‘নিউজিল্যান্ড-বিলেতে হলে চেয়ারে বসে চা খেতে খেতেই নির্বাচন শেষ করে ফেলতাম’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেছেন, তাকে নিউজিল্যান্ড কিংবা বিলেতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে দেওয়া হলে তিনি চেয়ারে বসে চা খেতে খেতেই নির্বাচন শেষ করে ফেলতে পারতেন।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার সাভারে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম-২০২২ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, 'পৃথিবীর অনেক দেশেই নির্বাচন, ভোটাধিকার প্রয়োগ হয়। আপনারাও জানেন আমারও জানি, সেখানে কোনো সহিংসতা হয় না। সেখানে সবাই লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকে এবং সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।'
'আমি সহকর্মীদের বলেছিলাম, আমাকে যদি নিউজিল্যান্ড কিংবা বিলেতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে দেওয়া হতো, তাহলে আমি চেয়ারে বসে চা খেতে খেতেই নির্বাচন শেষ করে ফেলতে পারতাম। আমাকে কোনো প্রকার স্ট্রেস নিতে হতো না, আমার প্রেসারও বাড়তো না। বাংলাদেশের যে জিনিসটা, নির্বাচনের সময় আমাদের স্ট্রেস করে ফেলে। আমাদের সতর্ক থাকতে হয়', বলেন তিনি।
কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, 'নির্বাচন কমিশন এককভাবে কখনোই একটি নির্বাচন সফল করতে পারে না, পারবে না। এখানে যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আছে, যেমন: পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।'
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'মুজিববর্ষের অঙ্গীকার রক্ষা করব ভোটাধিকার। এখানে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় ভোটাধিকার প্রয়োগটাই। এখানে আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন লাগবে। কাল আমি একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম, আমাদের ভোটে অনেক সহিংসতা হয়। আমরা চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু অনেক সময় ভোটে অনেক বড় ধরনের সহিংসতা হয়। মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একজন লেখক বলছিলেন, এটা আমাদের নির্বাচনের সংকট নয়, এটা আমাদের সাংস্কৃতিক সংকট।'
'আমাদের সংস্কৃতিতে কীভাবে যেন গড়ে উঠেছে নির্বাচনের সময় সহিংসতা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আমাদের বেদনাহত, মর্মাহত করে। আমাদের এই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে, হয়তো একটু সময় লাগবে', যোগ করেন তিনি।
সিইসি বলেন, 'ভোটাধিকার প্রয়োগের সময় ভোটাররা যদি সচেতন হন, ভোটাররা যদি প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেন, একজন ভোটার যদি ভোট দিতে না পারেন, বাধাগ্রস্ত হন, তিনি যদি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন, তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগ অনেক বেশি সহজ হবে। এজন্য আমাদের (ভোটার) মনস্তাত্ত্বিক শক্তিও অর্জন করতে হবে।'
খুব শিগগির বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের জন্য আহ্বান করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা কাজ করে যাচ্ছি, অনেকগুলো কাজ আমাদের হাতে রয়েছে। আজকে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হলো। এমন আরও অনেক কাজ রয়েছে। অচিরেই বিএনপিসহ সব দলকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানানো হবে। এটা আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই হবে।'
ইভিএমের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর প্রশ্নে সিইসি বলেন, 'ইভিএমের সক্ষমতা কতটুকু দরকার এবং ইভিএম নিয়ে আরও কিছু সভা-সেমিনার করব। তারপর আমরা ইভিএম সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চিন্তা করব। এই মুহূর্তে আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।'
ইভিএমে ৩০০ আসনে নির্বাচন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন বলা সম্ভব নয়। তবে সামনে আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যাবে। এ ছাড়া, নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেওয়া হবে।'
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে সাভার উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা শেষে বাইরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিইসি।
পরে তিনি সাভার পৌর এলাকার এক বাড়িতে গিয়ে প্রথম হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীদের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'যেহেতু বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে, সে ক্ষেত্রে কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীরা বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে পারেন। সে জন্য যেই এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে, ওই এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে জনগণকে সচেতন করতে ভূমিকা পালন করতে হবে।'
সচিব আরও বলেন, 'সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে। এই হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকা দিয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'
অনুষ্ঠানে সাভার উপজেলায় অধিক জনসংখ্যার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোগান্তি কমাতে অধিক জনবল নিয়োগের আহ্বান জানান সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণি।
এসময় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
Comments