পরিবারে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে করণীয় কী

আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের মধ্যে পার্থক্য জানাটা খুবই জরুরি। এ দুইটি বিষয়ে নির্দেশনাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। করোনা শনাক্ত হলে তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। পরিবারের যারা আক্রান্ত হননি তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবেন। এটাই আইসোলেশন।
ছবি: রয়টার্স

সারা বিশ্বেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে মানুষকে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ সম্প্রতি আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে সামনে আসছে, পরিবারের কোনো সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাকিদের কী করণীয়।

  • শিশু আক্রান্ত হলে কী করণীয়?
  •  কীভাবে অভিভাবকরা নিরাপদে থেকে শিশুর যত্ন নেবেন?
  •  কতদিন আইসোলেশনে থাকা উচিত?
  •  কখন পরীক্ষা করানো উচিত?
  •  পরিবারের সবাই আক্রান্ত হলে করণীয় কী?

এ বিষয়ে মেডিকেল বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্কেন ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের স্বাস্থ্য নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক ড. লিয়ানা ওয়েনের মতামত সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সিএনএন।

ড. ওয়েন জানান, প্রথমত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের মধ্যে পার্থক্য জানাটা খুবই জরুরি। এ দুইটি বিষয়ে নির্দেশনাও সম্পূর্ণ ভিন্ন।

করোনা শনাক্ত হলে তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। পরিবারের যারা আক্রান্ত হননি তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবেন। এটাই আইসোলেশন।

অন্যদিকে, যখন ধারণা করছেন আপনি করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু এখনো পরীক্ষার মাধ্যমে তা শনাক্ত হয়নি বা উপসর্গ নেই, সে ক্ষেত্রে আপনি কোয়ারেন্টিনে যাবেন। কোয়ারেন্টিনে সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

যদি কোনো পরিবারের একজন সদস্যের করোনা শনাক্ত হয় (পরীক্ষার মাধ্যমে), তাহলে তাকে শিগগির আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। যার করোনা ধরা পড়েছে, তার মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন বলে বিবেচনা করতে হবে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদেরও শিগগির পরীক্ষা করাতে হবে।

ডা. ওয়েন বলেন, 'এমনও হতে পারে, তিনিই পরিবারের প্রথম ব্যক্তি নন যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। হয়তো বাকিদের দেহেও ইতোমধ্যে সংক্রমণ হয়েছে। তাই সবার পরীক্ষা করানো জরুরি।'

ডা. ওয়েন নিশ্চিত করেছেন, যদি পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের একজন আরেকজনের থেকে আইসোলেশনে থাকার প্রয়োজন নেই। কারণ তাদের একেকজনের ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রেইনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। সুতরাং একে অপরকে নতুন করে সংক্রামিত করার সম্ভাবনাও খুবই কম। তবে অবশ্যই, পুরো পরিবারকে অন্য কোনো পরিবারের মানুষের থেকে আলাদা থাকতে হবে।

পরিবারের কোনো শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এবং বাকি সবার পরীক্ষার ফল নেতিবাচক আসলে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। কেননা শিশুরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল।

ডা. ওয়েন বলেন, 'এ ক্ষেত্রে আমি ওই পরিবারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করব। ধরুন শিশুটির দুই জন অভিভাবক আছেন। তাদের উভয়ই দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজও নিয়েছেন এবং মোটামুটি সুস্থও আছেন। তাদের জন্য ঝুঁকি কম। কিন্তু একই পরিবারে যদি একাধিক শিশু থাকে যে টিকা নেয়নি, তাহলে তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।'

'এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশু ও একজন অভিভাবক আলাদা হয়ে আইসোলেশনে থাকতে পারেন। পরিবারটি দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভাগে আক্রান্ত শিশু ও একজন অভিভাবক এবং অন্য ভাগে অপর শিশু ও অপর অভিভাবক থাকবেন। আইসোলেশনে থাকাকালীন একে অপরের সংস্পর্শে আসা যাবে না। যদি সম্ভব হয়, বাসার ভেতরে আলাদা আলাদা অংশে তাদের থাকা উচিত। তাদের আলাদা ঘরে ঘুমানো উচিত এবং টয়লেটও আলাদা হওয়া উচিত। এমন কী, একই ঘরে খাওয়াও উচিত না।'

বিষয়টা এমন না যে, একই খাবার ঘরে ভিন্ন ভিন্ন সময় পরিবারের দুটি অংশ এসে খাওয়া দাওয়া করতে পারবে। একবার যদি আক্রান্ত শিশু বা তার অভিভাবক সেখানে যায়, তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যরা আর সেখানে যেতে পারবেন না।

যে অভিভাবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর দেখাশোনা করছেন, তার উচিত সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা। যাতে তার নিজের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়।

বিষয়টি আরও জটিল হয় যখন একাধিক শিশুকে দেখাশোনা করার জন্য মাত্র একজন মানুষ থাকেন। এ ক্ষেত্রে ঘরে সব সময় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করলে তাতে উপকার হতে পারে। যখনই সম্ভব, তখনই দরজা জানালা খুলে রাখা এবং খুবই সতর্কতার সঙ্গে হাত ধোয়া আর সার্বক্ষণিক মাস্ক পরার অভ্যাস তৈরি করাও কাজে আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আইসোলেশনের সময়কাল ১০ দিন থেকে কমিয়ে ৫ দিন করা হয়েছে বলে জানান ডা. ওয়েন। তবে এরপর আরও পাঁচ দিন সব সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে। অর্থাৎ, প্রথম পাঁচ দিন আপনাকে পুরোপুরি আইসোলেশনে থাকতে হবে এবং পরবর্তী পাঁচ দিন আপনি বাসা থেকে বের হতে পারবেন, কাজে যেতে পারবেন, বাজারে যেতে পারবেন এবং অন্যান্য কাজ করতে পারবেন। কিন্তু এ সময়টায় আপনাকে খুবই ভালো মানের এবং ভালো ফিটিং হয় (অর্থাৎ নাক বা মুখের কোনো অংশ যাতে বের হয়ে না থাকে) এমন মাস্ক পরতে হবে। এমন কোনো জায়গায় যাওয়া উচিত নয় যেখানে আপনাকে মাস্ক খুলে রাখতে হবে। যেমন: রেস্তোরাঁ বা এমন কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানে মাস্ক খুলে ছবি তোলার অনুরোধ আসতে পারে।

ডা. ওয়েন জানান, আইসোলেশনে থাকার সময় নিজের পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছেও যাওয়া যাবে না। নিতান্তই প্রয়োজন হলে মাস্ক পরে আসা যেতে পারে। পরিবার যদি দুইটি ভাগে বিভক্ত থাকে, তাহলে ঘরের ভেতরে ১০ দিন তাদের একে অপরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

অনেক রোগী আইসোলেশন থেকে বের হওয়ার জন্য বারবার করোনা পরীক্ষা করান। সিডিসি এ বিষয়ের সঙ্গে একমত নয়। তাদের মতে, প্রথম চার দিন আইসোলেশনে থেকে পঞ্চম দিনে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে হবে। সেখানে যদি 'পজিটিভ' ফল আসে, তাহলে আরও পাঁচ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে।

পরিবারের সদস্যদের থেকে আইসোলেশনে থাকার বিষয়ে ডা. ওয়েন বলেন, 'এটি অনেক পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের জন্য দীর্ঘ সময় একে ওপরের কাছ থেকে দূরে থাকা খুব বড় আকারের সমস্যা তৈরি করতে পারে।'

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পিসিআর পরীক্ষা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য উপযুক্ত পরীক্ষা। তবে একবার করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে এরপর আর এই পরীক্ষা না করালেও চলে। অতি সংবেদনশীলতার কারণে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পিসিআর পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসতে পারে বলে জানান ওয়েন।

তিনি বলেন, 'নতুন নির্দেশনায় করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদেরকেও কমপক্ষে পাঁচ দিনের আইসোলেশনে যাওয়ার সুপারিশ করেছে সিডিসি। সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখে। এ ছাড়াও, যারা সর্বশেষ ৯০ দিনে কমপক্ষে একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরকে দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজ দেওয়া মানুষের কাতারেই রাখছে সংস্থাটি।'

যদি কেউ এই দুই দলের অন্তর্ভুক্ত না হন, তাহলে আপনাকে অন্তত পাঁচ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং নেগেটিভ ফল পাওয়ার পরেও আরও অন্তত পাঁচ দিন সার্বক্ষণিক মাস্ক পরতে হবে।

ডা. ওয়েন মনে করেন, করোনা সংক্রমিত কারও সংস্পর্শে আসার পর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সহজলভ্য হলে পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিনই পরীক্ষা করা যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
No respite from heat wave for five days: BMD

Heat takes a toll on expecting mothers

The ongoing heatwave has exacerbated the challenges faced by everyone in the country, but the situation has become particularly difficult for expecting mothers.

56m ago