পাট বিক্রিতে ‘ধলতা’ ব্যবস্থা বাতিলের দাবি কৃষকদের
'প্রতি মণ পাট বিক্রি করলে এক কেজি করে "ধলতা" (অতিরিক্ত) দিতে হয়। তার ওপর এক নম্বর পাটকে দুই নম্বর বলে কেনার চেষ্টা করা হয়,' বলেন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা ছালাম মণ্ডল। পাট বিক্রির সময় 'ধলতা' নেওয়া বন্ধের দাবি তার।
একই জেলার বহরপুর বাজারের পাট বিক্রি করতে আসা আহাদ প্রামাণিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুই মণ পাট মেপে আনার পর পাঁচ কেজি কম পড়েছে। তার ওপর দুই মণে দুই কেজি ধলতা নেওয়ার কথা।'
কৃষকরা পাট চাষ করলেও পাট থেকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেন মজুতদাররা। উৎপাদিত পাট মজুত করে রাখার মতো সামর্থ্য নেই কৃষকদের। তাই, ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি করে দিতে হয়।
গত বছর যারা পাট মজুত করে রেখেছিলেন তারা বছর শেষে পাঁচ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলেন। তবে, কৃষকদের চেয়ে মজুতদাররাই এতে বেশি লাভবান হয়েছিল।
মাটিপাড়ার কৃষক ছালাম শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিজের জমি থাকলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ১০ মন পাট উৎপন্ন হয়। খরচ পড়ে ১০ হাজার টাকার মতো। বর্তমানে ১০ মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ হাজার টাকায়। এর জন্য সময় লাগে চার মাস।'
তবে, পাটের আঁশ ছাড়াতে পরিবারের নারী-শিশুদের যে শ্রম ব্যবহার করা হয় তা ব্যয়ের হিসাবে ধরা হয় না বলেও জানান তিনি।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম সহীদুন আকবার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাটের জন্য বিখ্যাত রাজবাড়ী ও ফরিদপুর অঞ্চল। এ বছর রাজবাড়ী জেলায় ৪৭ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে, ৪৮ দশমিক ২০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদিত হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশের মধ্যে এ অঞ্চলের উৎপাদিত পাট গুণগতভাবে খুব নামকরা। এই অঞ্চলের পাটের গুণগত মান ৬০ এর ওপরে। তবে, পাটের আঁশের উৎকর্ষতা নির্ভর করে পাট পচানোর পানির ওপর।
অন্যদিকে, পাট বিক্রি করে কোম্পানির কাছ থেকে টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান স্থানীয় পাটের মহাজনরা।
অনেকে জানান, সরকার নিয়ন্ত্রিত বিজেএমসির এজেন্সির কাছে দীর্ঘদিন ধরে তাদের বকেয়া পাওনা পড়ে আছে।
খানখানাপুরে পাট ব্যবসায়ী প্রদীপ কুণ্ডু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ত্রিশ বছর ধরে পাটের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। ২০১৭ সাল থেকে খুলনা হাফিজ জুট মিলে পাট দিয়ে আসছি। তাদের কাছে ৯০ লাখ টাকা পাওনা আছে।'
আরেকজন পাটের ব্যবসায়ী মাধব কুণ্ডু বলেন, '৪০ বছর ধরে পাটের ব্যবসা করছি। হাফিজ জুট মিলের কাছে ৬০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তারা পরিশোধ করেনি।'
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জুট মিলের ক্যাশিয়ার রণজিৎ কুমারের সঙ্গে কথা বললে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারের চেয়ে মিলের রেট কম থাকায় ব্যাপারীরাও কম পাট দিচ্ছেন।'
Comments