সন্তানদের না জানিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন ইউক্রেনের এই টেনিস তারকা

জন্মভূমি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি তিনি। কিয়েভকে রক্ষা করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সের্গেই স্তাকোভস্কি।
ছবি: টুইটার

জন্ম তার কিয়েভে। সেখানকার আলো, বাতাস, মাটি- সবকিছুর সঙ্গেই তার নিবিড় সম্পর্ক। তাই জন্মভূমি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি তিনি। কিয়েভকে রক্ষা করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সের্গেই স্তাকোভস্কি।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে যখন আক্রমণ শুরু করে, তখন দুবাইতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন দেশটির সাবেক টেনিস তারকা স্তাকোভস্কি। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও তিন সন্তান- যাদের সবার বয়সই সাত বছরের কম। মাতৃভূমির সংকটময় পরিস্থিতিতে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। পরিবারকে হাঙ্গেরিতে রেখে তিনি যোগ দেন যুদ্ধে। তার স্ত্রী সহজে মেনে নিতে পারেননি এই সিদ্ধান্ত। আর তার সন্তানরা সম্ভবত ভাবছে যে তাদের বাবা কোনো টেনিস প্রতিযোগিতায় খেলতে গেছেন।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত বাহিনীর সৈনিক হিসেবে কিয়েভকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন ৩৬ বছর বয়সী স্তাকোভস্কি। দেশের জন্য নিজের পুরোটা উজাড় করে দিতে তৈরি তিনি। বৃহস্পতিবার আমেরিকান গণমাধ্যম সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের নাগরিক ও শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করা।

ছবি: টুইটার

২০১৩ সালের উইম্বলডনে সুইজারল্যান্ডের কিংবদন্তি রজার ফেদেরারকে হারিয়ে বিশাল অঘটনের জন্ম দিয়েছিলেন স্তাকোভস্কি। এক সময় তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন ছেলেদের বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের ৩১তম স্থানে। ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি তিনি টানেন গত জানুয়ারিতে, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার পর। কিন্তু পরিবারকে নিয়ে নির্বিঘ্নে অবসর কাটানোর সুযোগটা আর হলো কোথায়! তার সময় কাটছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমান হামলার সতর্ক সংকেত (সাইরেন) ও বিস্ফোরণের শব্দে।

বিজয়ের আশা প্রকাশ করে স্তাকোভস্কি বলেছেন, 'আমি এখানে জন্মেছি। আমার দাদা-দাদিকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে। আমি এমন একটা ইতিহাস তৈরি করতে চাই যা আমার সন্তানদেরকে ভবিষ্যতে বলতে পারব। রাশিয়া তাদের মুক্তি দিক, এটা এখানকার নাগরিকরা কেউ চায় না। তাদের স্বাধীনতা আছে, গণতন্ত্র আছে... রাশিয়া এখানে নৈরাশ্য ও দারিদ্র্য নিয়ে আসতে চায়।'

প্রিয় মুখগুলোকে আবার দেখার সুযোগ হবে কিনা তা জানেন না স্তাকোভস্কি। স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে অপরাধবোধও কাজ করছে তার মধ্যে, 'কোনোরকম দোটানা ছাড়া এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। আমার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আমি যদি (হাঙ্গেরির) বাড়িতে বসে থাকতাম, তাহলে আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করত দেশে না ফেরার জন্য। আবার এখনও অপরাধী লাগছে তাদেরকে ছেড়ে আসার জন্য।'

স্তাকোভস্কির মনে হচ্ছে, স্ত্রীর সঙ্গে অন্যায় করেছেন তিনি, 'অবশ্যই, আমার স্ত্রী একেবারে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। আমি কেন যুদ্ধে যোগ দিয়েছি তা সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তার কাছে এটা (তার সঙ্গে) বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি কেন সে এমন ভাবছে। সন্তানদের আমার স্ত্রী কিছু জানায়নি, আমিও কিছু জানাইনি। তবে তারা হয়তো শিগগরিই জেনে যাবে।'

স্তাকোভস্কির মতো আরও অনেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার মতো প্রশিক্ষণ নেই। কেবল আছে নিখাদ দেশাত্মবোধ। ইউক্রেনে ফিরে অন্য বেসামরিক যোদ্ধাদের মতো তিনিও বন্দুক চালানো শিখেছেন। কারও প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও এমন কোনো পরিস্থিতি উদ্ভূত হলে গুলি চালাতে দ্বিধা করবেন না তিনি।

দেশকে রক্ষার পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা শোনা গেছে তার কণ্ঠে, 'আমি জানি না এমন কোনো মানুষ আছে কিনা যে আপনাকে বলতে পারবে যে এই মুহূর্তে আমি জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। আমি আমার সন্তানদের দেখতে চাই... আমার স্ত্রীকে দেখতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

3h ago