২ মন্ত্রণালয়ের মতভেদে কপিরাইট দপ্তর গঠনে অচলাবস্থা

শিল্প এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মতভেদের কারণে একটি সমন্বিত ও স্বাধীন কপিরাইট দপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অচলাবস্থায় রয়েছে। গঠিত হলে এই দপ্তর কপিরাইট, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক সনদ দেওয়ার দায়িত্ব পাওয়ার কথা।

শিল্প এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মতভেদের কারণে একটি সমন্বিত ও স্বাধীন কপিরাইট দপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অচলাবস্থায় রয়েছে। গঠিত হলে এই দপ্তর কপিরাইট, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক সনদ দেওয়ার দায়িত্ব পাওয়ার কথা।

বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট অফিস কপিরাইট সনদ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) অন্যান্য সেবা দিয়ে থাকে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত কপিরাইট অফিস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। ২০০০ সালে কপিরাইট আইন প্রণয়ন হওয়ার পর থেকে এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে।

অপরদিকে, ব্রিটিশ আমলের 'পেটেন্ট' ও 'ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি' অফিসকে সমন্বিত করে ২০০৩ সালে ডিপিডিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে ডিপিডিটির কার্যালয় মতিঝিলে।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুটি অফিসকে একীভূত করার নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় তিনি আবারও এই নির্দেশনার কথা জানান।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর তৎকালীন মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সমন্বিত আইপি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি) অফিস গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বেশ কয়েক দফা আলোচনা ও বৈঠকের পরেও এই উদ্যোগ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এরপর কর্মকর্তারা একটি সমন্বিত সফটওয়্যার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন, যার মাধ্যমে এই ২ অধিদপ্তর একত্রে কাজ করতে পারবে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান।

গত ৪ আগস্ট মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা সমন্বিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুধুমাত্র তথ্য আদান-প্রদান করবেন। এই বৈঠকে শিল্প, সংস্কৃতি বিষয়ক এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, 'আমরা আবারও কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে ২১ অক্টোবর বৈঠক করি। এই বৈঠকে ডিপিডিটি, কপিরাইট অফিস এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।'

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবাই ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেই কার্যক্রম চালানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল করবে নাকি ১ মন্ত্রণালয় করবে, সেটা বিষয় নয়। যিনি এই সেবাটা নেবেন, তাকে এ জন্য কতগুলো জায়গায় যেতে হচ্ছে, সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি আরও বলেন, 'বেশিরভাগ দেশে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির জন্য সমন্বিত দপ্তর থাকে। যেখান থেকে মানুষ "ওয়ান স্টপ সেন্টার"র মতো সব সেবা পান। দীর্ঘদিন ধরে আমরা মানুষের এই দুর্ভোগ কমানোর জন্য একটি একীভূত আইপি অফিসের দাবি জানিয়ে আসছি।'

'তবে ২ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রশি টানাটানির কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বাস্তবায়ন হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

মন্ত্রী জানান, তিনি যখন তার 'বিজয় সফটওয়্যারের' জন্য কপিরাইট ও পেটেন্টের আবেদন করেন তখন বিভিন্ন ধরণের ঝামেলার মুখোমুখি হন।

'যদি কারো কপিরাইটের প্রয়োজন হয়, তাহলে একইসঙ্গে তার পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক এবং ডিজাইন সনদেরও প্রয়োজন হতে পারে', যোগ করেন মন্ত্রী।

নতুন স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় গ্রাহক ওয়ান স্টপ সেবা পাবেন কি না জানতে চাইলে ডিপিডিটি'র রেজিস্ট্রার মো. আবদুস সাত্তার জানান, এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, 'আমরা একটি অনলাইন সিস্টেম তৈরি করে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করছি। কারিগরি বিষয়গুলোর জন্য খুব শিগগির একটি কমিটি হবে, তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।'

অপরদিকে, দুটি অফিস আলাদা থাকুক, এমনটাও চান অনেকে। তারা বলেন, যদি শিল্প মন্ত্রণালয় সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে এ ধরণের কাজে বিঘ্ন আসতে পারে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাসরুর বলেন, 'গান, সাহিত্যকর্ম, সিনেমা, চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফিসহ অন্যান্য সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কপিরাইট অফিসের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। আর ডিপিডিটি পেটেন্ট ও ডিজাইনের মতো বিষয়গুলোর দেখভাল করছে এবং সফটওয়্যারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিল্পখাতসহ আরও বেশ কিছু খাতের সঙ্গে কাজ করছে।'

বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিসবাহ বলেন, 'শিল্পভিত্তিক আইপি ও কপিরাইটের জন্য একটি জাতীয় আইপি দপ্তর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা উচিত। একটি অফিসের অধীনে থেকে সুনির্দিষ্ট সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা দপ্তর থাকতেই পারে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank cuts lending rate margin

Bangladesh Bank says ‘reserve heist’ report is fake

It was “absolutely fake” news, Bangladesh Bank spokesman Mezbaul Haque said today.

2h ago