পাকিস্তানের জন্য তালেবানের উত্থানের অর্থ যেমন

আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সম্পর্ক বিশেষ ধরনের। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংযোগ রয়েছে। সাবেক আফগান নেতা হামিদ কারজাই একবার দুই দেশকে ‘অবিচ্ছেদ্য ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সম্পর্ক বিশেষ ধরনের। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংযোগ রয়েছে। সাবেক আফগান নেতা হামিদ কারজাই একবার দুই দেশকে 'অবিচ্ছেদ্য ভাই' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন তালেবান সরকারকে প্রভাবিত করার আশায় থাকা কিছু পশ্চিমা শক্তির আশা, পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু, এ আশা কতুটকু পূরণ হতে পারে, তা নিয়ে সন্দেহে আছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলে আসছে। যদিও, দেশটি কখনো তা স্বীকার করেনি।

৯/১১ এর হামলার পর 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' পাকিস্তান নিজেদের যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলে দাবি করে। কিন্তু, একই সময়ে দেশটির সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কিছু অংশ তালেবানের মতো আফগানিস্তানের কিছু ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।

বিশেষজ্ঞরা ওই সময় মনে করেছিলেন, এর মাধ্যমে পাকিস্তান আসলে ভারতপন্থী কোনো সরকার যেন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে চাইছিল। কিন্তু, ২০ বছর আগে যখন তালেবান ক্ষমতায় ছিল, তখন অল্প যে কয়েকটি দেশ তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, পাকিস্তান তার মধ্যে একটি। গত মাসে যখন তালেবান কাবুল দখল করল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তখন বললেন, 'তালেবান দাসত্বের শেকল ভাঙছে।'

পাকিস্তান আগে থেকেই তালেবানকে সমর্থন দেওয়ার ইতিহাস থাকলেও, এবার তালেবান কাবুল দখল করে নেওয়ায় দেশটি যে পুরোপুরি স্বস্তিতে আছে তা নয়। আফগানিস্তান থেকে সীমান্তে হামলা চালানো ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কারণে বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানিরা নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে।

কাবুলের নতুন সরকার যেন আল কায়েদা এবং স্থানীয় ইসলামিক স্টেটের মতো গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে পারে সেদিকে পাকিস্তানের একটি বড় আগ্রহ রয়েছে। এর অর্থ পাকিস্তান চায়, তালেবান দৃঢ়ভাবে কাজ করুক এবং আফগানিস্তান অশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত না হোক।

পাকিস্তানের আরেকটি দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে শরণার্থী সংকট। ইতোমধ্যে দেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী আছে। শরণার্থীর সংখ্যা আরও বাড়লে আরও সংকটে পড়বে পাকিস্তান। 

পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক তেমন ভালো না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই বৈরী। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট এইচআর ম্যাকমাস্টার বলেছেন, জিহাদী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখলে, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি এমন হলেও, অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি ঠিকই আফগানিস্তান বিষয়ে পাকিস্তানের দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটেন ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসলামাবাদ সফর করেছেন। ইতালিও যাবে শিগগির। কূটনীতিকরা আশা করছেন, এখনও তালেবানের ওপর পাকিস্তানের কিছুটা প্রভাব আছে। তবে, পাকিস্তান সত্যিই তালেবানকে প্রভাবিত করতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

3h ago