ভ্যাকসিনের অপ্রাপ্যতায় অর্থছাড়ে ধীরগতি

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ভ্যাকসিন খাতে বড় আকারের অর্থ বরাদ্দ রাখলেও তা ব্যয় করতে পারছে না কারণ পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মিলছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চীনা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে ভ্যাকসিন ডোজ সংগ্রহের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
ছবি: রয়টার্স

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ভ্যাকসিন খাতে বড় আকারের অর্থ বরাদ্দ রাখলেও তা ব্যয় করতে পারছে না কারণ পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মিলছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চীনা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে ভ্যাকসিন ডোজ সংগ্রহের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

গত অর্থবছরে সরকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, যা পরে সংশোধন করে ৬ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার অর্থছাড় হয়েছে। যার ১ হাজার ২৭২ কোটি টাকা ৩০ মিলিয়ন ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন পেতে অগ্রিম অর্থ হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া হয়েছিল এবং বাকি টাকা দেওয়া হয়েছিল সিনোফার্মকে।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে ভ্যাকসিন কেনার জন্য এখন পর্যন্ত মোট প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা অর্থছাড় করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাওয়া মাত্রই আমরা টাকা ছেড়ে দিচ্ছি। টাকা কোনো সমস্যা নয়, টিকা না পাওয়াটাই সমস্যা।'
সরকার দেড় থেকে দুই বছরে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ জনগণকে  দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ভ্যাকসিন কিনতে এবং সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, এর জন্য আনুমানিক ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, যার একটি বড় অংশ উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণ থেকে আসবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের দাম স্থির নয়। গত বছর আমাদের অনুমান ছিল আমাদের ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই বছর দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেছে।'

এই কর্মকর্তা জানান, আগামী দিনে বাজেট অর্থছাড়ের গতি আরও বাড়তে পারে কারণ সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে ভ্যাকসিন কিনছে। শিগগির ছয় কোটি ডোজ সংগ্রহের জন্য সিনোফার্মকে অর্থ দিতে হবে বলে জানান তিনি।

ভ্যাকসিনের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোট ২ কোটি ৯১ লাখ টিকা পেয়েছে। সরকার সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ কিনেছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে। গত বুধবার মন্ত্রিসভায় সিনোফার্মের আরও ছয় কোটি ডোজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। ডোজগুলো নভেম্বর মাসে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ চীন থেকে উপহার হিসেবে দুই চালানে সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের ২১ লাখেরও বেশি ডোজ পেয়েছে। গতরাতে ১০ লাখ ডোজ এসেছে। এছাড়া কোভ্যাক্স সুবিধার অধীনে সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের ৩৪ লাখ ডোজের একটি চালান এসেছে। অন্যদিকে সেরাম থেকে কেনা তিন কোটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে।

বাংলাদেশ উপহার হিসেবে ভারত থেকে ভ্যাকসিনের ৩৩ লাখ ডোজ এবং কোভ্যাক্স সুবিধার অধীনে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ডোজ পেয়েছে। পাশাপাশি মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ এবং ফাইজার ভ্যাকসিনের ১ লাখ ৬ হাজার ডোজ দেশে এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও এপ্রিল মাসে সেরাম ডোজ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎস থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার পর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৩ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার চার শতাংশের কিছু বেশি। এর মধ্যে মাত্র ৫২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ দুই ডোজ টিকাই পেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার এই বছরের শেষ নাগাদ ১৫ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়, তাহলে আমরা আরও ভ্যাকসিন পাবো। তখন অর্থ ছাড়ের গতিও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

4h ago