দুর্নীতির অভিযোগে পোস্ট: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিক গ্রেপ্তার
বগুড়ায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে মানহানিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে মো. আক্তারুজ্জামান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান ‘বাণিজ্য প্রতিদিন’ নামক একটি পত্রিকার বগুড়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বগুড়ায় নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশের একটি দল। পরে আজ দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বগুড়া সদর উপজেলায় ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২১৯ জন মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার নিয়োগ হয় গত বছরের এপ্রিলে। অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামানও তাদের মধ্যে একজন ভলান্টিয়ার হয়ে কাজ করেন।
আক্তারুজ্জামানের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতরাত ৩টার সময়, পুলিশ এবং ডাক্তার সামির হোসেন মিশু আমার সাবগ্রামের বাসায় আসেন। আমার ছেলে আক্তারুজ্জামানের কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনসহ তাকে থানায় নিয়ে যায়। কেন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সামির হোসেন মিশু বলেন, আপনার ছেলে ফেসবুকে আমাদের নামে উল্টো-পাল্টা পোস্ট দিয়েছেন। আজ শুনছি তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’
এই বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত-কর্মকর্তা সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে ডিবি পুলিশ আক্তারুজ্জামানকে আজ ভোরে তার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সামির হোসেন মিশু এবং একই কার্যালয়ের প্রধান সহকারী কাম-হিসাবরক্ষক শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন ফেসবুক ফেক আইডি থেকে মানহানিকর, মিথ্যা ও বানোয়াট পোস্ট দেয়। আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি এসব অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
ফেক আইডি থেকে আক্তারুজ্জামান যে পোস্ট দিয়েছেন সেটি কীভাবে শনাক্ত করলেন জানতে চাইলে অভিযানে থাকা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাকে শনাক্ত করেছি এবং তার ল্যাপটপ এবং ফোন জব্দ করে দেখা গেছে তিনিই এই আইডিগুলো পরিচালনা করেন।
গতকাল আফতাব আহমেদ নামের একটি ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করা হয়-‘বগুড়ায় স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী প্রদানে হরিলুট!’ সেখানে যত টাকা দেওয়ার কথা তা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলা হয় এবং চিকিৎসক মিশু ও হেড ক্লার্ক শামীমার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বাদী শামীমা আক্তারের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা তাদের কোনো হুমকি দিইনি। তারা যতটুকু কাজ করেছে সেই অনুযায়ী তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। এই নির্দেশই আছে আমাদের উপর। যারা পুরো কাজ করেছে তাদের ৫০ জনকে গত চার মাসে (মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত) ১১ হাজার ১৬০ টাকাই দেওয়া হয়েছে বাকিদেরও তাদের কাজ অনুযায়ী টাকা দেওয়া হচ্ছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সামির হোসেন মিশু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বগুড়া সদর উপজেলায় ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২১৯ জন মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার নিয়োগ হয় ২০২০ সালে। তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা হচ্ছে ৩৬০০ টাকা। তাদের কাজের হিসাব রাখা হয় একটি অ্যাপসের মাধ্যমে কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পরে অ্যাপসটি বন্ধ ছিল বিধায় প্রথম চার মাসের ফুল বেতন ১৮০০০ টাকা দেওয়া হয়েছে প্রত্যেককে কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ শতাংশ উৎস কর কাটার কথা ছিল সেটি জানতে পেরেছি অ্যাপস চালু হওয়ার পরে। এইবার যখন তাদের চার মাসের বিল এসেছে সেখান থেকে আগের চার মাসের উৎস কর কাটা হয়েছে। এবং সেই ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়েছে। সেই সাথে পরের চার মাসেও ১০ শতাংশ উৎস কর কাটা হয়েছে। ফলে যারা ফুল কাজ করেছে তাদের পুরো সম্মানী ১১১৬০ টাকা করে (৫০ জনকে) দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের কাজ অনুযায়ী সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। এর পরে যে টাকা থাকবে সেই টাকা আবার সরকারি কোষাগারের ফেরত দেওয়া হবে।
তবে বিল শিটে কে ১১১৬০ টাকার উপর সই নিয়ে কাজ অনুযায়ী কম টাকা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সামির হোসেন মিশু বলেন, মার্চ-থেকে জুন মাসের বিল আসে গত জুনের ২১ তারিখ এবং বিল শিট জমা দিয়ে টাকা তোলার শেষ তারিখ ছিল জুনের ২২ তারিখ। অ্যাপস দেখে কাজ পরিমাপ করে বিল শিট জমা দিতে তো অনেক সময় লাগতো এবং টাকাটা ফেরত চলে যেত সেই জন্য ১১ হাজার ১৬০ টাকার ওপর সবার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এটা কোনো দুর্নীতি নয় ভলান্টিয়ারদের স্বার্থ রক্ষায় এই কাজ করা হয়েছে, বলেন তিনি।
এই বিষয় নিয়ে ভলান্টিয়ারদের সাথে আমাদের একাধিকবার কথা হয়েছে কিন্তু তারা বিষয়টি বুঝছে না বরং আমাদের বিরুদ্ধে নানা ভ্রান্ত, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেসবুকে মানহানিকর পোস্ট দিয়েছেন আক্তারুজ্জামান, বলেন শামীমা আক্তার।
Comments