২২ নভেম্বর সারা দেশে বিএনপির সমাবেশ

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে আগামী ২২ নভেম্বর সারা দেশে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বিএনপির গণঅনশন কর্মসূচি। ২১ নভেম্বর ২০২১। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে আগামী ২২ নভেম্বর সারা দেশে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

আজ শনিবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিন একই দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আগামী ২২ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং সারা দেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ হবে। সমাবেশে আমরা আবারও এই দাবি নিয়ে সামনে আসবো। তারপরও যদি না হয়, আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করবো এবং সেই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে ‍মুক্ত করা হবে।'

তিনি বলেন, এই সরকারকে খুব পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এই যে আজ আন্দোলন শুরু হলো গণঅনশনের মধ্য দিয়ে, এই আন্দোলন আপনাদের গদিচ্যুত করবে। এটা আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা, অধিকারের সমস্যা। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় এসেছে। খালেদা জিয়া এই মাটির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে আছে। মা ও মাটি বলতে আমরা খালেদা জিয়াকে বুঝি। সেই নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। তার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

খালেদা জিয়া আজ এত অসুস্থ। তিনি আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। আমরা বিদেশে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশে যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, চিকিৎসকরা তা দিয়েছেন। কিন্তু কতগুলো জটিলতা আছে যেগুলো বিদেশে আরও অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট না হলে তাকে সুস্থ করা যাবে না। পরিবার থেকে আবেদন জানানো হয়েছে, বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে। সেই সুযোগ তারা দেয়নি, ফিরিয়ে দিয়েছে। পার্লামেন্টে সংসদ নেত্রী এমন ভাষায় কথা বলেছেন, যে ভাষা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আইনমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন। ৪০১ ধারায় এই সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার আছে এবং এটা তাদের দায়িত্ব নির্দেশনা দিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে, বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, ১৮ কোটি মানুষের নয়নের মণি, সবচেয়ে প্রিয় নেতা— যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার ব্যক্তিগত সব সাচ্ছন্দ, সংসার সব কিছু ত্যাগ করেছেন। তিনি স্বামী হারিয়েছেন অল্প বয়সে। তারপর দুটি শিশু সন্তান নিয়ে এই জনতার কাতারে এসে মিশে গেছেন। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশে পথে-প্রান্তরে, বন্দরে-বন্দরে ছুটে বেড়িয়েছেন গণতন্ত্রের গান গেয়ে চারণ কবির মতো। তিনি এই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে আরও সুসংহত করেছিলেন। নারীদের ক্ষমতায়ন করেছেন। মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।

দেশের মানুষকে অশান্তিতে রাখা বর্তমান সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ৩ বার জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি কোনো দিন নির্বাচনে পরাজিত হননি। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন। যাকে আমরা মা বলে জানি। যাকে এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে জানে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার— আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে বেআইনিভাবে আগের রাতে নির্বাচন করে, ভোট বিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে আছেন। তারা তাকে দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক করে রেখেছেন। কারণ তারা জানেন, খালেদা জিয়া যদি মানুষের মধ্যে থাকেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা কেউ ক্ষুণ্ন করতে পারবে না। তিনি যদি বাইরে থাকেন তাহলে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এ জন্য তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জনগণের ম্যানডেট দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে নিজের দলের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। একে একে সংবিধান পরিবর্তন করে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন প্রচণ্ড রকম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ফখরুল বলেন, এই সরকার শুধুমাত্র অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার লিপ্সার কারণে এ দেশের ৩৫ লাখ নিরীহ মানুষের ওপর মামলা করেছেন। তারা পাঁচশর বেশি গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীকে গুম করেছেন। সহস্র নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। একটার পর একটা আইন করছে। যার একটাই মাত্র লক্ষ্য, এই দেশের মানুষকে কীভাবে আরও বেশি অশান্তিতে রাখা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaw drivers set fire to police box in Kalshi

Battery-run rickshaw drivers set fire to a police box in the Kalshi area this evening following a clash with law enforcers in Mirpur-10 area

2h ago