শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে সেই মানবাধিকার নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

বান্দরবানে নয় বছরের শিশুকে জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সেই মানবাধিকার নেত্রী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শিশুটি তাদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। তবে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পরিবর্তে শিশু আইনের ২০১৩-এর ৭০/৮০ (১) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বান্দরবানে নয় বছরের শিশুকে জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সেই মানবাধিকার নেত্রী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শিশুটি তাদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। তবে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পরিবর্তে শিশু আইনের ২০১৩-এর ৭০/৮০ (১) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

মামলার একটি কপি দ্যা ডেইলি স্টারের সংগ্রহে আছে।

মামলার বাদী রওশন আরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি গরিব মানুষ। পড়ালেখা জানি না, আমার কাছ থেকে পুলিশ স্বাক্ষর নিয়েছে। মামলার কাগজে কী লিখেছে আমি কিছুই জানি না।'

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, 'যেহেতু জ্বলন্ত মশার কয়েল দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতনের অভিযোগ মামলায় উল্লেখ আছে, সেহেতু মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হওয়াটা যুক্তিযুক্ত ছিল।'

'তবে তদন্তকারী কর্মকর্তার এখনও সুযোগ আছে তদন্ত শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ পত্র দাখিল করার,' বলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময়।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার বলেন, 'তদন্ত সাপেক্ষ যদি কোনো কিছু যোগ করতে হয় যোগ হবে।'

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, বান্দরবান পৌরসভার বনরুপা পাড়া এলাকার সারাহ সুদীপা ইউনুছ এবং তার স্বামী ফয়সাল আহম্মেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ১৯ জুলাই সকালে তাদের বাসা থেকে নয় বছরের শিশুটি পালিয়ে যায়।

গত বুধবার শিশুটির সঙ্গে কথা বলেছিল দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক। তখন সে অভিযোগ করেছিল, 'সুদীপা ম্যাডাম আমাকে জ্বলন্ত মশার কয়েল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দিয়েছে। ওনার স্বামীর খাবার তাড়াতাড়ি বানাইনি বলে ম্যাডাম বলেছে, আমাকে বাড়ির দোতলা থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলবে।'

একইদিনে অভিযুক্ত সারাহ সুদীপা ইউনুসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল দ্য ডেইলি স্টার। তখন তিনি নিজেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একজন প্যানেল আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন।

তারা দু'জনই পেশায় আইনজীবী বলেও জানিয়েছিলেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সারাহ সুদীপা শিশুটিকে জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। রান্নাঘর ধোয়া মোছার কাজ কেন ধীরে করছে অভিযোগে শিশুটির পিঠে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।

শিশু আইন ২০১৩ এর ৭০-এ উল্লেখ আছে, 'কোনো ব্যক্তি যদি তাহার হেফাজতে, দায়িত্বে বা পরিচর্যায় থাকা কোন শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলা, বর্জন, অরক্ষিত অবস্থায় পরিত্যাগ ব্যক্তিগত পরিচর্যার কাজে ব্যবহার বা অশালীনভাবে প্রদর্শন করে এবং এইরূপভাবে আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলা, বর্জন, পরিত্যাগ ব্যক্তিগত পরিচর্যা বা প্রদর্শনের ফলে উক্ত শিশুর অহেতুক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বা স্বাস্থ্যের এইরূপ ক্ষতি হয়, যাহাতে সংশ্লিষ্ট শিশুর দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়, শরীরের কোনো অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়ের ক্ষতি হয় বা কোনো মানসিক বিকৃতি ঘটে, তাহা হইলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১ (এক) লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।'

৮০(১) ধারায় উল্লেখ আছে, 'শিশু-আদালত কর্তৃক শিশুর জিম্মাদার, রক্ষণাবেক্ষণকারী, প্রতিপালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা অন্য কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শিশুকে ভৃত্যের চাকরি বা শ্রম আইন, ২০০৬-এর বিধান মোতাবেক কোনো কারখানা কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োগের কথা বলিয়া হস্তগত করে, কিন্তু কার্যত শিশুকে নিজ স্বার্থে শোষণ করে, আটকাইয়া রাখে অথবা তাহার উপার্জন ভোগ করে, তাহা হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।'

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৪(২) এর 'খ' ধারায় উল্লেখ আছে, 'যদি কোন ব্যক্তি কোন দহনকারী, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীকে এমনভাবে আহত করেন যাহার ফলে উক্ত শিশু বা নারীর দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় বা শরীরের কোন অংগ, গ্রন্থি বা অংশ বিকৃত বা নষ্ট হয় বা তাহার শরীরের অন্য কোন স্থান আহত হয়, তাহা হইলে উক্ত শিশুর বা নারীর শরীরের অন্য কোন অংগ, গ্রন্থি বা অংশ বিকৃত বা নষ্ট হওয়ার বা শরীরের কোন স্থানে আঘাত পাওয়ার ক্ষেত্রে, উক্ত ব্যক্তি অনধিক চৌদ্দ বৎসর কিন্তু অন্যূন সাত বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।'

বান্দরবান সদর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. সোহাগ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্যাতিত শিশুটিকে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সেইফ হোমে পাঠানো হয়েছে।'

'অভিযুক্ত আসামিদের এখনো আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে, আমরা আশাবাদী খুব শিগগির আসামি গ্রেপ্তার করতে পারব,' বলেন তদন্ত কর্মকর্তা সোহাগ।

তিনি আরও বলেন, 'একটা শিশুকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাতে আমরাও মনে প্রাণে চাই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।'

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

4h ago