জার্মানি ও বেলজিয়ামে আকস্মিক বন্যায় ৯২ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ
পশ্চিম জার্মানি ও বেলজিয়ামে আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ৯২ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। খালবিল ও রাস্তাগুলোতে জমে থাকা পানির প্রবল স্রোতে অনেক গাড়ি ভেসে গেছে এবং বাড়িঘর ধসে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ নেদারল্যান্ডসেও আঘাত হেনেছে বন্যা।
ওয়াশিংটন ডিসিতে সফররত জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বন্যার ভয়াবহতায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘যারা এই দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদের জন্য শোক প্রকাশ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা এখনো প্রকৃত সংখ্যাটি জানি না। তবে, সংখ্যাটি অনেক বেশি হবে।’
জার্মান সংবাদসংস্থা এআরডি’র বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভয়াবহ বন্যায় শুক্রবার পর্যন্ত জার্মানির পশ্চিম অংশে অন্তত ৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যেটি বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা।
কোলোনের দক্ষিণে অবস্থিত আরওয়েইলার জেলায় প্রায় এক হাজার ৩০০ মানুষ নিখোঁজ আছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন জেলা সরকারের প্রতিনিধি। বন্যা কবলিত কিছু এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কাজ করছে না এবং অনেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
উত্তরের রাইন-ওয়েস্টফ্যালিয়া ও রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেইট রাজ্যের অনেক শহর ও গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বাসিন্দারা এ মুহূর্তে মানবেতর অবস্থায় আছেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে আছে জার্মান গ্রাম শুল্ড, যেখানে অসংখ্য বাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং অনেক মানুষ নিখোঁজ আছেন।
অনেক জায়গায় রাস্তায় দালান ধসে পড়ে চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও, ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়েছে অনেক জায়গায়। এসবই উদ্ধার কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করছে।
গ্রামের পুরনো ধাঁচের ইট ও কাঠের তৈরি বাড়িগুলো হঠাৎ করে আসা পানির স্রোতের মুখে টিকতে পারেনি। পানির সঙ্গে বড় বড় গাছ ও ইট পাথরের টুকরো ভেসে এসে বাড়িগুলোতে আঘাত করেছে।
শুল্ড গ্রামের অনেক মানুষকে তাদের বাড়ির ছাদ থেকে রাবারের ডিঙ্গি নৌকা ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার কাজে সাহায্য করার জন শত শত সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বেলজিয়ামে বন্যায় হতাহতের সংখ্যা ১১ জন।
লিশ অঙ্গরাজ্যের কাছে ভেসড্রে নদীতে পানি উপচে পেপিনস্টার শহরের সব রাস্তা তলিয়ে গেছে। সেখানে দমকল বাহিনীর উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার সময় রাবারের নৌকা উল্টে তিন জন নিখোঁজ হন।
মেয়র ফিলিপ গোডিন কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে জানান, ‘দুঃখজনকভাবে তারা খুব দ্রুত পানিতে তলিয়ে যান। আমি আশঙ্কা করছি তারা মারা গেছেন।’
দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের অনেক জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে এবং রেল যোগাযোগ স্থগিত আছে।
নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার ও রাণী ম্যাক্সিমা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহর ভ্যাল্কেনবার্গের বাসিন্দা ও জরুরি সেবাদাতাদের প্রতি সব ধরণের সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার সে অঞ্চলটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
বন্যার আশংকায় ইতোমধ্যে মাসট্রিখট শহর এবং মিউস নদীর আশপাশের অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি ছেড়ে দুর্যোগ কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Comments