অনশনের ১১৫ ঘণ্টা: দৃঢ়প্রতিজ্ঞার উপাখ্যান
হামিদা আক্তার, তবে পরিচিতি হামিদা আব্বাসী নামে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থীর পরিচয় একজন লেখক হিসেবে।
পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখালেখির পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বইমেলায় প্রকাশের অপেক্ষায় আছে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ 'বেদনার স্বাদ'।
কিন্তু এই লেখক এখন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের একটি বেডে মৃত্যুশয্যায়।
আর এ মৃত্যুশয্যা এই তরুণ-উদীয়মান লেখকের প্রতিবাদের ভাষা।
শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিট থেকে আমরণ অনশনে বসা ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি একজন।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে থেকে শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর শনিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হলেও তার অনশন চলছে।
এই হাসপাতালেই ভর্তি আরেক অনশনকারী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিন শাহরিয়ার রাতুলের অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করা হয় গতকাল রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে।
তার সহপাঠীরা বলেন, অনশনে থাকার দ্বিতীয় দিনেই তার পেটে ব্যথা শুরু হয় এবং স্বাভাবিক ব্যথা বিবেচনায় তার চিকিৎসাও শুরু হয়। রোববার ব্যথা বেড়ে গেলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষার পর তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়লে রাতেই তার অপারেশন করানো হয়।
সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল কাইয়ুম মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, 'অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লাস্ট স্টেজ ছিল। অপারেশন না করালে ব্লাস্ট করতে পারতো। এখন স্টেপ ডাউন ইউনিটে রাখা আছে, তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।'
হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. আরমান আহমেদ শিপলু বলেন, 'অনশনকারী সবার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। দ্রুত অনশন ভাঙিয়ে খাবার না খাওয়ালে তাদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।'
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্ররা জানান, অনশনকারীদের মধ্যে ২ জনের অ্যাজমা ও একজনের ডায়াবেটিস রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সবারই শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই অনশন ভাঙেননি।
উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া অনশনের ১১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পদত্যাগ করেননি শাবিপ্রবি উপাচার্য।
অনশনকারীদের একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে বাধ্য হয়ে বাড়ি যেতে হয়। কিন্তু বাকি ২৩ জন তাদের অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে ১৬ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়াও শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত আরও ৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন।
গত ১৩ জানুয়ারি বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আবাসিক ছাত্রীদের আন্দোলন ১৬ জানুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পরিণত হয়। সেদিন বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।
অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে, রাবার বুলেট ছুড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘাতে জড়ায়। এ সময় অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হন।
সেই রাতেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ওঠে এবং পরদিন সকাল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে গত শনিবার দিবাগত রাতে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
রোববার সন্ধ্যায় শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি সরকারের কাছে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানানোসহ ৪টি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
Comments