নৌকায় ২ ঘণ্টার পর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছাতে হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে
উত্তাল মেঘনায় নৌকায় করে দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়ার পর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে হচ্ছে হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা এম জে এস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৪ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে।
চরাঞ্চলের এসব পরীক্ষার্থী দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারলেও ভালোমতো পরীক্ষা দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে চরাঞ্চলের একাধিক পরীক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টায় তাদের ঘর থেকে বের হয়ে সাড়ে ৭টায় ট্রলারে ওঠতে হয়। নৌপথে প্রায় ২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে তারা হাইমচর তেলির মোড় নৌঘাটে পৌঁছান। এরপর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়। অনেক সময় কুয়াশার কারণে নদীর ডুবো চরে তাদের নৌকা আটকে গেলে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পারেন না।
অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের এলাকায় পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকায় শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়। এত দূরের পথ পাড়ি দেওয়ার পর তাদের সন্তানেরা ক্লান্ত হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছালেও তাদের পক্ষে ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। পরীক্ষা শেষ করে আবাও নদী পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরতে তাদের বিকেল গড়িয়ে যায়।
এ ছাড়া, তাদের পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য মাথাপিছু ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি নৌকা ভাড়ার পিছনে ব্যয় করতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
একজন শিক্ষক বলেন, 'চরাঞ্চলের অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর অভিভাবক দিনমজুর, কৃষক বা জেলে। তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে একটি নৌযান বরাদ্দ দেওয়া হলে অভিভাবকদের এত চিন্তায় পড়তে হতো না।'
ইশানবালা চরের এম জে এস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বি এম মান্নাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরাঞ্চলে দিন দিন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষাকেন্দ্র করার জন্য বছর তিনেক আগে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে কোনো পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের নদী পার হয়ে হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে জেনেছি এবং ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাসও পেয়েছি।'
এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, 'চরাঞ্চলের এতগুলো শিক্ষার্থীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাইমচরে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে চরাঞ্চলে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র দেওয়া যায় কি না, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।'
Comments