আইয়ুব বাচ্চু’র ‘দরজার ওপাশে’র স্মৃতি

আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন ছয় তারের জাদুকর। পাশাপাশি গায়ক, গীতিকার ও সুরকার হিসেবে স্বনামধন্য। আজ সোমবার এই কিংবদন্তির জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এই দিনে ৬০ বছরে পা রাখতেন এই রক লিজেন্ড।
আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে গীতিকার বাপ্পী খান। ছবি: সংগৃহীত

আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন ছয় তারের জাদুকর। পাশাপাশি গায়ক, গীতিকার ও সুরকার হিসেবে স্বনামধন্য। আজ সোমবার এই কিংবদন্তির জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এই দিনে ৬০ বছরে পা রাখতেন এই রক লিজেন্ড।

আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে তার গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় 'এখন অনেক রাত' গানের গীতিকবি বাপ্পী খান কিছু স্মৃতি ভাগাভাগি করলেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

বাপ্পী খান বলেন, 'আমার লেখা "এখন অনেক রাত" গানটার আসল নাম হলো "দরোজার ওপাশে"। কিন্তু "এখন অনেক রাত" নামেই এটি বেশি পরিচিত পেয়েছে।'

'গানটা "টুগেদার" নামে একটি মিশ্র অ্যালবামে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পরে ১৯৯৫ সালের দিকে এলআরবি'র আনপ্লাগড "ফেরারী মন" অ্যালবামে এটি প্রকাশিত হয়েছিল।'

'বাচ্চু ভাইয়ের জন্য ১১টা গান লেখার পর একদিন তাকে বললাম, "একটা প্রেমের গান লিখতে চাই।" বাচ্চু ভাই তখন মগবাজারের কারিমাস প্লাজার বাসায় থাকতেন। তিনি বললেন, "ঠিক আছে লিখবি"।'

'বাচ্চু ভাই আসলে তিনভাবে গানের সুর করতেন। গানের কথা দেখে সুর করতেন, আগে সুর করতেন আমি সেখানে কথা বসাতাম। আরেকটি হলো— তিনি অনেকক্ষণ গিটার বাজাতেন। তা শুনতে শুনতে গান লিখতাম।'

'এভাবেই আমার "এখন অনেক রাত" গানটা লেখা।'

'এক রাতে বাচ্চু ভাইয়ের মগবাজারের বাসার ছাদে বসে গানটা লেখা শুরু করেছিলাম। তিনি গিটার বাজাচ্ছেন। আমি সেখানে প্রথম লাইন  "এখন অনেক রাত খোলা আকাশের নীচে" লেখার পর আর লিখতে পারছিলাম না। বাচ্চু ভাইকে বললাম, এই গানটা আসলে রাতে লেখা যাবে না। রাতকে অনুভব করে দিনের বেলায় লিখতে হবে। বাচ্চু ভাই বললেন, "তুই একটা পাগল"। পরের দিন দুপুরে আসতে বললেন।'

'পরের দিন এলআরবির প্র‍্যাকটিস প্যাডে বসে দুই লাইন করে লিখি আর বাচ্চু ভাই তাতে সুর দেন।'

'রাতের এই গানটা লিখেছিলাম দুপুরের প্রচণ্ড গরমে।'

'আমার লেখা গানগুলোর মধ্যে শ্রোতারা এটি বাচ্চু ভাইয়ের কণ্ঠে বেশি পছন্দ করেছে,' যোগ করেন বাপ্পী খান।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের এই শিরোমণি তার প্রথম গান প্রকাশ করেন 'হারানো বিকেলের গল্প' শিরোনামে। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। তার প্রথম একক অ্যালবাম 'রক্তগোলাপ' প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে।

১৯৭৮ সালে আইয়ুব বাচ্চু যোগ দেন 'ফিলিংস' ব্যান্ডে। এরপর ১৯৮০ সালে 'সোলস'র সঙ্গে শুরু হয় তার পথচলা। প্রায় এক দশক এই ব্যান্ডের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।

'সোলস' ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে গঠন করেন ব্যান্ড 'এলআরবি'। এলআরবি'র প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে।

আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবাম: 'ময়না' (১৯৮৮) 'কষ্ট' (১৯৯৫), 'সময়' (১৯৯৮), 'একা' (১৯৯৯), 'প্রেম তুমি কি' (২০০২), 'দুটি মন' (২০০২), 'কাফেলা' (২০০২), 'প্রেম প্রেমের মতো' (২০০৩), 'পথের গান' (২০০৪), 'ভাটির টানে মাটির গানে' (২০০৬), 'জীবন' (২০০৬), 'সাউন্ড অব সাইলেন্স' (২০০৭), 'রিমঝিম বৃষ্টি' (২০০৮), 'বলিনি কখনো' (২০০৯) ও 'জীবনের গল্প' (২০১৫)।

এলআরবির অ্যালবাম: 'এলআরবি' (১৯৯২), 'সুখ' (১৯৯৩), 'তবুও' (১৯৯৪), 'ঘুমন্ত শহরে' (১৯৯৫), 'ফেরারী মন' (১৯৯৬), 'স্বপ্ন' (১৯৯৬), 'আমাদের' ও 'বিস্ময়' (১৯৯৮), 'মন চাইলে মন পাবে' (২০০০), 'অচেনা জীবন' (২০০৩), 'মনে আছে নাকি নেই' (২০০৫), 'স্পর্শ' (২০০৮) ও 'যুদ্ধ' (২০১২)।

আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে: 'চলো বদলে যাই', 'হাসতে দেখো গাইতে দেখো', 'কেউ সুখী নয়', 'ফেরারি এই মনটা আমার', 'একদিন ঘুম ভাঙা শহরে', 'বাংলাদেশ', 'কষ্ট পেতে ভালোবাসি', 'এখন অনেক রাত', 'হকার', 'এই রূপালি গিটার ফেলে', 'গতকাল রাতে' ও 'সেই তারা ভরা রাতে'।

এই তালিকায় আরও রয়েছে: 'মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেন', 'সাড়ে তিন হাত মাটি', 'উড়াল দেবো আকাশে', 'কতদিন দেখেনি দু'চোখ', 'মনে আছে নাকি নাই', 'কার কাছে যাব', 'লোকজন কমে গেছে', 'একটাই মন যখন তখন', 'এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নে', 'মন চাইলে মন পাবে', 'অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে', 'আমি তো প্রেমে পড়িনি' ও 'আম্মাজান'।

আইয়ুব বাচ্চু ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর ৫৬ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন জীবনের ওপারে।

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

5h ago