মুক্তিযুদ্ধ

২৩ নভেম্বর ১৯৭১: এই সংগ্রাম বৃথা যাবে না: তাজউদ্দীন আহমদ

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৩ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বেতার ভাষণে বলেন, 'গত আড়াই মাস পূর্বে আপনাদের কাছে মুক্তি সংগ্রামের পর্যালোচনা করেছিলাম। এসময়ে আমাদের নানা দিক থেকে সাফল্য এসেছে। অশ্রু ও রক্ত বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীনতার জন্য আমরা যে লড়ছি সে স্বাধীনতা লাভের দ্বারপ্রান্তে এখন আমরা। আমাদের মুক্তি সংগ্রাম অবশ্যই সফল হবে। এই সংগ্রাম বৃথা যাবে না।’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৩ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বেতার ভাষণে বলেন, 'গত আড়াই মাস পূর্বে আপনাদের কাছে মুক্তি সংগ্রামের পর্যালোচনা করেছিলাম। এসময়ে আমাদের নানা দিক থেকে সাফল্য এসেছে। অশ্রু ও রক্ত বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীনতার জন্য আমরা যে লড়ছি সে স্বাধীনতা লাভের দ্বারপ্রান্তে এখন আমরা। আমাদের মুক্তি সংগ্রাম অবশ্যই সফল হবে। এই সংগ্রাম বৃথা যাবে না।'

২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করেন। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে আকস্মিক যুদ্ধ ও সারাদেশে যুদ্ধের আশংকার পরিপ্রেক্ষিতে এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এক সরকারি ঘোষণায় বলা হয়, 'পাকিস্তানে এমন একটি অবস্থা বিরাজ করছে যাতে পাকিস্তানে বহিঃশত্রু আক্রমণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে।'

ঢাকায় এদিন

২৩ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবদুর রহিম, এ কে এম ইউসুফ ও আবদুল খালেক আলোচনার জন্য পাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

ভারতে এদিন

২৩ নভেম্বর পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার সহযোগী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এই আলোচনায় পাকিস্তান কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের চেষ্টা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক কমিটিতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের বিষয়ে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। গৃহীত এই প্রস্তাবে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা যেন নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে আসতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির জন্য সাধারণ পরিষদ সদস্য দেশগুলোকে অনুরোধ জানাবে। এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করে হল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে আফ্রো এশীয় সদস্যদের চাপে মূল প্রস্তাবটি ব্যাপকভাবে সংশোধন করা হয়।

২৩ নভেম্বর মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস পূর্ব পাকিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের ভূমিকা বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, যদি জাতিসংঘ কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চেয়ে থাকে তবে জাতিসংঘের উচিত পূর্ববাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইয়াহিয়া খানকে আলোচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। এটি এখন জাতিসংঘের পক্ষে এখন আরো সহজতর হবে কারণ বিশ্বসম্প্রদায় ও এখন পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৩ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় পাকিস্তানি বাহিনীর তীব্র আক্রমণে চন্দ্রপুর ফের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলে চলে যায়। ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে সারারাত যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আনার জন্য মেজর আইনউদ্দিন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠান। কিন্তু তাদের মধ্য থেকেও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হানাদার সেনাদের আক্রমণে শহীদ হন। এছাড়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

২৩ নভেম্বর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মন্দভাগ অবস্থান পুনর্দখল করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একত্র হলে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীর বহু সৈন্য নিহত হয়। পরে হানাদার বাহিনীর ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। মন্দভাগ পুনর্দখল করতে না পেরে হানাদার বাহিনী শালদা নদীর কাছে মনোরা রেল সেতুর নিকটবর্তী মুক্তিবাহিনী অবস্থানের ওপর হামলা চালায়। ১০৬ আরআর এর সাহায্যে আর্টিলারির সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা মুক্তিবাহিনীর একটি বাঙ্কার ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এসময় মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর উপর প্রচণ্ড আক্রমণ গড়ে তুললে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে বুড়িচং দিয়ে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায়।

২৩ নভেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জ দখলের পর বৈয়ামপুর দখলের জন্য যাওয়ার সময় মুক্তিবাহিনীর বড় একটি দলের উপর অতর্কিত হামলা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল। এসময় হানাদার বাহিনীর হামলায় দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং দুজন নিখোঁজ হন। একইসঙ্গে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট লিয়াকতসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতরভাবে আহত হন। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট লিয়াকত আহত হলে চার্লি কোম্পানির দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন নূর।

২৩ নভেম্বর খুলনার শ্রীরামপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার হামলা চালালে হানাদার বাহিনীর ৬ সৈন্য ও বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়।

২৩ নভেম্বর পটুয়াখালীর গলাচিপায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার শওকতের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর, মোস্তাফা, হাবিবসহ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা দল গলাচিপা থানায় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন হানাদার সেনা হতাহত হয়।

সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র পঞ্চম, সপ্তম, একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড।

দৈনিক পাকিস্তান ২৪ নভেম্বর ১৯৭১

দৈনিক ইত্তেফাক ২৪ নভেম্বর ১৯৭১

দৈনিক যুগান্তর ২৪ নভেম্বর ১৯৭১

নিউইয়র্ক টাইমস ২৩ নভেম্বর ১৯৭১

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Protest over students' death: Cuet to reopen on May 12

The Chittagong University of Engineering and Technology (Cuet), which was closed following a student protest over the death of two students in a road accident, will reopen on May 12.

37m ago