ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সবার সহযোগিতা চাইলেন শাওন

দেশে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার কাজে সবার সহযোগিতা চাইলেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
Humayun Ahmed
১৯ জুলাই গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের সমাধিতে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা। ছবি: স্টার

দেশে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার কাজে সবার সহযোগিতা চাইলেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

তিনি বলেন, “ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হুমায়ূন আহমেদের যে বড় স্বপ্ন ছিল সে স্বপ্ন আমার একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এদেশের গুণীজন, নীতি-নির্ধারক যাঁরা রয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের পাঠক, ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, দর্শক যাঁরা রয়েছেন এ কাজে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

ছেলে নিষাদ, নিনিতকে সঙ্গে নিয়ে আজ (১৯ জুলাই) বেলা পৌনে ১২টায় গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মেহের আফরোজ শাওন।

তিনি বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের ডাকে সকল ভক্ত-অনুরক্তরা যেভাবে এগিয়ে আসেন আমার ডাকে তাঁরা সেভাবে এগিয়ে আসবেন না। তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে অংশ নিতে হবে। আমি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। এজন্য হুমায়ূন আহমেদের প্রতি ভালবাসার টানে সবাই ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসলেই তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আর আমি তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবসময়ই থাকব, আজীবন চেষ্টা করে যাব।”

নুহাশ পল্লীকে হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে প্রিয় স্থান হিসেবে উল্লেখ করে অভিনেত্রী শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ সবুজকে যেভাবে ভালবাসতেন সেভাবেই নুহাশ পল্লীকে সাজানো গোছানো রয়েছে। সবুজ গাছের ছায়ায় তিনি শুয়ে আছেন। নেত্রকোণায় তাঁর যে স্কুলটি রয়েছে সেটির জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফল শতভাগ ভালো। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়েছে। এ দুটি স্বপ্ন তাঁর ভালোভাবেই বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে।”

শাওন গভীরভাবে অনুরোধ করে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের এ স্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরের বিভিন্ন সময়ে হুমায়ূন আহমেদের অগণিত দর্শক নুহাশ পল্লীতে যাতায়াত করেন। নুহাশ পল্লীর যাতায়াতের রাস্তাটি গত তিন বছর যাবত মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করতে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকসহ সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।

শাওনের সঙ্গে তাঁর বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, মা জহুরা আলী, ছেলে নিষাদ, নিনিত ও নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় সড়কঘাট হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হুমায়ূন আহমেদের ছোট বোন সুফিয়া হায়দার। এসময় তাঁর পরিবারের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টায় গাজীপুরের হুমায়ূন ভক্তরা তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকায় হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর

হুমায়ুন আহমেদের ছোট বোন সুফিয়া হায়দার বলেন, ঢাকার পল্লবীতে হুমায়ূন আহমেদের যে দোতলা বাড়ি রয়েছে সেখানে হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর করা হবে। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের ভাই ড. জাফর ইকবাল চিকুনগুনিয়া রোগে অসুস্থ এবং অপর ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বাইপাস সার্জারি কারণে তাঁর সমাধিতে আসতে পারেননি।

গাজীপুরের হিমু পরিবহনের প্রধান সমন্বয়কারী নাসরিন সুলতানা বেবী বলেন, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহে ৫০০ বনজ, ফলজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এছাড়াও, হিমু পরিবহনের পক্ষ থেকে কোরআন খতম চলছে। ক্যান্সার সচেতনতায় সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। নেত্রকোণায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশ পল্লীতে শোক বইতে দর্শনার্থীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। আগামী তিনদিন এ কর্মসূচি চলবে।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কমপক্ষে ৬০০ লোকের আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়েছে। এতিম শিশু ছাড়াও হিমু পরিবারের ৯০ জন হিমু, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অতিথি, এলাকার লোকজন ও হুমায়ূন স্যারের পরিবারের লোকজন সকাল ১১টার মধ্যে চলে আসেন।

জনপ্রিয় এ লেখক ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি।

হুমায়ুন আহমেদের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে “নন্দিত নরকে”, “লীলাবতী”, “শঙ্খনীল কারাগার”, “গৌরীপুর জংশন”, “নৃপতি”, “বহুব্রীহি”, “দারুচিনি দ্বীপ”, “শুভ্র”, “নক্ষত্রের রাত”, “শ্রাবণ মেঘের দিন”, “জোছনা, জননীর গল্প” প্রভৃতি। তিনি শুধু সাহিত্যই রচনা করেননি। নাটক ও সিনেমায় ছিলো তাঁর অসামান্য অবদান। তাঁর প্রথম টিভি নাটক “এইসব দিনরাত্রি” ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

3h ago