit of the plant will be commissioned this December if transmission lines are ready.

1h ago