ইউক্রেন ভূখণ্ড হারালে তা পশ্চিমের জন্য ‘বড় আঘাত’: পোল্যান্ড

কোনো কারণে ইউক্রেন যদি তাদের ভূখণ্ড হারায়, তাহলে তা পশ্চিমের দেশগুলোর জন্য ‘বড় আঘাত’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা।
পোল্যান্ডের ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দুদা ও জেলেনস্কি এক বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন।
পোল্যান্ডের ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দুদা ও জেলেনস্কি এক বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স

কোনো কারণে ইউক্রেন যদি তাদের ভূখণ্ড হারায়, তাহলে তা পশ্চিমের দেশগুলোর জন্য 'বড় আঘাত' হবে বলে মন্তব্য করেছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা।

আজ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

কিয়েভের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা আবারও জানিয়ে প্রেসিডেন্ট দুদা ইউক্রেনের পার্লামেন্টের সদস্যদের জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তারা যেন পূর্ণাঙ্গভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।

তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ডকে উৎসর্গ করা হলে তা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় আঘাত হবে।'

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসনের পর প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে সশরীরে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে বক্তৃতায় দুদা আরও বলেন, 'এখন বিভিন্ন উদ্বিগ্ন কণ্ঠ হাজির হয়েছে। অনেকে বলছেন, ইউক্রেনের উচিৎ পুতিনের দাবি মেনে নেওয়া। কিন্তু, নিজেদের ভবিষ্যৎ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র ইউক্রেনেরই আছে।'

ইউক্রেনের পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট দুদা। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনের পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট দুদা। ছবি: রয়টার্স

দুদার এ সফরে ইউক্রেন ও পোল্যান্ড যৌথ সীমান্ত শুল্ক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে একমত হয়েছে। তারা যৌথভাবে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে ২ দেশের মানুষের চলাফেরা সহজ হবে এবং ইউক্রেনের পণ্য রপ্তানি বাড়বে।

এর আগে গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তার দেশ দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দেওয়ার শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নয়।

তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সন্তুষ্ট করতে এ ধরনের চুক্তির বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দেন।

রাশিয়া ইতোমধ্যে দনবাস ও মাইকোলাইভ অঞ্চলে বিমান ও কামান হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। কিয়েভ মনে করছে, দ্রুত ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে রাশিয়া এ কৌশল কাজে লাগাচ্ছে।

গতকাল রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক টুইটার পোস্টে বলেন, 'ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে যুদ্ধ শেষ হতে হবে।'

ইউক্রেনের বেশিরভাগ শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে যাওয়ার জন্য পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ার সীমান্ত ব্যবহার করে। পোল্যান্ড ইতোমধ্যে ৩০ লাখ ইউক্রেনীয়কে দেশটিতে থাকা, কাজ করা ও সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা উপভোগ করার অনুমতি দিয়েছে।

যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্যতম প্রধান গম ও ভুট্টা রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন প্রায় আড়াই কোটি টন শস্য রপ্তানি করতে পারেনি। এর কারণে বিশ্বে খাবারের দাম বেড়েছে।

আরও নিষেধাজ্ঞার দাবি

ইউক্রেনের পার্লামেন্টের একই অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

'আগ্রাসন বন্ধ করার প্রচেষ্টায় কোনো অসম্পূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ নয়,' বলেন তিনি।

দুদা'র সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি আরও জানান, পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন ইউক্রেনীয় মারা যাচ্ছেন।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কৌশলগত বন্দর নগরী মারিউপোল দখলের পর রুশ বাহিনী দনবাস অঞ্চলের অন্যতম প্রধান প্রদেশ লুহানস্কের দখলের জন্য আক্রমণ চালাচ্ছে।

গতকাল ইউক্রেনের জাতীয় টিভি চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভাদিম দেনিসেনকো জানান, সাইভিয়েরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরে সবচেয়ে বড় আকারের যুদ্ধ হচ্ছে।

ইউগানস্কের গভর্নর সেরি গাইয়া স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে জানান, রাশিয়া 'স্কর্চড আর্থ' কৌশল অবলম্বন করছে।

'তারা সাইভিয়েরোদোনেৎস্ক শহরকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়', যোগ করেন তিনি।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বক্তব্যে জানা গেছে, সাইভিয়েরোদোনেৎস্কের কাছাকাছি অঞ্চলে রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ ও তীব্র যুদ্ধ অব্যাহত আছে। তারা এখনো নিকটবর্তী গ্রাম ওলেকসান্দ্রিভকা দখলে নিতে পারেনি।

গতকাল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, তাদের বাহিনী দনবাস ও মাইকোলাইভ অঞ্চলে বিমান ও কামান হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের কমান্ড সেন্টার, সেনা ও গোলাবারুদের ডিপো ধ্বংস করেছে।

যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিবেদনগুলো রয়টার্স স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

ইউক্রেনের রুশ আগ্রাসন শুরুর আগে থেকেই মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউগানস্ক ও এর আশপাশের অঞ্চলের কিছু অংশের দখল নিয়েছিল। মস্কো চায় এ অঞ্চলের বাকি অংশও দখল করে নিতে।

দোনেৎস্ক অঞ্চলের রুশ-সমর্থক বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স
দোনেৎস্ক অঞ্চলের রুশ-সমর্থক বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধবিরতিতে কোনো ছাড় নয়

গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দেওয়ার শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নন তারা।

তার মতে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে গেলে উল্টো ইউক্রেনই বিপদে পড়বে। কারণ, যুদ্ধের মধ্যে বিরতি পেলে রাশিয়া আরও শক্তি সঞ্চয় করে ইউক্রেনের ওপর আবারও হামলা চালাবে।

সম্প্রতি, ইউক্রেনকে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাহি।

মারিউপোল দখলের মাধ্যমে পুতিন প্রায় ৩ মাস সামরিক অভিযানের পর প্রথম বড় আকারের ও নিচ্ছিদ্র জয় পেয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মারিউপোল পুরোপুরি দখলে নেওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে সংযোগ স্থাপন করতে পারছে।

গত রোববার মারিউপোলের শেষ প্রতিরক্ষাস্থল আজভস্টল কারখানার ভেতরে রুশ সেনারা প্রবেশ করে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো থেকে মাইন ও ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ করেছে।

অবশেষে মারিউপোলের আজভস্টল ইস্পাত কারখানা দখল করতে পেরেছে রাশিয়া। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি পশ্চিমের দেশগুলো ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ ও বিভিন্ন ধরনের ত্রাণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ।

মস্কোর দাবি, পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা ও কিয়েভের প্রতি বাড়িয়ে দেওয়া সাহায্যের হাত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ও তাদের মিত্রদের 'প্রক্সি যুদ্ধের' সমতুল্য।

পুতিন রুশ আগ্রাসনকে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অভিযানের উদ্দেশ্য ইউক্রেন থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের উৎখাত ও দেশটিকে নিরস্ত্র করা।

ইউক্রেন ও মিত্ররা এ উদ্দেশ্যকে আক্রমণের ভিত্তিহীন কারণ হিসেবে দাবি করেছে।

 

Comments