আবুল মনসুর আহমদের বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় অন্বেষণ
আবুল মনসুর আহমদের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে 'আবুল মনসুর আহমদের চিন্তার স্বকীয়তা' শীর্ষক আলোচনা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে একটি ভার্চ্যুয়াল আয়োজনে।
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদের এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কবি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা। বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল হোসেন, সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন, প্রাবন্ধিক ও গবেষক কুদরত-ই-হুদা।
এতে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন ইমরান মাহফুজ।
প্রধান অতিথি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, 'আবুল মনসুর আহমদকে আমার জীবনে যতটা জেনেছি ও বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ পরিচয়ের বাইরেও তিনি একজন সংস্কৃতি বিশ্লেষক৷ তার বহুমাত্রিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক দিক উন্মোচন করেছে। তার জাতীয়তাবোধ ও সমাজ নিয়ে চিন্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আবুল মনসুর আহমদ বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয় অন্বেষণ করেছেন সারা জীবন।'
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, 'বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী আবুল মনসুর আহমদ। তার জীবন ও কর্ম আমাদের অনেক কিছু শেখায়, জানায়। তার কীর্তি নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আশা করি এটা অব্যাহত থাকবে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ইতিহাস চর্চায় আগ্রহ তৈরি হবে।'
মাহফুজ আনাম বলেন, 'আজকের আলোচনায় আবুল মনসুর আহমদের নানান দিক নিয়ে আলোচকরা বিশ্লেষণ করেছেন। আলোচকরা গভীর ভাবনায় তার মূল্যায়নের পাশাপাশি সমালোচনাও করছেন, এটা আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এতো বড় একজন মানুষের জীবন বুঝতে সমালোচনাও ভূমিকা রাখবে।
রফিকুল হোসেন বলেন, কয়েদিন দিন ধরে আবুল মনসুর আহমদের বেশ কিছু বই পড়েছি। জেনেছি অনেক। গুরুত্বপূর্ণ তার কিছু রচনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) বাংলা বিভাগের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তার রাজনীতি বিষয়ক বই আমাদের ইতিহাস বিভাগেও যুক্ত হবে। ধীরে ধীরে এখানকার বিদগ্ধজনের মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে।
কাজল রশীদ শাহীন বলেন, প্রতি বছরের তুলনায় এবারের প্রতিযোগীরা বেশ পাকাপোক্ত। চেষ্টা করেছে বিষয়ভিত্তিক ফোকাস করতে। এভাবে একাডেমেশিয়ানরা যদি আবুল মনসুর আহমদকে হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, সেই সঙ্গে আমাদের শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে সংকট রোধে যা যা করার দরকার তার উদাহরণ তৈরি করত, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
কুদরত ই হুদা বলেন, বাংলাদেশে আবুল মনসুর আহমদ নিয়ে কিছু 'মিস ইন্টারপ্রেটেনশন' আছে৷ এবারের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী তা থেকে বের এসেছে মনে হয়েছে। তাদের প্রবন্ধ মূল্যায়ন করতে গিয়ে আরও মনে হয়েছে তারা বিষয় বৈচিত্র্যতা নিয়ে ভেবেছেন।
দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলা চতুর্থ সংস্করণের এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা তিনটি ক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রবন্ধ জমা পড়ে ৭২টি। প্রতিযোগিতায় মোট বিজয়ী ১০ জন।
'আবুল মনসুর আহমদ ও তার সাংস্কৃতিক চিন্তা' বিভাগে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন ঈশিতা ফারজানা, দ্বিতীয় আসমাউল হুসাইন এবং যৌথভাবে তৃতীয় তাসনীম তিশা ও মোস্তাফিজুর রহমান সাফি।
'আবুল মনসুর আহমদ ও তার জাতীয়তাবোধ' বিভাগে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন আজিজ সারতাজ জায়েদ, দ্বিতীয় মুহম্মদ নুরুদ্দীন শহীদ এবং তৃতীয় সুলাইমান মাহমুদ।
'আজকের গণমাধ্যম ও আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা' বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ, দ্বিতীয় আলিফ নূর শর্মী এবং তৃতীয় কামরুল হাসান মাসুক।
প্রতিটি বিভাগে প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে আবুল মনসুর আহমদের এক সেট বই। বিজয়ী প্রত্যেককে সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হবে।
Comments