কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট

মণ প্রতি পাটের দাম কমেছে ৪০০-৫০০ টাকা, হতাশ চাষি

২ সপ্তাহের ব্যবধানে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বাজারে মণ প্রতি পাটের দাম কমেছে ৪০০-৫০০ টাকা। বাজারে হঠাৎ পাটের দাম কমায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ২ জেলার প্রায় ৩৫ হাজার চাষি।
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার রাজিবপুর হাটে কম দামে পাট বিক্রি করে হতাশ চাষিরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

২ সপ্তাহের ব্যবধানে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বাজারে মণ প্রতি পাটের দাম কমেছে ৪০০-৫০০ টাকা। বাজারে হঠাৎ পাটের দাম কমায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ২ জেলার প্রায় ৩৫ হাজার চাষি।

চাষিরা বলেছেন, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পাট বিক্রি হচ্ছে ২৬০০-২৮০০ টাকায়। কিন্তু, ২ সপ্তাহ আগে তারা পাট বিক্রি করেছিলেন ৩০০০-৩৩০০ টাকা দরে। কিন্তু, টাকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে এখন কমদামে পাট বিক্রি করছেন তারা।

তবে, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ২ সপ্তাহ আগে বাজারে পাটের সরবরাহ কম ছিল তাই দাম বেশি ছিল। কিন্তু, পাটের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে।

বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পাট বিক্রি হচ্ছে ২৬০০-২৮০০ টাকায়। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার ১৯,৬৮০ হেক্টর জমিতে ২,৩৭,২৬৬ বেল (প্রতি বেল ১৬১ দশমিক ২৫ কেজি) পাট উৎপন্ন হয়েছে। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৪০৭৫ হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয়েছে ৪৯,১২৯ বেল পাট।

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের নবীর হোসেন (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে চার বিঘা জমি থেকে পাট উৎপন্ন করেছেন ২৬ মণ। দুই সপ্তাহ আগে ১০ মণ পাট বিক্রি করেছিলেন ৩৩০০ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ পরে ৮ মণ পাট বিক্রি করলেন ২৭০০ টাকা দরে।

তিনি বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম পাটের দাম আরও বাড়বে। কিন্তু, দাম কমেছে। সংসারে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি বাধ্য হয়েই কমদামে পাট বিক্রি করেছি।'

টাকার প্রয়োজনে চাষিরা বাধ্য হয়ে কমদামে পাট বিক্রি করছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের নজরুল ইসলাম (৫৬) বলেন, 'বীজ, সার, কীটনাশকের দাম ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষের খরচ বেড়েছে। কিন্তু, বর্তমান বাজারদরে আমরা লাভবান হতে পারছি না। পাটের দাম বাড়ার আশায় আমি ৫ বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত ৩০ মণ পাট বিক্রি না করে ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু, পাটের বাজার দর কমে যাওয়ায় আমি হতাশ।'

পাটের দাম কমার বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলা রাজিবপুর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুই সপ্তাহ আগে বাজারে পাটের সরবরাহ কম ছিল, তাই পাটের দাম চড়া ছিল। এখন বাজারে পাটের সরবরাহ বেড়েছে, তাই দাম কমেছে। আমরা কৃষকের থেকে পাট কিনে মণ প্রতি ১০০-১২০ টাকা লাভে মহাজনের কাছে বিক্রি করছি।'

কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় ১৯,৬৮০ হেক্টর জমিতে ২,৩৭,২৬৬ বেল (প্রতি বেল ১৬১ দশমিক ২৫ কেজি) পাট উৎপন্ন হয়েছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম শহরে পাটের মহাজন মনোরঞ্জন সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা পাট কিনে গুদামে রাখছি। ভবিষ্যতে ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারব কিনা সেটাও অনিশ্চিত।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, 'বাজারে পাটের দর কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ। তবে পাটচাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে পাটের আঁশ ছাড়াও ৬-৭ মণ পাটকাঠি পেয়ে থাকেন। প্রতি মণ পাটকাঠি ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া পাটকাঠি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি দ্রব্য। তবে পাটের দাম প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি হলে কৃষকরা পাটচাষে আরও আগ্রহী হবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

3h ago