লালমনিরহাটে ধ্বংসপ্রায় ঐহিত্যবাহী নাট্যমঞ্চ সংরক্ষণের দাবি

বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এক সময় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। প্রায় শতবর্ষী এই স্থাপনাটি ধীরে ধীরে হারিয়েছে জৌলুস। হারিয়েছে আসবাবপত্র, দরজা-জানালা, এমনকি মাথার ওপরে টিনের চালও। এ দুরবস্থা রেলওয়ে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউটের। জনসাধারণের কাছে এটি নাট্যমঞ্চ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
রেলওয়ে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট। ছবি: এস দিলীপ রায়

বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এক সময় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। প্রায় শতবর্ষী এই স্থাপনাটি ধীরে ধীরে হারিয়েছে জৌলুস। হারিয়েছে আসবাবপত্র, দরজা-জানালা, এমনকি মাথার ওপরে টিনের চালও। এ দুরবস্থা রেলওয়ে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউটের। জনসাধারণের কাছে এটি নাট্যমঞ্চ হিসেবেই বেশি পরিচিত।

ছবি: এস দিলীপ রায়

এটি রক্ষা ও সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া থাকলেও তা না করে একে আরও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ লালমনিরহাটের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মী ও সুধীজনদের।

এই ইনস্টিটিউটের চত্বরে গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিবেশ থিয়েটার আয়োজিত 'লালমনি ৭১' নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইনস্টিটিউটের লোহার পাতগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

ছবি: এস দিলীপ রায়

রেলওয়ে ফিডারম্যান বকুল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কর্তৃপক্ষের আদেশে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউটের লোহার পাতগুলো খোলা হয়েছে। 'কর্তৃপক্ষ আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবে কাজ করছি,' যোগ করেন তিনি।

১৯৩৪ সালে তৎকালীন রেলওয়ের ২ একরের বেশি জমির ওপর নির্মিত হয় এই ইনস্টিটিউট। এখানে ছিল ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ। এটি হয়ে উঠেছিল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র। এক সময় এখানে নিয়মিত আসতেন দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের কবি-সাহিত্যিক ও নাট্য ব্যক্তিত্বরা। আসতেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও।

লালমনিরহাট শহরের ফায়ার সার্ভিস রোডে রেলওয়ে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট ছিল সুধীমহলের আড্ডাস্থল। স্বাধীনতার পরও কিছুকাল পর্যন্ত এই ইনস্টিটিউট সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কালের বিবর্তনে হারাতে শুরু করে ঐতিহ্য। তবে ১০ বছর আগেও এই ঐতিহ্যবাহী নাট্যমঞ্চটির অবস্থা এত করুণ ছিল না।

সাংস্কৃতিক কর্মীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস ধ্বংস হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই নাট্যমঞ্চটি। চুরি হয়ে গেছে জিনিসপত্র। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা নাট্যমঞ্চটির জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। একাধিকবার ইজারা নেওয়ার অজুহাতে জায়গা দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মী ও সুধীজনের আন্দোলন তা সম্ভব হয়নি।

২০১৭ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ জমিটি দখলে নিতে জোর তৎপরতা চালানো হয়েছিল। সেসময় আন্দোলনের মাধ্যমে তা বানচাল করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী নাট্যমঞ্চটি রক্ষার দাবি করে আসছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, আরণ্যক নাট্যদলসহ জাতীয় ও স্থানীয় সংগঠনগুলো।

লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মী ও সুধীমহলের দাবির কারণে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে লালমনিরহাটে আসা তৎকালীন রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ের জিএম মাসে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো সংরক্ষণ করা হবে।'

'তারা রেলওয়ে এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট সংরক্ষণ ও আগের নকশায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নাট্যমঞ্চটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, আজো সেই প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন নেই। উল্টো এটি ধ্বংস করতে রেল কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হয়ে উঠেছেন।'

লালমনিরহাট রেল বিভাগের সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু ইনস্টিটিউটের বাইরে লোহার পাতগুলো চুরি হচ্ছে সেজন্য সেগুলো খুলে আনা হচ্ছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে এখনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'শুনেছি, এমটি হোসেন ইনস্টিটিউটকে পূর্বের নকশায় সচল করা হবে।'

লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। কোনো ভূমিদস্যু যাতে ইনস্টিটিউটটের জায়গা দখলে নিতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ আছি।'

Comments

The Daily Star  | English
IMF calls for smaller budget

IMF suggests raising power, gas and fertiliser prices

The International Monetary Fund yesterday recommended reducing government subsidies by hiking prices of power, gas and fertiliser, and spending the saved money on society safety net programmes.

16h ago