অক্টোবরের বন্যায় আবাদি জমিতে বালুর স্তর, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ধরলা পাড়ের এক কৃষক আব্দুল কাদের (৬০)। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘বানের পানি নেমে গেছে ঠিকই কিন্তু রেখে গেছে ক্ষতির চিহ্ন। বাড়িতে ফিরেছি। ঘর মেরামত করেছি। এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আবাদি জমির।’
ধরলা পাড়ে আবাদি জমিতে বালু জমায় হতাশ কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ধরলা পাড়ের এক কৃষক আব্দুল কাদের (৬০)। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বানের পানি নেমে গেছে ঠিকই কিন্তু রেখে গেছে ক্ষতির চিহ্ন। বাড়িতে ফিরেছি। ঘর মেরামত করেছি। এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আবাদি জমির।'

ধরলা নদী তীরবর্তী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের এই কৃষকের ৬ বিঘা আবাদি জমির মধ্যে প্রায় দেড় বিঘা আবাদি জমি এখন বালুতে ঢাকা। বানের পানির সঙ্গে বালু এসে আবাদি জমিতে জমাট বেঁধেছে। পানি নেমে গেলেও বালু নামেনি।

তিনি আরও বলেন, 'বালুতে ঢেকে যাওয়ায় জমিতে ফসল হবে না। বালু সরাতে পারলে জমি আবাদযোগ্য হবে। কিন্তু এ কাজ আদৌ সম্ভব নয়। তারপরও চেষ্টা করছি প্রতিদিন কোদাল ছাপিয়ে বালু সরাতে।'

তার মতো গ্রামের অন্য কৃষকদের আবাদি জমির অবস্থা এরকমই বলে উল্লেখ করেন আব্দুল কাদের।

একই গ্রামের কৃষক আফিয়ার রহমান (৬২) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার অক্টোবরের শেষে বন্যা হওয়ায় আবাদি জমিতে পানি-বালু জমে যায়। পানি নেমে গেলেও জমি থেকে বালু সরেনি। জমিতে আর আবাদ করতে পারবো না এটা আমাদের কাছে ভয়ানক দুঃস্বপ্নের।'

তিনি সরকারিভাবে আবাদি জমির বালু সরানোর আবেদন করেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড় বাগডোরা গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিন (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬ বিঘা আবাদি জমির মধ্যে ২ বিঘা এখন বালুতে ঢাকা। বালু সরাতে না পারলে আবাদ অসম্ভব। কোদাল দিয়ে বালু সরানো খুবই দুরূহ কাজ।

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা পাড়ের গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক সামাদ মিয়া (৬২) ডেইল স্টারকে, 'প্রায় ৫ বছর আগে আমার ২ বিঘা আবাদি জমিতে বালু জমেছিল আজো সেগুলো আবাদযোগ্য হয়নি। এ বছরে অসময়ে বন্যা হওয়ায় আরও ৩ বিঘা আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে। জমির ওপর বানের পানি স্থায়ী হলেই এ সমস্যা হয়।'

তার গ্রামের অনেক কৃষকই এ সমস্যায় নিঃস্ব হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদী বেষ্টিত হলোখানা গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যার সময় আবাদি জমির ওপর বালু জমা আর পরবর্তীতে জমিগুলো অনাবাদি হওয়া একটি বড় সমস্যা। আমাদের ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে শতাধিক কৃষকের কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি অনাবাদি হয়েছে। কৃষকরা এখনো এসব জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না।'

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা ও ধরলার বুকে বালু মিশ্রিত পলি জমতে জমতে নদীর বুক সমতলের প্রায় সমান হয়ে গেছে। নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উপচে গিয়ে তীরবর্তী এলাকায় চলে যায়।'

'নিয়মিত নদী খনন করা না হলে এ সমস্যা থেকেই যাবে,' মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'তিস্তা খনন ও তীর সংরক্ষণে সরকারের পরিকল্পনা আছে। শিগগির তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হতে পারে।

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র গেছে, গত অক্টোবরে বন্যা পরিস্থিতি হওয়ায় নদীপাড়ের প্রায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গিয়ে অনাবাদি হয়ে গেছে। গত এক যুগে ২ জেলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পাড়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় ফসল নষ্ট হলে পরবর্তীতে পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু, বালুতে আবাদি জমি অনাবাদি হলে কৃষকরা বছরের পর বছর ফসল ফলাতে পারেন না।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর অসময়ের বন্যায় নদী তীরবর্তী বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে। এসব জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে কৃষকরা অপূরণীয় ক্ষতিতে পড়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

8h ago