উন্নয়নের নামে পতেঙ্গা সৈকতের পরিবেশ ধ্বংস না করার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সিডিএর এমন উদ্যোগে চরম উদ্বেগ প্রকাশ বিশেষজ্ঞরা।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সিডিএ। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সিডিএর এমন উদ্যোগে চরম উদ্বেগ প্রকাশ বিশেষজ্ঞরা।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো কংক্রিটের স্থাপনা গড়ে উঠলে সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমাদের অনুরোধ উন্নয়নের নামে কেউ যেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ ধ্বংস না করে।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনো দরপত্র আহ্বান করার আগে জনসাধারণকে সমুদ্র সৈকত লিজ দেওয়ার বিস্তারিত জানানো উচিত ছিলো সিডিএর।

নাগরিক-সমাজ প্ল্যাটফর্ম সুশাসনের জন নাগরিকের (সুজন) সেক্রেটারি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, 'একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে সমুদ্র সৈকত লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং অপ্রত্যাশিত।'

বন্দরনগরীর বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'চট্টগ্রামের প্রায় সব বিনোদন স্পট প্রাইভেট কোম্পানির কাছে চলে গেছে। একমাত্র খোলা জায়গা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতও বেসরকারি কোম্পানিতে গেলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?'

চট্টগ্রাম কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুজিব রহমান বলেন, 'সৈকত ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ইজারা সংক্রান্ত বিষয়ে, কর্তৃপক্ষকে জনস্বার্থ এবং পরিবেশগত দিকগুলো আগে বিবেচনা করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'এ ধরনের বাণিজ্যিক উদ্যোগ এ অঞ্চলের বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বিপন্ন করতে পারে।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোস্তফা মনোয়ার বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে যদি সমুদ্রের পাশে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। তাহলে সেই স্থাপনা সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করবে।'

'নির্মিত স্থাপনায় দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া আবর্জনায় সমুদ্র দূষিত হতে পারে।'

তবে, সিডিএ দাবি করেছে- নির্দিষ্ট সৈকত এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা এবং পর্যাপ্ত তহবিল তাদের কাছে নেই। তাই এটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, 'আমরা পতেঙ্গা সৈকতের পাশে রিং রোড এলাকায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ইজারা দিতে যাচ্ছি। কারণ, ওই এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পরিচালনা করার জন্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত তহবিল এবং সক্ষমতা নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ৮ মাস আগে আমরা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ওই এলাকাটি লিজ দেওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছি। প্রস্তাবিত জমিতে একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হবে।'

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, 'সৈকতের পরিবেশ সুন্দর করতে আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছি। দরপত্রের মাধ্যমে সৈকত এলাকার ৫ কিলোমিটার ইজারা দিতে যাচ্ছি।'

জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা এখনো তাদের জানায়নি। কিন্তু, খুব শিশগির জানাবো।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা সিডিএ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। সিডিএ কীভাবে এলাকাটি অন্যদের কাছে ইজারা দিতে পারে? তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে আমরা সত্যিই বিভ্রান্ত।'

তিনি আরও বলেন, 'আইন লঙ্ঘন করে বন্দর নগরীতে বিভিন্ন সময় সিডিএর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ব্যাখ্যা  চয়ে তাদের অনেকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, কখনো উত্তর পাওয়া যায়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

6h ago