রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার ষড়যন্ত্র বিশ্বব্যাংকের, বিরোধিতা সংসদীয় কমিটির

রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ বিশ্বব্যাংকের সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবনাকে 'রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার অভিপ্রায়' উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।
ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ বিশ্বব্যাংকের সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবনাকে 'রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার অভিপ্রায়' উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত এক সভায় কমিটি বলেছে, 'রোহিঙ্গাদের জন্য বাড়ি তৈরি বা শিক্ষার সুযোগের নামে বিশ্বব্যাংক যেন ধানাইপানাই না করতে পারে।'

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা কমিটিকে বলেছি যে বিশ্বব্যাংক এ ধরনের ধানাইপানাই করে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করতে চায়। রোহিঙ্গাদের সেটেলমেন্টের জন্য এই সব প্রস্তাবনা মানা যাবে না। আমরা স্পষ্টতই এর বিরোধিতা করেছি।'

'আমরা খুব কঠোরভাবে বলেছি, বিশ্বব্যাংকের ঘাপলার চক্করে যেন আমরা না পড়ি,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হবে, আমরা তাদের সাময়িক জায়গা দিয়েছি। আপনারা তাদের মিয়ানমারে ফেরতের যাবতীয় ব্যবস্থা করুন। আমাদের এখানে থাকার জন্য তাদেরকে ভবন তৈরি করে দেবেন। তাদের চাকরির সুযোগ করে দেবেন। জমি কেনার সুযোগ দেবেন এসব ধানাইপানাই নয়।'

তিনি জানান, সংসদীয় কমিটির অবস্থান হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে কোন ধরনের আলোচনায় মন্ত্রণালয় যেন বলে যে 'তারা শরণার্থী নয় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী।'

'কাজেই আলোচনার প্রথম এজেন্ডা হবে তাদের কীভাবে ফেরত পাঠানো যাবে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী কমিটিকে জানিয়েছেন আমাদের এখানে ৯-১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে তিনশ জনেরও কম আছে যারা গ্রাজুয়েট। তাদের তো সেই দেশেই পড়াশোনা করার অধিকার নেই। বিশ্বব্যাংক চাইলে মিয়ানমারকে টাকা দিক সে দেশে রোহিঙ্গাদের পড়াতে।'

বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শনে গিয়ে খুশি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ এ রকম করার কথা বলেছে। কিন্তু, আমরা সেটা কেন করবো। এখানকার জায়গা সংকটের কারণেই আমরা ভাসানচরে তাদের নিচ্ছি। তাছাড়া এটা আমাদের বনের জমি। তাদের কারণে আমাদের বন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'

রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ 'রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক' নামে ১৬টি দেশের শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক।

ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে মতামত চেয়ে জুনের ৩০ তারিখ বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে সেটি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়।

পরে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, সরকার ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জীবনমান সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত

এদিকে, রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়ন এদেশে তাদের স্থায়ী বসবাসে উৎসাহিত করবে বলে বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়-রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্যাম্পগুলোকে জীবনমান ও সুযোগ-সুবিধাসমূহ বৃদ্ধি, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নানাবিধ বহুবার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ ধরণের কর্মকাণ্ড বিশেষ করে ক্যাম্পের জীবনমানের ক্রমাগত উন্নয়ন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসে উৎসাহিত করতে পারে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাবাসনের স্বার্থে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জীবনমান ও সুযোগ-সুবিধাসমূহ যৌক্তিক ও সীমিত পর্যায়ে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাব করা হলে প্রধানমন্ত্রী তার অনুমোদন দিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত প্রমুখ অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

19h ago