দেশ বিনির্মাণে নারীই আজকের আদর্শ

সমাজ নানাভাবে নারীদের চার দেয়ালের মধ্যে বা প্রথাগত লিঙ্গ ভূমিকার ভেতর বন্দি করে রাখার চেষ্টা করলেও অনেকেই সব বাধা ভেঙে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই সাহসী নারীরা দেখিয়ে দিয়েছেন, জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব।
ছবি: স্টার

সমাজ নানাভাবে নারীদের চার দেয়ালের মধ্যে বা প্রথাগত লিঙ্গ ভূমিকার ভেতর বন্দি করে রাখার চেষ্টা করলেও অনেকেই সব বাধা ভেঙে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই সাহসী নারীরা দেখিয়ে দিয়েছেন, জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব।

দ্য ডেইলি স্টার ও আইপিডিসির উদ্যোগে 'আনসাং উইমেন নেশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডসের' ষষ্ঠ পর্বে গত শুক্রবার এমন ৭ লড়াকু নারীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে দেখে আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করি, তাদের সাহস, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অবদান অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ৭ নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। নারীরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে বা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে যেসব বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, সেগুলো তুলে ধরেন তিনি।

নারীদের সক্ষমতা পুরুষের চেয়ে কম নয়, তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারসহ বিভিন্ন পেশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী নারীদের এক বড় সমর্থক।

পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত এই ৭ নারীর প্রত্যেকেই অনন্য সম্ভাবনাময়। তাদের একজন জন্ম থেকেই হাঁটতে, হাত নাড়াতে বা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বগুড়ার এক সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেছেন এক নারী। তার ফেসবুক পেজ 'রেইনবো'র মাধ্যমে তিনি শাড়ি, কুশন ও বেড কাভারের মতো হাতে কাজ করা পণ্য বিক্রি করেন, যা বর্তমানে ১৮টিরও বেশি দেশের মানুষ কিনছেন।

অপর নারী তার বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেছিলেন। তিনি এখন পাবনার চাটমোহর উপজেলার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। এ ছাড়া, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার এক নারী পেশাগত দিক থেকে দীর্ঘদিনের এক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তার স্বামী তাকে ও তাদের ২ সন্তানকে ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি কসাইয়ের কাজ শুরু করেন। পরে গ্রামে বাড়িও করেন তিনি।

নারীরা, এমনকি আমাদের সমাজে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা প্রতিবন্ধী নারীরাও অসংখ্য বাধার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও কী কী করতে সক্ষম তার মাত্র কয়েকটি উদাহরণ এগুলো।

এই নারীদের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। ভেবে দেখুন, যদি তাদের অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায়, তবে তারা আমাদের দেশকে কীভাবে বদলে দিতে পারেন।

পরিবার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকার—সবাইকেই তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। নারীদের, বিশেষ করে যারা প্রতিবন্ধী, তাদের ব্যক্তিগত ও একাডেমিকভাবে বিকশিত হওয়ার অবকাশ ও স্বাধীনতা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ কর্মজীবন বা ব্যবসা পরিচালনায় উপযুক্ত নীতিগত সমর্থনও প্রয়োজন তাদের।

Comments