গদখালী: মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে জমছে ফুলের বাজার

ভোরের আলো ফুটতেই যেন রঙের মেলা বসে এখানে। দক্ষিণ-পশ্চিম জেলা যশোরের প্রত্যন্ত গ্রাম গদখালীর দিগন্তজোড়া ফুলের খেত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের ডাক দিয়ে যায় এই অপার সৌন্দর্য অনুভবের।
ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

ভোরের আলো ফুটতেই যেন রঙের মেলা বসে এখানে। দক্ষিণ-পশ্চিম জেলা যশোরের প্রত্যন্ত গ্রাম গদখালীর দিগন্তজোড়া ফুলের খেত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের ডাক দিয়ে যায় এই অপার সৌন্দর্য অনুভবের।

শীতের মৌসুমে যারাই সেখানে যাবেন এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকাটা তার জন্য কষ্টকর। সেখানে গেলে পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়বেই।

খুব ভোর থেকেই ফুলপ্রেমীদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে বাগানগুলো, দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এর সংখ্যা।

ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

যত দূর চোখ যায় কেবল ফুল আর ফুল! গাঁদা থেকে কসমস, ডেইজি জিপসি, গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা—কী নেই! দিগন্তজোড়া মাঠের স্বর্গীয় সৌন্দর্য ছাড়াও এ অঞ্চলের হাজারো কৃষকের জীবিকার উৎস এই ফুল।

প্রতিদিন ঢাকাসহ যশোরের আশেপাশের জেলা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক চোখ ধাঁধানো এই ফুলের খেত দেখতে এখানে আসেন। যা স্থানীয়দের আয়ের আরেকটি উৎস।

কয়েক দশক আগে এই এলাকায় শুরু হওয়া ফুলের চাষ আজ দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় উৎসব উদযাপনে ফুলের যোগানের সবচেয়ে বড় উৎস।

ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

যশোরের ৩৫টি গ্রামে ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৪২টি দেশি-বিদেশি জাতের ফুলের চাষ হয়। যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষক ও ১ লাখ মানুষ ফুলচাষের সঙ্গে জড়িত।'

করোনার কারণে লকডাউনে প্রথমে ২০২০ সালের মার্চে ও পরে ২০২১ সালের মাঝামাঝি ঘূর্ণিঝড় 'আম্ফান'র ধ্বংসযজ্ঞের পর গত আগস্ট থেকে কৃষকেরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

চাষিরা ডেইলি স্টারকে জানান, ফুলের চাহিদা ও উৎপাদন বেড়েছে। ফুলের দামও আগের মৌসুমের তুলনায় বেশি। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, অনেকেই তাদের মহামারিজনিত ক্ষতি পূরণ করতে পারবেন।

চলতি অর্থবছরে চাষাবাদের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।

ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে, কৃষকরা ২ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করে, যা আগের বছরের ২ হাজার ২৯৮ হেক্টরের তুলনায় কিছুটা কম।

ফুলচাষের মোট জমির এক-চতুর্থাংশই যশোরে, এরপর রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম।

গদখালীর শিশির নার্সারি অ্যান্ড কাট ফ্লাওয়ার সেন্টারের মালিক ইসমাইল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসলে লকডাউনের সময় আমরা ফুল বিক্রি করতে পারিনি। কিন্তু, গাছগুলো বেঁচে ছিল।'

চলতি মৌসুমে তার ৭ বিঘা জমিতে জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসিসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করেছেন এবং ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

ঘূর্ণিঝড় 'আম্ফান' তার ২টি শেড ধ্বংস ও গাছের ক্ষতি করেছে। মহামারির মধ্যে ফুলের চাহিদা কমে যাওয়ায় ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আশা করেন আগামী ২ মাসে ৪টি বড় উৎসব ও দিবস--পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুল বিক্রি অনেক বাড়বে।

যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারা ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেনও লোকসান কাটিয়ে আসন্ন বিক্রির মৌসুমের দিকে তাকিয়ে আছেন।

'এ বছর আবহাওয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি উভয়ই অনুকূলে আছে এবং ফুল বিক্রি করে চাষিদের মোটামুটি লাভের সম্ভাবনা রয়েছে,' বলেন গদখালী ফুলচাষি ও ফুল চাষিদের সংগঠন কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গদখালী বাজারে এখন দৈনিক ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ যশোর থেকে পূরণ হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'করোনা মহামারির কারণে শুধু যশোর অঞ্চলেই ব্যবসায় অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।'

'এই মৌসুমে ফুলের ব্যবসা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। বিজয় দিবস ও ইংরেজি নববর্ষ ঘিরে কৃষকরা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির রেকর্ড করেছেন,' বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাদল চন্দ্র।

বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের সরানো গেলে প্রকৃত কৃষকরা আরও উপকৃত হবেন। আর এই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
No respite from heat wave for five days: BMD

Heat takes a toll on expecting mothers

The ongoing heatwave has exacerbated the challenges faced by everyone in the country, but the situation has become particularly difficult for expecting mothers.

22m ago