সরকারি সুবিধা কি শুধু স্থায়ী চা শ্রমিকের জন্যই?
দেশের চা-জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একটি কর্মসূচির হাতে নিয়েছে সরকার। ওই কর্মসূচির আওতায় তাদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। এজন্য চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিকদের তালিকা তৈরি হচ্ছে।
চা শ্রমিকদের জীবন-মান উন্নয়নে উদ্যোগটি প্রশংসিত হলেও এর আওতায় শুধু স্থায়ী শ্রমিকরা সুবিধা পাবেন। ফলে, বিশাল সংখ্যক অস্থায়ী চা শ্রমিক এই তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
'চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন' নামের এই কর্মসূচিতে দুঃস্থ ও অসচ্ছল চা শ্রমিকদের পরিবারপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বার্ষিক এককালীন সহায়তা দেওয়া হবে।
স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি বুক-২০১৯ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট চা বাগানের সংখ্যা ১৬৬টি। স্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন। অস্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন ও চা-জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন। তবে অস্থায়ী ও বেকার চা শ্রমিকের সংখ্যা স্থায়ী শ্রমিকের দ্বিগুণ হবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে চা-জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ।
১৬৬টি বাগানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হবিগঞ্জের বাবান চা বাগান, পঞ্চগড়ের সাইলিলান, ডাহুক, করতোয়া ও এমএম চা বাগান, ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রিনফিল্ড চা বাগান ও মৌলভীবাজারের হামিদিয়া বাগানে কোনো স্থায়ী চা শ্রমিক নেই। ফলে, এসব চা বাগানের শ্রমিকরা সরকারের এই তালিকা থেকে বাদ পড়বেন।
অস্থায়ী চা শ্রমিক কলতি রবিদাশ বলেন, 'চা বাগানে কাজ করেও শ্রমিকদের যেসব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তার কিছুই পাই না। কখনো অনুদান এলে স্থায়ী চা শ্রমিকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেকবার আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। একজন স্থায়ী চা শ্রমিক যা কাজ করেন আমরাও তাই করি। অনেক বঞ্চনার ভেতর এখন সরকারও আমাদের বঞ্চিত করছে।'
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, 'চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রত্যেকবার স্থায়ী শ্রমিকরা সুযোগ-সুবিধা পান। অথচ অস্থায়ী চা শ্রমিকরা সবচেয়ে বঞ্চিত। স্থায়ী চা শ্রমিকরা রেশন, বসতভিটা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও চিকিৎসাভাতা পেয়ে থাকে। সেই তুলনায় অস্থায়ী বা বেকাররা কিছুই পায় না।'
কালিগাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, 'আমার ইউনিয়নের সম্পূর্ণ এলাকা চা বাগান। চা বাগানের সবাই ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করে, কিন্তু সরকারের অনুদান পাবেন শুধু স্থায়ী শ্রমিকরা। চা বাগানে বছরের পর বছর কাজ করেও শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী হয় না।'
সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (বেদে, অনগ্রসর ও হিজড়া জনগোষ্ঠী) মো. শাহ জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা শুধু স্থায়ী চা শ্রমিকদের এই অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। তারা একে স্বাগত জানিয়েছেন।'
অস্থায়ী বা বেকার চা জনগোষ্ঠীর শ্রমিকরা বাদ পড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমরাও আপনার সঙ্গে একমত।'
রাজগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনারজি বলেন, 'বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শুধু স্থায়ী চা শ্রমিকদের ভোটে নির্বাচিত হন। আর আমরা সবার ভোটে নির্বাচিত হই।'
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ কন্দ বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি।'
Comments