তাইজুলের ৭ উইকেটে বাংলাদেশের ৪৪ রানের লিড

টানা বোলিং করে যাওয়া স্পিনার তাইজুল ইসলাম দেখালেন তার বাঁ হাতের জাদু। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন পেসার ইবাদত হোসেন।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ দল ছিল বেশ চাপে। তাদের ৩৩০ রানের জবাবে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। তবে তৃতীয় দিনের শুরুতেই পাল্টে গেল পরিস্থিতি। বাবর আজমদের চাপ আলগা করার সুযোগ না দিয়ে স্বাগতিকরা ধরে রাখল ধারাবাহিকতা। টানা বোলিং করে যাওয়া স্পিনার তাইজুল ইসলাম দেখালেন তার বাঁ হাতের জাদু। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন পেসার ইবাদত হোসেন। তাদের নৈপুণ্যে মুমিনুল হকের দল ঘুরে দাঁড়াল তো বটেই, দাপট দেখিয়ে আদায় করে নিল লিডও।

রোববার চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের চা বিরতির আগে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেমেছে ২৮৬ রানে। তাতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড। 

৩৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ৫ উইকেটের স্বাদ নেন তাইজুল। ৪৪.৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে সবমিলিয়ে ৭ উইকেট নিতে তার খরচা ১১৬ রান। টেস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা ফিগার। ইবাদত ২ উইকেট পান ৪৭ রানে।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ৩১ ওভারে মাত্র ৫৮ রান তুলতে সফরকারীরা হারায় ৪ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে ২৭.৪ ওভারে তাদের বাকি ৬ উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। এসময় পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে আর ৮৩ রান।

দিনের প্রথম ওভারেই বল করতে আসেন তাইজুল। তার প্রথম চার বল থেকে আসে একটি সিঙ্গেল। পঞ্চম বলটা কাট করতে গিয়ে পরাস্ত হন আবদুল্লাহ শফিক। বল আগে লাগে তার পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। আগের দিন প্রায় একই রকম একটি অবস্থায় বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায় ৯ রানে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। ১৬৬ বলে ৫২ রান করার পর অবশেষে ফেরানো যায় অভিষিক্ত শফিককে। পরের বলেই আসে বড় উইকেট। পাকিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আজহার আলি তাইজুলের প্রথম বলেই হয়ে যান এলবিডব্লিউ।

আবিদ দারুণ খেলে সেঞ্চুরি তুলে নিলেও আরেক পাশে থিতু হওয়ার আগেই ফেরেন পাকিস্তানের দলনেতা বাবর। ৪৬ বল খেললেও ছিলেন একটু জড়সড়। ৪৫তম বলে চার মারার পর মেহেদী হাসান মিরাজের সোজা বল লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।

৭৮তম ওভারে তাইজুল ও উইকেটরক্ষক লিটন দাসের সমন্বয়ে ফের উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ দল। তৃতীয় বলটা টার্ন করে ভেতরে ঢুকছিল। বাঁহাতি ফাওয়াদ আলম ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন। বল তার গ্লাভস স্পর্শ করে পায়ে লেগে প্রথম স্লিপের দিকে যাচ্ছিল। লিটন বাঁদিকে সরে গিয়ে ঝাঁপিয়ে জমান চোখ ধাঁধানো ক্যাচ।

প্রথম সেশনের শেষ ডেলিভারিতে চার মেরে পাকিস্তানের সংগ্রহ দুইশ পার করান আবিদ। বিরতির পর খেলা শুরুর তৃতীয় ওভারে উইকেট আদায় করে নেন ইবাদত। এলবিডব্লিউ হয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান সাজঘরে ফেরেন ৩৮ বলে ৫ রান করে। এরপর প্রথম সেশনে টানা ১৬ ওভারের স্পেল করা তাইজুল আক্রমণে ফিরেই তুলে নেন আবিদের উইকেট। আগের বলেই জীবন পাওয়া এই ওপেনার থামেন ২৮২ বলে ১৩৩ রানে।

নিজের আগের ওভারে টানা আউটসুইং করা ইবাদতের ইনসুইংয়ে পরাস্ত হন রিজওয়ান। বল আঘাত করে তার পেছনের পায়ে। এতে ভাঙে পাকিস্তানের ৭৬ বলে ২৫ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। দুই ওভার পর আবিদের কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। অন্যপ্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনি। তাকে এলবিডাব্লিউ করে ফেরান তাইজুল। আবিদ রিভিউ নিলে দেখা যায়, বল লাগত লেগ স্টাম্পে। তার ম্যারাথন ইনিংসে ছিল ১২ চার ও ২ ছক্কা।

ঠিক আগের ডেলিভারিতে ফিরতে পারতেন চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া আবিদ। স্বভাবের বাইরে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সংযোগ ঠিক না হওয়ায় বল চলে যায় শর্ট লেগে। দুরূহ ক্যাচটা অনেক চেষ্টা করেও হাতে জমাতে পারেননি ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বি। প্রথম সেশনেও তাইজুলের বলে বেঁচে গিয়েছিলেন আবিদ। তখন ১১৩ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। স্লিপে তার ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

টানা চার-ছক্কা হাঁকিয়ে তাইজুলকে এলোমেলো করে দেওয়ার প্রয়াস ছিল হাসান আলির। কিন্তু অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে কাটা পড়েন তিনি। সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি উইকেটরক্ষক লিটন দাস। হাসানের ৮ বলের ছোট্ট ক্যামিওতে আসে ১২ রান। ঠিক পরের বলে বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে সাজিদ আলিকে এলবিডব্লিউ আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।

আঁটসাঁট বোলিংয়ে নজর কেড়ে নেওয়া ইবাদত নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন সাজিদকে বোল্ড করে। অফ স্টাম্প উপড়ে যায় তার। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউ থেকে রক্ষা না পাওয়া নুমান আলি হন তাইজুলের ষষ্ঠ শিকার। যদিও বোঝা যায়নি বল আগে তার ব্যাটে লেগেছে নাকি প্যাডে।

দশম উইকেটে ৭২ বলে ২৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের লিডটা আরেকটু বড় হতে দেননি ফাহিম আশরাফ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। এটি পাকিস্তানের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। ফাহিমকে ফিরিয়ে দলটিকে গুটিয়ে দেন তাইজুল। ৮০ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। শাহিন অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ১৩ রানে।

লেগ স্টাম্পে থাকা বল সুইপ করতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি ফাহিম। ব্যাটের নিচের কানায় লাগার পর বল আটকে যায় করিৎকর্মা লিটনের দুই পায়ের ফাঁকে। আম্পায়ার দেন ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্ত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(তৃতীয় দিনের চা বিরতি পর্যন্ত)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ১৪৫/০) ১১৫.৪ ওভারে ২৮৬ (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫, ফাহিম ৩৮, হাসান ১২, সাজিদ ৫, নুমান ৮, শাহিন ১৩*; রাহি ০/৪১, ইবাদত ২/৪৭, তাইজুল ১১৬/৭, মিরাজ ১/৬৮, মুমিনুল ০/১২)।

Comments

The Daily Star  | English

Be sincere to enhance agriculture production, alleviate poverty: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today stressed the need for cooperatives in every area throughout the country to boost agricultural production, alleviate poverty and create scope for micro-savings

15m ago