সংক্রমণের উচ্চ-ঝুঁকিতে ৫০ জেলা

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে, যা সারাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণের বিস্তৃতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে, যা সারাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণের বিস্তৃতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই বেড়েছে। গত ৩ জুন ৩৬টি জেলাকে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। গতকাল সংখ্যাটি বেড়ে ৫০-এ পৌঁছেছে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে শনাক্তের হার ১০ শতাংশ বা তার ওপরে হলে সেই জেলাকে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে মৃত্যু ও শনাক্ত বিবেচনায় খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল দেশে করোনায় ৬০ জন মারা গেছেন, যা ৪ মে’র পর থেকে সর্বোচ্চ এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৯৫৬ জন, যা ২২ এপ্রিলের পর থেকে সর্বোচ্চ।

উদ্বেগজনকভাবে দেশব্যাপী দৈনিক করোনা শনাক্তের হার দুই সপ্তাহ আগের ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে গতকাল ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশে পৌঁছেছে। আগের দিন এই হার ছিল ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।

ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে গতকাল সরকার দেশব্যাপী জনগণ ও যানবাহনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বাড়িয়েছে। তবে, স্বাস্থ্যসুরক্ষা নির্দেশিকা বজায় রেখে সরকারি ও বেসরকারি সব অফিস খোলা থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড সংকট মোকাবিলায় সরকারি ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল এবং সরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব সংকটকে আরও গভীর করেছে।

ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা ‘ক্লাস্টার ভিত্তিক বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন’ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায়, দেশের অন্য জেলাগুলোতে খুলনা ও রাজশাহীর মতো পরিস্থিতি হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করছি যে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ঢাকা শহরে ভাইরাসের সংক্রমণ খুলনা বা রাজশাহীর মতোই খারাপ হয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, কোভিড পরীক্ষা বাড়ানো ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের অন্যদের থেকে আলাদা করার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে হয়।

সরকার প্রতিটি জেলার কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যক্রমের সমন্বয় করার জন্য একজন সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়াও, জনস্বাস্থ্য কমিটি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনগণকে সচেতন করতে আইনপ্রণেতাদের সংযুক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন।

ডা. ফয়সাল বলেন, ‘কিন্তু, মনে হচ্ছে সবাই ঘুমিয়ে আছে।’

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে সর্বাধিক ১৭ জন এবং খুলনা বিভাগে ১৪ জন মারা গেছেন।

অন্যান্য বিভাগগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আট জন, সিলেটে ছয় জন, রংপুরে চার জন এবং ময়মনসিংহে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোভিডের ডেলটা ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এখন তেমনভাবে মনোনিবেশ করা হয় না। ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট অন্য কোনো ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রামক।’

‘আমরা এখন যা দেখছি, বাস্তব পরিস্থিতি তার থেকেও ভয়াবহ। কারণ, নমুনা পরীক্ষা খুব কম হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের মতো খারাপ হতে পারে।’

পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই উল্লেখ করে কোভিড শনাক্তের হার ১৫ শতাংশ বা তারও বেশি এমন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

অকার্যকর বিধি-নিষেধ

দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায় বিধিনিষেধ কার্যকর থাকলেও চারটি জেলায় ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, লোকজন স্বাস্থ্যসুরক্ষা নির্দেশনাগুলো মেনে চলছেন না বলে তাদেরকে প্রতিরোধ কার্যকর করতে লড়াই করতে হচ্ছে।

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে, ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে কেউই গ্রাহ্য করছে বলে মনে হয় না। বিধি-নিষেধের প্রয়োগ শিথিল করলে জেলায় সংক্রমণ কমবে না।’

সাতক্ষীরায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও জেলায় সংক্রমণের হার বাড়ছে।

গতকাল সংক্রমণের হার ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন শাফায়াত হোসেন জানান, ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের প্রবণতার দিকে মানুষজন কোনো নজর দিচ্ছে না।

‘তারা স্বাস্থ্যসুরক্ষা নির্দেশিকাগুলো সম্পর্কে খুব কম চিন্তা করে’, তিনি বলেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুলনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ উভয়ই বেশি হওয়ায় পুরো বিভাগটি কোভিড হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

গতকাল বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ৪২ শতাংশ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘যেহেতু অনেক বেশি মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছেন, তাই বিভাগের ১০টি জেলার হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে। সবাইকে যথাযথভাবে চিকিৎসা প্রদান করা অসম্ভব।’

খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদ সুলতানা ডেইলি স্টারকে জানান, পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন হতে হবে। কেবল তাদের সচেতনতাই এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

High Temperature Days: Barring miracle, record of 76yrs breaks today

At least 23 days of this month were heatwave days, which equals the record set in 2019 for the entire year.

11h ago