সিডনিতে ‘বাংলা টাউন’ লাকেম্বার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা
অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে নিথর এলাকায় পরিণত হয়েছে সিডনির ‘বাংলা টাউন’ হিসেবে পরিচিত লাকেম্বা। বেলমোর-লাকেম্বা চেম্বার অব কমার্সের তথ্য অনুযায়ী, এই এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭৬টি। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশের মালিক বাংলাদেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জুন মাসে সিডনিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে লাকেম্বার একটি মাংসের দোকানে একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ওই দোকানের ১২ জন কর্মচারীকে আইসোলেশনে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। লাকেম্বাকে ঘোষণা করা হয় ‘রেড স্পট’ এলাকা হিসেবে।
এর মধ্যে পুলিশ টহলে এসে বিধিনিষেধ অমান্য করার জন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে মোটা অংকের জরিমানা করে। খবরটি প্রকাশিত হয় প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিকে। যার ফলে পরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লাকেম্বা পরিণত হয় জনশূন্য একটা এলাকায়।
বর্তমানে ক্রেতার অভাবে লাকেম্বার বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। তার আগে থেকেই লকডাউনজনিত বিধিনিষেধের কারণে রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ ছিল।
বেলমোর-লাকেম্বা চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারি ও ব্যাংক্সটাউন-ক্যান্টারবুরি কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর শাহে জামান টিটো এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সমগ্র সিডনির মধ্যে লাকেম্বা হচ্ছে বাংলাদেশিদের প্রাণের একটি এলাকা। এখানকার ব্যবসায়ীরা ঈদের মৌসুমের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু এবার লকডাউনের কারণে কোনো ব্যবসা হয়নি।’
দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললে বেশিরভাগ দোকান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে শাহে জামান আরও বলেন, ‘যে দোকানে এক সময় দৈনিক বিক্রি ছিল পাঁচ হাজার ডলার, এখন তা ৫০০ ডলারে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশিদের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই বাংলা টাউনের অধিকাংশ দোকান একসময় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।’
অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য নগরী সিডনির এই সাবার্বটি (পাড়া) ক্যান্টারবুরি-ব্যাংক্সটাউন কাউন্সিলের অধীনে।
এখানে কর্মরত বাংলাদেশি অভিবাসীরা বলছেন, দেশের বাইরে গভীর মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে তারা এখানে আরেকটি বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। এখানকার বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড। একই এলাকায় মুখরোচক বাংলা খাবারের এতগুলো রেস্তোরাঁ গোটা অস্ট্রেলিয়ার আর কোথাও নেই।
চাঁদরাত, পয়লা বৈশাখসহ বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোতে সিডনিতে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিরা সমবেত হন লাকেম্বাতে। সিটি কাউন্সিল থেকে তখন লাকেম্বার সবচেয়ে বড় সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন প্রজন্ম পরিচিত হয় চিরায়ত বাংলার নানা উৎসবের সঙ্গে।
সন্ধ্যার পর লাকেম্বার বাংলা রেস্তোরাঁগুলোর সামনে আড্ডায় মিলিত হন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। সুদূর প্রবাসে বসেই দেশের রাজনীতিসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে চলে তর্ক-বিতর্ক।
আবার প্রবাসী কোনো লেখকের নতুন কোনো বই প্রকাশিত হলে তিনি এই ‘বাংলা টাউন’ এর ফুটপাতেই বসে পড়েন সেই বই বিক্রি করতে। তাকে ঘিরেই তখন তৈরি হয় ঢাকার নীলক্ষেত কিংবা শাহবাগের আবহ।
কিন্তু, করোনা মহামারি আরও অনেক কিছুর মতো লাকেম্বায় বাংলাদেশিদের সেই প্রাণচাঞ্চল্যকেও কেড়ে নিয়েছে।
Comments