খণ্ডে খণ্ডে হাসান উন্মোচন

তার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে অসংখ্যবার। তরুণ বয়সে ছিলাম তার অন্ধ ভক্ত। তার সব লেখা, সব কাজ, সব কথাই ছিল আমার কাছে অমোঘ সত্যের মতো। পরবর্তীতে তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন তার নানান কথা বা কাজ নিয়ে প্রশ্ন করার। তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণেরও।

তার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে অসংখ্যবার। তরুণ বয়সে ছিলাম তার অন্ধ ভক্ত। তার সব লেখা, সব কাজ, সব কথাই ছিল আমার কাছে অমোঘ সত্যের মতো। পরবর্তীতে তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন তার নানান কথা বা কাজ নিয়ে প্রশ্ন করার। তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণেরও।

কখনো কখনো আমি আক্রমণাত্মক কথাও বলেছি। তিনি অধৈর্য না হয়ে আমাকে নিজের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এই খণ্ড কথাবার্তা বুঝতে সাহায্য করবে তার শেষ জীবনের অবস্থানকে। এই কথাগুলো হয়েছিল ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে।

নির্বাচনের পরে এক পত্রিকায় দেখা গেল আপনি একটি ছোট্ট লেখায় বলেছেন যে, 'নির্বাচন ভালো হয়েছে।' আমি মনে করি আপনি যে কোনো মার্কাকে সমর্থন দিতে পারেন, এর সপক্ষে ভোট চাইতে পারেন, সেই মার্কায় ভোট দিতে পারেন। বাস্তব অবস্থার কারণে চিন্তার অনেক দূরত্ব সত্ত্বেও আপনি একটি দলকে সমর্থন করতে পারেন। কিন্তু, এমন একটি নির্বাচনকে হাসান আজিজুল হক 'ভালো নির্বাচন' বলেন কীভাবে?

তিনি মাথা নাড়ালেন প্রবল বেগে। বললেন, 'তোমরা আমার থট প্রসেস এবং সেনটেন্স মেকিং সম্পর্কে জানো। তুমি তো জানোই। এই রকম ভাষায় কি আমি কোনো কথা বলি? আমি বলেছিলাম যে বাংলাদেশে তো নির্বাচন জিনিসটাই অনিশ্চিত এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে যেমনই হোক, একটি নির্বাচন তো হয়েছে! সেটাই ভালো। এখন বলতে পারবে যে তারা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এসেছে।'

প্রতিবাদ তো জানাননি আপনি।

একটু অসহায় ভঙ্গিতে বললেন, 'সারাদিন ওইসব করতে গেলে আমি লিখব কখন? নিজের কাজ করব কখন? তুমি জানো যে ওগুলো আমার লেখা নয়। ফোনে আমি কথা বলি, তারা লিখে নেয়। তারপর ছেপে দেয়। প্রথাগত একজন সংবাদকর্মী, যে আমার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত নয়, সে যে আমার ভাষ্যকে ঠিকমতো উপস্থাপন করতে পারবে না, সেই ভয় কিছুটা থেকেই যায়।'

ছাপার আগে আপনাকে একবার পড়ে শোনানোর কথা বলতে পারতেন?

তিনি স্বীকার করলেন। তবে উত্তরে সেই একই কথা বললেন ঘুরিয়ে, 'তা পারতাম। কিন্তু ওই যে বললাম, বেশি সময় সেদিকে ব্যয় করতে চাই না।'

২০১৪ পরবর্তী আমল সম্পর্কে আপনি সেই লেখাতেই বলেছেন, মানে আপনার ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, 'মানুষের ওপর কোনো অত্যাচার হয়নি, দেশের উন্নয়ন হয়েছে, তাই মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।' আসলেই কি মানুষ অত্যাচারিত হয়নি? দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম, খুন, চাঁদাবাজি, ব্যাংকের বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ—এসব হয়নি?'

তিনি স্বীকার করলেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে এসব ঘটেছে। আরও অনেক অপকর্ম হয়েছে। তবে ওই প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হচ্ছে, 'আমি বলতে চেয়েছিলাম বাংলা ভাই বা জামাত-শিবিরের সেই নির্মম অত্যাচারের দিনগুলো সম্পর্কে। সেই সময়টিতে তুমিও তো এখানেই থেকেছ। মনে আছে নিশ্চয়ই কী আতংকের চাদরে ঢাকা ছিল সমস্ত জনপদ। প্রগতিশীলতাকে সমূলে উৎপাটিত করার কী একপাক্ষিক আগ্রাসন! মানুষকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখছে, লাশটিকে নামানোর সাহস পর্যন্ত নেই কারো। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে একটি বন্দিশালায়। অমন হিংস্রতা থেকে তো আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। এটি একা আওয়ামী লীগ করেনি। বামপন্থি এবং উদার মনোভাবাপন্ন সব মানুষ সঙ্গে ছিল। তারাই সরকার গঠন করেছিল একসঙ্গে।'

সরকারের অংশ হিসেবে বামপন্থিদের কয়েকটি দলের কাজ দেখে আপনার কী মনে হয়? তারা কি কোনো কাজে এই সরকারকে বাধ্য করতে পেরেছে?

তিনি হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন, 'কই, তেমন কিছুই তো চোখে পড়ে না। ভার্সিটির গেইটে শহীদ ড. জোহার একটি ভাস্কর্য করার কথা ছিল। কিন্তু বলে যে, একনেকের সভাতে পাশ হয়নি।'

'সরকারের মধ্যেও তো তাদের সাফল্য বলতে প্রায় কিছুই নেই। সংসদে থেকেও তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কাজটিকে ত্বরান্বিত করতে পারেনি, সুন্দরবন রক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগকে নমনীয় করতে পারেনি। তাহলে তারা ১০ বছরে করলে কী? নিজেদের কিছু লোকজনকে চাকরি দিয়েছেন, কাউকে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে পেরেছেন, আর নিজেরা পতাকা ওড়ানো গাড়িতে চড়তে পেরেছেন—এর বেশি তো কিছু নয়। বামপন্থিদের ওপর আমার এখন কোনো ভরসা অবশিষ্ট নেই।'

আমি নিজেও এই ধরনের কথায় অস্বস্তি বোধ করছিলাম। বললাম, তাহলে কি আপনার ভরসা এখন আওয়ামী লীগের ওপর?

আপনার সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন উঠছে অনেকদিন ধরেই। যেমন ধরুন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আপনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর' করা।

তিনিও একটু অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন। বললেন, 'বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর পদটি সরকার বা আওয়ামী লীগ দেয় না। দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ। আমাকেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারাই। এবং সেখানে সব কাজ যে বঙ্গবন্ধু বিষয়েই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেমন সেই ২ বছরে আমি মূলত কাজ করেছি "ভাষার শক্তি" বিষয়টি নিয়ে। সেখানে আমি থাকার সময় ৩টি সেমিনার হয়েছিল। সবগুলোরই কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল ভাষা। আমাকে কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে বাধ্য করেনি, বক্তৃতা দিতে বাধ্য করেনি। আমার মার্কসবাদী পরিচয় নিয়েও কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি কখনো।'

আমার মন তার কথাগুলো আংশিক মানছিল। আবার মেনে নিতেও পারছিল না। বললাম, আপনি নিজেই বললেন যে বামপন্থিদের ওপর আপনার আস্থা নেই। এখন আবার নিজের মার্কসবাদী পরিচয়ের কথা বলছেন। মার্কসবাদে কি আপনার অটল আস্থা?

তিনি আমার কণ্ঠের গোপন শ্লেষকে উপেক্ষা করে বললেন, 'মার্কসবাদী হিসেবে আমার সুবিধা হচ্ছে মার্কস নিজেই আমাকে তার সঙ্গে অনেক বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার দিয়ে গেছেন। সমাজের সত্যকে, সমাজের বিকাশের নিয়মগুলোকে এবং ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে মার্কস প্রদর্শিত পথটি একটি ভালো পথ, একমাত্র পথ নয়। এই পথ ধরে চলতে গেলে মার্কসের অনেক সিদ্ধান্তই বাতিল বলে গণ্য করতে হতে পারে। কারণ মার্কসবাদী পদ্ধতিই বলে দিচ্ছে যে মার্কসের অনেক সিদ্ধান্ত এবং অনুমানই যথার্থ নয়। মার্কসবাদকে আমাদের এখানে প্রায় ধর্মবিশ্বাসের মতো পালন করা হয়েছে। ফলে অনেকেই শেষ পর্যন্ত চোরাগলিতে গিয়ে ঠেকেছে।'

'যেমন ধরো শ্রেণির কথা। শ্রেণি সংগ্রাম সত্য। রাষ্ট্রে মানুষকে শ্রেণিগতভাবে ভাগ করা যায়। কিন্তু শ্রেণির মধ্যেও সব মানুষ এক না। বলা চলে, কোনো মানুষই আরেক মানুষের মতো না। কারণ, ব্যক্তি বলে একটি কথা বিবেচনা করতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তি আলাদা, ইউনিক। শ্রেণিগতভাবে একটা প্রকোষ্ঠে ঢুকিয়ে ব্যক্তিকে কেবলমাত্র শ্রেণির অংশ বলে চালানো যায় না। তার ব্যক্তিসত্তার স্বীকৃতিটাও দিতে হবে।'

আমি সন্তুষ্ট হই না তার ব্যাখ্যায়। বলি, তাহলে আপনি বর্তমান বাস্তবতার কারণে আওয়ামী লীগের কাছাকাছি এসেছেন?

তিনি বললেন, 'কথাটা উল্টোভাবে বলতে হবে তোমাকে। জামায়াত-বিএনপি থেকে দূরত্ব অগম্য করে নিয়েছি। আগেও তা-ই ছিল। একটি রাষ্ট্রে তোমাকে বসবাস করতে হয়। সেই রাষ্ট্রের পরিচালনায় যখন তোমার পছন্দের দল আসতে পারছে না, এমনকি তাদের আসার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না, তখন তোমাকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জামায়াত তো স্বাধীনতা বা একাত্তরকে স্বীকারই করে না। আর বিএনপি সেই জামায়াতকে প্রশ্রয়-আশ্রয় জুগিয়ে এসেছে বছরের পর বছর। তাদেরকে তাণ্ডব চালাতে দিয়েছে। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।'

তাকে থামিয়ে যোগ করি, স্বাধীনতার ইতিহাস আরেকভাবে বিকৃত করার চেষ্টা তো আওয়ামী লীগও করছে। তাদের বুদ্ধিজীবী, তাদের দলের নেতা, তাদের লেখকরা দেখাতে চাইছে যে মুক্তিযুদ্ধ এককভাবে আওয়ামী লীগের অর্জন। আর কারো অবদান তাতে নেই।

উত্তরে তিনি নিঃসংশয়ে মাথা নেড়ে বললেন, 'এটাও টিকবে না। আওয়ামী লীগ বা শেখ মুজিব একা চাইলেই তো আর মুক্তিযুদ্ধে জেতা সম্ভব ছিল না। অল্প কিছু বাদ দিলে সব মানুষের অংশগ্রহণ ছিল তাতে। এখনকার অবস্থা দেখে সেই সময়ের বামপন্থিদের শক্তি সম্পর্কে আন্দাজ করা যাবে না। তারা ছিল বিরাট শক্তি। কিছু গ্রুপ বিভ্রান্ত ছিল বটে। কিন্তু, সার্বিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে বামদের অংশগ্রহণ বিশাল। কেউ চাইলেই সেটি মুছে ফেলতে পারবে না। প্রবাসী সরকারে মওলানা ভাসানী, মণি সিংহ, মোজাফফর আহমদরা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তা কি উপেক্ষা করা যাবে? বামপন্থি দলগুলো আলাদা আলাদা গেরিলা বাহিনী তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে গেছে, সেসব তো ইতিহাসের অমোচনীয় অংশ। সরকার তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা দিক আর না দিক, তা দিয়ে তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ মিথ্যে হয়ে যাবে না। এ ছাড়া নামহীন-দলহীন লাখো মানুষ নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। কেউ শহীদ হয়েছেন, কেউ আহত হয়েছেন, তারপর দেশ স্বাধীন হলে কোনো স্বীকৃতি বা সনদপত্রের ধার না ধরে চলে গেছেন নিজ কাজের ক্ষেত্রে।'

হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে যত কথাই হোক, আসল কথা তো হবে সাহিত্য নিয়ে। সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই তো আমি এবং আরও অসংখ্য তরুণ তার সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। তাই জিজ্ঞেস করি বড় লেখকের বৈশিষ্ট্য কী কী হতে পারে?

এবার অস্বস্তির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। মাছ যেন অনেকক্ষণ ডাঙায় থেকে এবার পানিতে নামার সুযোগ পেয়েছে। বলতে শুরু করলেন, 'আমরা যে স্যুররিয়ালিজম, ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়ে চ্যাঁচামেচি করি, সেসব নিয়ে ইউরোপে কেউ মাথা ঘামায়? যারা নিজেরা ম্যাজিক রিয়ালিজমের লেখক তারা নিজেরাই কি তা নিয়ে মাথা ঘামায়? তারা আসলে মাথা ঘামায় নিজেদের নিয়ে। সেটাই ম্যাজিক রিয়ালিজম হয়ে বেরিয়ে আসে অথবা সমালোচকদের দেওয়া অন্য কোনো নাম নিয়ে বেরিয়ে আসে। অস্ট্রিয়ান যে নারী সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কার পেলেন, তার মধ্যে অস্ট্রিয়া ছাড়া, নিজের দেশ ছাড়া আর কিছু নেই। তারা যে বড় লেখক হয়ে ওঠেন তা এই জন্যই। নিজেকে নিজের দেশ এবং মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন না করে ফেলার জন্যই। আফ্রিকার লেখা পড়লেও সেটা বোঝা যায়। হয়তো তারা লিখছেন অন্য ভাষায়, কেউ ইংরেজিতে, কেউ ফরাসিতে—কিন্তু লিখছেন একেবারে ঠিক নিজেদের কথাই।'

চিনুয়া আচেবের গল্পের কথা মনে করিয়ে দেন হাসান আজিজুল হক। 'আফ্রিকার জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য ছিল, কেউ একা একা নিজের জন্য কিছু না করা। একা কিছু না করা। কেউ একার জন্য বাঁচে না সেখানে। গ্রামের লোকেরা সবাই মিলে খরচ দিয়ে একটি ছেলেকে ইংল্যান্ডের শহরে পাঠাল ব্যারিস্টার হয়ে আসার জন্য। কিন্তু ব্যারিস্টার হয়ে ফেরত আসার পরে সে আর গ্রামে থাকতে পারে না। কারণ গ্রামে তো আর প্র্যাকটিস হয় না। তখন সে চলে গেল শহরে। ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়ার সময় তার বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়নি নিজের জীবনধারার সঙ্গে। বিচ্ছিন্নতা তৈরি হলো এবার নিজ দেশে ফিরে এসে। যে-ই তথাকথিত উন্নতি এলো, সঙ্গে এলো বিচ্ছিন্নতা। এটা এমনভাবে ধরতে পারেন বলেই চিনুয়া আচেবে বড় লেখক, মৌলিক লেখক। কত রকমের ফেনিল উচ্ছ্বাস এবং আলোড়ন যে আসে আমাদের দেশে! একটু অসতর্ক হলেই বা ভিত্তিতে দুর্বলতা থাকলেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নিজস্ব চিন্তাধারাকে। কত রকমের হুলস্থূলই না আমদানি হয় সাহিত্যের জগতে। শিল্পের জন্য শিল্প, নন্দনতাত্ত্বিক শিল্প, ব্যক্তিকেন্দ্রিক রচনা, আধুনিক মানুষের যুগযন্ত্রণা, উত্তর-আধুনিকতা, জাদু-বাস্তবতা, নাগরিক শিল্প—কত নামে বিভ্রান্তি আসে। সেইসব স্রোতে গা না ভাসালে অভিধা জোটে "যথেষ্ট আধুনিক লেখক নন" বলে। নিজের লেখক জীবনের শুরু থেকেই এই রকম মন্তব্য শুনতে হয়েছে আমাকে, শওকত আলিকেও। কিন্তু আমাকে কেউ "যথেষ্ট আধুনিক" না বললে কিংবা "আঞ্চলিক" বললে আমি মোটেও ঘাবড়ে যাই না। কারণ, সেভাবে দেখতে গেলে সব লেখাই আঞ্চলিক। ল্যাটিন আমেরিকার সমস্ত লেখাই ওই অর্থে আঞ্চলিক।'

'পৃথিবীর সব বড় লেখকদের মধ্য থেকে সাধারণ যে প্রবণতাটি আবিষ্কার করা যায়, সেটাও সেই কথার সপক্ষেই দাঁড়ায়। নিজের সেই পাঠ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রামিদ্যা অনন্ত তোয়ের, হোসে সারামাগা, সালমান রুশদী, অনিতা দেশাই, অরুন্ধতী রায়, ল্যাটিন আমেরিকার সমস্ত বড় লেখকের একটাই ধ্রুব আছে, তা হলো সময়, সমাজ, মানুষ। আমাদের ভাষার যারা বড় লেখক, সে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে অমিয়ভূষণ মজুমদার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পর্যন্ত, তাদের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।'

এই তো আসল এবং অকৃত্রিম হাসান আজিজুল হক।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in December

Project deadline extended by 2 years, but authorities hope to complete grid line work before scheduled commissioning

10h ago