ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার: আইনমন্ত্রীর অনুধাবন ইতিবাচক অগ্রগতি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যে আসলেই হয়েছে, ব্যাপকভাবে জানা এই সত্যটি স্বীকার করার জন্য আমরা আইনমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। মন্ত্রী এ কথা স্বীকার করার পাশাপাশি আরও উল্লেখ করেছেন, বিশ্বসেরা চর্চা অনুসরণ করে আইনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। স্টার ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যে আসলেই হয়েছে, ব্যাপকভাবে জানা এই সত্যটি স্বীকার করার জন্য আমরা আইনমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। মন্ত্রী এ কথা স্বীকার করার পাশাপাশি আরও উল্লেখ করেছেন, বিশ্বসেরা চর্চা অনুসরণ করে আইনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেছেন, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় না। কিন্তু যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল ১৯ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু চলতি বছরই মামলা দায়েরের পরপর এই আইনের অধীনে ১৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক সাংবাদিকও ছিলেন।

২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে ভিন্নমত ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য আইনটির ব্যাপক অপব্যবহার করা হয়েছে। আর্টিকেল ১৯ এর তথ্য অনুসারে, এই বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মোট ২২৫টি মামলা করা হয় এবং ৩২টি মামলায় ৬৮ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়। এই বছর এই সাংবাদিকদের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে কারাগারে পাঠানো হয়।

আর্টিকেল ১৯ এর তথ্য থেকে আরও জানা যায়, এই বছর দায়ের করা মামলাগুলোর ৮৩ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট এবং ব্যক্তির অনলাইন অভিব্যক্তিকে কেন্দ্র করে হয়েছে। 

তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আইনটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৪০ শতাংশ) ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি। এক তৃতীয়াংশ মামলা দায়ের করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। আর ৪০ শতাংশ মামলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগীদের সমালোচনা করার অভিযোগে।

মিডিয়া অপারেশন পুলিশিং, কনটেন্ট সেন্সর, সংবিধানে নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সদস্য, মানবাধিকার সংস্থাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এই নিপীড়নমূলক আইনটির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। এরপরও আইনটির বিতর্কিত ধারা, বিশেষ করে ধারা ২৫ ও ৩১ বাতিল করার জন্য সরকার এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

কেন এই আইনের ২টি ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই বছরের শুরুতে হাইকোর্ট রুল জারি করে সরকারকে তা ব্যাখ্যা করতে বলেন। বিতর্কিত ধারাগুলো কীভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, সম্পাদক পরিষদ অতীতে তা বহুবার বলেছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

এখন যেহেতু আইনমন্ত্রী আইনের অপব্যবহার ও ভুল ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন, সেহেতু আমরা আশা করি তিনি বহুল সমালোচিত ধারাগুলো বাতিলের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আইনের অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি পরিকল্পনাও সরকারকে অবশ্যই নিয়ে আসতে হবে। এই আইনে অবিলম্বে গ্রেপ্তার বন্ধ করার ক্ষেত্রে শুধু কথাই যথেষ্ট নয়। আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে এটি বলতে হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সারাদেশের থানাগুলোতে এই নির্দেশনা দিতে হবে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

4h ago