প্রবাসে
জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবিনারে আইনমন্ত্রী

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বিশ্ব ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বিশ্ব ইতিহাসে মানবাধিকার ও মানবতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বিশ্ব ইতিহাসে মানবাধিকার ও মানবতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।'

'হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারিও পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।'

'হত্যাকারীদের বিচার না করার প্রবণতা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও আইনের প্রতি চরম হুমকি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।'

গতকাল সোমবার জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আয়োজিত ওয়েবিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি সুখি ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলার।'

'স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ উন্নয়নের যে ভিত্তি রচনা করেছিলেন তা আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল একটি অগ্রগামী দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি জর্ডানের প্রিন্সেস বাসমা বিনতে আলী বলেন, 'বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার মতো একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা সত্যিই হতাশা ও বেদনার।'

বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেন, 'স্বাধীনতার মহানায়ককে হত্যা জাতি হিসেবে আমাদের কলঙ্কিত করে। দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না হওয়া বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ও মানবাধিকার সম্পর্কে বহির্বিশ্বে ভুল বার্তা দেয়। এই হত্যাকে আইনি বৈধতা দেওয়া ছিল মানবাধিকার ও সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।'

'গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেরি হলেও বাংলাদেশে আইনি ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ বলেন, 'ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, যে নেতা একটি জাতির স্বাধীনতার রূপকার এবং যিনি মানুষের ভালোবাসা দিয়েই ওঠে এসেছেন তাকে হয়ত হত্যা করা যায়, কিন্তু তাকে মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর উদারচেতা মানবিক মূল্যবোধ আজকের সময়ে খুবই বিরল।'

তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো রাষ্ট্রনায়ক ও অবিসংবাদিত নেতার সহজ-সরল জীবন ও মানবিক মূল্যবোধকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি গবেষক মফিদুল হক বলেন, 'বাংলাদেশ ও এর জাতিসত্তা ধর্ম, বর্ণ, শিল্প ও সাহিত্যের এক বৈচিত্র্যময় মিশেল। শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে একটি জাতিকে সম্পৃক্ত করা ও ধর্মের নামে শোষণ কখনই সফল হয় না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সেই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে।'

তিনি আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল একটি সাম্য ও মানবিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য নিয়ে। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এই মূলনীতি থেকে বিচ্যুত করতে চেয়েছিল। কিন্তু, দেশের মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তারা সফল হতে পারেনি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শেরই সফল বাস্তবায়ন।'

সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, 'বঙ্গবন্ধু হত্যা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। ইরাক, মিশরসহ বেশ কয়েকটি দেশ এই হত্যাকাণ্ডকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করলেও কয়েকটি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ষড়যন্ত্রের এই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকাতে হবে।'

এই হত্যার নীল নকশাকারীদের মুখোশও এক সময় সবার সামনে উন্মোচিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আজ বিশ্বে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ এক উন্নয়নের রোল মডেল।'

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস বছরব্যাপী ওয়েবিনার সিরিজ আয়োজন করছে। শোকাবহ আগস্টে আয়োজিত এই ওয়েবিনারটি ছিল অষ্টম আয়োজন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh’s ever-neglected working class

Even after half a century of independence, most of the working people in Bangladesh are far from enjoying fundamental workers' rights.

8h ago