ওয়েডের টানা ৩ ছক্কায় পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফেলে দিলেন হাসান আলী। যেন ম্যাচটাই ফেলে দিলেন এ পাকিস্তানি। ঠিক পরের বলেই ছক্কা হাঁকান ওয়েড। এর পরের বলে আরও একটি। এরপর আরও একটি। টানা তিন ছক্কায় চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যটা হয়ে গেল মামুলী। উল্টো এক ওভার হাতে রেখেই ফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।

শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফেলে দিলেন হাসান আলী। যেন ম্যাচটাই ফেলে দিলেন এ পাকিস্তানি। ঠিক পরের বলেই ছক্কা হাঁকান ওয়েড। এর পরের বলে আরও একটি। এরপর আরও একটি। টানা তিন ছক্কায় চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যটা হয়ে গেল মামুলী। উল্টো এক ওভার হাতে রেখেই ফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।

বৃহস্পতিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে পাকিস্তান ৫ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ১৯ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় অজিরা।

এদিন অজি শিবিরে শুরুতেই তোপ দাগান শাহিন শাহ আফ্রিদি। অবশ্য শুরুর ধাক্কা সামলে পালটা আক্রমণ চালান ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। দ্রুত বাড়াতে থাকেন রান।  এরপর লেগ স্পিনার শাদাব খানের ঘূর্ণিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারীর পাঁচ উইকেট তুলে নেয় পাকিস্তান। কিন্তু এরপর ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে অসাধারণ এক জুটি গড়ে তুললেন মার্কাস স্টোয়নিস। অবিচ্ছিন্ন ৮১ রানের জুটিতে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন তারা।

দুবাইয়ের মাঠে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই টস ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবারের আসরে এর আগের ১১ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। সেখানে শুরুতেই ভাগ্যটা সঙ্গে পায় অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় দলটি। শিশিরের সুবিধা করে পড়ে ব্যাট করে মাঝে কিছুটা চাপে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ই তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

এদিন ফিল্ডিংয়ে বেশ বিবর্ণ ছিল পাকিস্তান। শুরুতে ক্যাচিং ভালো হলেও শেষটা ভালো হয়নি। তিন তিনটি রান আউটের সুযোগ নষ্ট করে পাকিস্তান। সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙতে পারলেই উইকেট পেতে পারতেন তারা। তবে ফখর জামান, শাদাব খান, শাহিন শাহ আফ্রিদি কেউ পারেননি স্টাম্প ভাঙতে।

যদিও ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল পাকিস্তানের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে তুলে নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। অসাধারণ এক ইনসুইঙ্গারে অজি অধিনায়ককে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। পরের ওভারেও উইকেট পেতে পারতেন। মিচেল মার্শকেও প্রায় এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানিদের জোরালো আবেদনেও আম্পায়ার আঙুল তোলেননি। রিভিউতে আম্পায়ার্স কলে টিকে যান মার্শ।

শুরুর ধাক্কা ধীরে ধীরে সামলে নিতে থাকেন অজিরা। ইমাদ ওয়াসিমের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ১৭ রানে তুলে পাল্টা আক্রমণ করে তারা। পরের ওভারে হারিস রউফের ওভারে ১৪ রান। তাতে পাওয়ার প্লেতে ৫২ রান তুলে নেয় দলটি।

তবে পাওয়ার প্লে শেষ হতে বল হাতে নিয়েই এ জুটি ভাঙেন শাদাব খান। পাকিস্তানিদের উপর চড়াও হতে থাকা মার্শকে ফেরান আসিফ আলীর তালুবন্দি করে। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপএজ লং লেগে ধরা পড়েন তিনি। পরের ওভারে ফিরে একই ঢঙ্গে ফের আঘাত করেন অজি শিবিরে। এবার স্লগ সুইপ করতে টপএজ হয়ে মিড উইকেটে ফখর জামানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন স্টিভ স্মিথ।

এক প্রান্তে উইকেট পেলেও অপর প্রান্তে পাকিস্তানের হতাশা বাড়ান ওয়ার্নার। নিয়মিত বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের গতি রাখেন সচল। ফলে ১০ ওভারে ৮৯ রান তুলে নেয় দলটি। যেখানে পাকিস্তান ১০ ওভারে করেছিল ৭১ রান।

তবে পানি পানের বিরতি শেষে প্রথম বলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ওয়ার্নারকে ফেরান শাদাব। তার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে থাকা বল খেলতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের হাতে। যদিও আল্ট্রা এজে লাইন ছিল ফ্ল্যাট। রিভিউ নিলে হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটে লাগায় মাঠ ছাড়তে কার্পণ্য করেননি এ অজি ওপেনার।

ওয়ার্নার ফিরতে রানের গতিতে কিছুটা লাগাম দিতে পারে পাকিস্তান। তবে ভিন্ন কিছু ভেবেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শাদাবের পরের ওভারে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে টপএজ হয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন হারিস রউফের হাতে।

কিন্তু এরপর ওয়েডের সঙ্গে স্টোয়নিসের জুটিই বদলে দেয় সব। ৩০ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন ওয়ার্নার। মাত্র ১৭ বলে ৪১ রানের ক্যামিও খেলেন ওয়েড। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৩১ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৪০ রান করেন স্টোয়নিস। পাকিস্তানের পক্ষে ২৬ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পান শাদাব খান।  

জ্বর থেকে উঠে আসা রিজওয়ান এদিন শুরুতে ছিলেন কিছুটা নড়বড়ে। প্রথম পাঁচ বলে কোনো রানই করতে পারেননি। আর ষষ্ঠ বলে তো প্রায় আউট হয়ে গিয়েছিলেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅফে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। মিডঅফ থেকে দৌড়ে সে ক্যাচ প্রায় লুফেও নিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে শেষ মুহূর্তে এ অজি ফিল্ডার নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে বেঁচে যান রিজওয়ান।

সুযোগ ছিল পাওয়ার প্লের শেষ বলেও। প্যাট কামিন্সের বলটি ফ্লিক করে ফাইন লেগে দুরূহ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন রিজওয়ান। ঝাঁপিয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন অ্যাডাম জাম্পা। কিন্তু হাত ফসকে গেলে ফের বেঁচে যান এ পাকিস্তানি ওপেনার। রিজওয়ান তখন ব্যাট করছিলেন ২০ রানে। ফলে পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৪৭ রান তোলে পাকিস্তান। প্রথম ছয় ওভারে চলতি আসরে এটাই সর্বোচ্চ রান দলটির।

পাওয়ার প্লে শেষে রানের গতিতে কিছুটা লাগাম টানে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে নিয়ে পাকিস্তান শিবিরে চাপ সৃষ্টি করেন লেগ স্পিনার জাম্পা। প্রথম ওভারে চার দেন। দ্বিতীয় ওভারে ফিরে মাত্র ৩ রান দিয়ে দলকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু। তার বলে পাকিস্তানি অধিনায়ক স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লংঅনে সীমানায় ধরা পড়েন ওয়ার্নারের হাতে। তবে এর আগে ৭১ রানের দারুণ এক ওপেনিং জুটি এনে দেন পাকিস্তানকে। ৩৪ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩৯ রান করেন বাবর।

১২তম ওভারে সেই জাম্পার ওভারে ১৫ রান তুলে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন রিজওয়ান। তবে পরের ওভারে বল করতে এসে ফের লাগাম টেনে ধরেন স্টার্ক। মাত্র তিন রান দেন। তার চতুর্থ বলে আহত হতে পারতেন রিজওয়ান। তার বাউন্সার হেলমেটে লাগে এ ওপেনারের। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিপদ হয়নি। মাঝের ওভারে (৭-১৫) ৭০ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।

স্লগ ওভারের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি পাকিস্তানের। ১৬তম ওভারে আসে ৫ রান। তবে পরের তিন ওভারে ৩৯ রান তুলে নেন তারা। ১৯তম ওভারে কামিন্সের বলে আউট হয়ে যান রিজওয়ান। সে ওভারে হাত খুলতে পারেননি ফখর। ফলে মাত্র ৩ রান আসে সে ওভারে। শেষ ওভারেও শুরুটা ভালো করেছিলেন স্টার্ক। প্রথম তিন বলে আসে ২ রান। তবে পরের দুই বলে টানা দুই ছক্কায় দলকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন ফখর।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন রিজওয়ান। ৫২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৩২ বলে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ফখর। ৩২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৩৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে অধিনায়ক বাবরের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৩৮ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান স্টার্ক।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

3h ago