‘লোনের টাকা না পাইলে পুরান ছেঁড়া কাপড় দিয়া ঈদ কইরমো’

‘ঈদ হামার জইন্যে নোয়ায়। হামরা ঈদের আশাও করোঙ না। কিন্তুক ছওয়াগুলার জইন্যে মনটা কাঁন্দে।’ কথাগুলো কষ্টের সঙ্গে বলছিলেন ৪৮ বছর বয়সী দিনমজুর মোখলেসুর রহমান।
বাড়িতে বসে দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন দিনমজুর মোখলেসুর রহমান। ছবি: এস দিলীপ রায়

'ঈদ হামার জইন্যে নোয়ায়। হামরা ঈদের আশাও করোঙ না। কিন্তুক ছওয়াগুলার জইন্যে মনটা কাঁন্দে।' কথাগুলো কষ্টের সঙ্গে বলছিলেন ৪৮ বছর বয়সী দিনমজুর মোখলেসুর রহমান।

মোখলেসুর স্ত্রী আয়েশা বেগম, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের খাটামারী আশ্রয় কেন্দ্রে থাকেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই দিনমজুরি করে সংসার চালান।

মোখলেসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দিনমজুরি করে একবছর আগে যে টাকা পেতাম এখনো একই টাকা পাই। কিন্তু এক বছর আগে যে টাকায় সংসারের খরচ হতো এখন সে খরচ করতে প্রায় দ্বিগুণ টাকা লাগছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে যা আয় করছি তা ব্যয় হচ্ছে সংসার চালাতে। সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকছে না। একদিন কাজে যেতে না পারলে অনাহারে অর্ধাহারে কাটাতে হয়। ঈদের দিন ভালো মানের কিছু খাবেন সে ব্যবস্থাও এখনো করা হয়নি।'

মোখলেসুরের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৪৪) ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিদিন তার স্বামী মজুরি পান ২০০-২৫০ টাকা আর তিনি পান ১২০-১৫০ টাকা। গেল দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন কাজও মিলছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনের আয় চলে যাচ্ছে সংসারের খরচে। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই।

তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে নিজের ও সন্তানদের পোশাক কেনার জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থায় ৫ হাজার টাকার ঋণ প্রস্তাব করেছেন কিন্তু এখনো দেয়নি। ঋণের টাকা পেলে হয়তো কেনাকাটা করতে পারবেন।

আয়েশা বেগম বলেন, 'লোন ন্যাওয়া ছাড়া হামার উপায় নাই। পরে কাজটাজ করি লোনের টাকা শোধ করি দিমো। নিজের তো জমা কোনো টাকা পাইসা নাই। লোনের টাকা না পাইলে আগের পুরান ছেঁড়া কাপড়চোপড় দিয়া ঈদ কইরমো।'

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড় গ্রামের রিকশাচালক নজরুল ইসলাম (৩৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার ৫ জনের সংসার খুব কষ্টে চলছে। বরং আগের থেকে তার আয় কমেছে কিন্তু খরচ বেড়েছে অনেক। ঘরে জমা যা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। ঈদ আসছে তাই সংসারে তিন ছেলে-মেয়ে নতুন কাপড় কেনার বায়না ধরেছে। শিশুরা নতুন জামা-কাপড়ের জন্য কাঁদছে।

বাজার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এনজিও থাকি ৫ হাজার টাকা লোন নিছোং। ছওয়া তিনটাক নিয়া মার্কেটোত য্যায়া মোর চোখতো কপালোত উঠি গ্যাইছে। এবার কাপড়চোপড়ের যে দাম তাতে মুই পছন্দের কিছুই কিনবার পাঙ নাই।'

গত বছরের তুলনায় জামা কাপড়ের দাম ২৫-৩০ শতাংশ এমনকি অনেকক্ষেত্রে দ্বিগুণ উল্লেখ করে এই রিকশাচালক বলেন, 'তিনটা ছওয়ার জামা কিনি দিবার য্যায়া মোর ৫ হাজার টাকা শ্যাষ হইছে। মোর আর বউয়ের জইন্যে কিছুই কেনা হয়নি।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা বাজার এলাকার জুয়েলারি ব্যবসায়ী নাদের আলী (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে। ঠিকমতো পরিবারের চাহিদাও মেটাতে পারছি না। তার উপর ঈদ বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। পরিবারের লোকজন বিশেষ করে শিশুরা নতুন জামা কাপড়ের জন্য আবদার করেই আসছে। স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গেল একবছর ধরে ব্যবসায় ধস নেমেছে।'

'বর্তমান বাজারে পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমি হিমশিম খাচ্ছি। ঈদের জন্য বাড়তি খরচ আমার জন্য ঋণের বোঝা তৈরি করেছে,' তিনি বলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাদের আলী বলেন, 'শহরের শপিং সেন্টারগুলোতে ঈদ কেনাকাটার জন্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ছে। তবে এসব মানুষের মধ্যে অধিকাংশই বিত্তশালী ও সরকারি চাকরিজীবী পরিবারের। ঋণ করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে শপিং সেন্টারে গিয়ে দুই সন্তান আর বৃদ্ধ মায়ের জন্য কেনাকাটা করেছি। জিনিসপত্রের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। ঋণ করে ঈদের কেনাকাটার জন্য যে টাকা ব্যয় করলাম এটা আমার জন্য বাড়তি চাপ হয়ে রইলো।'

লালমনিরহাট শহরের গোশালা রোডের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশানুরূপ কাপড় বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতেই সময় যাচ্ছে। আগের তুলনায় কাপড়ের দাম বেড়েছে। আমরাও বেশি দামে কাপড় কিনে এনেছি। মার্কেটে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ খুব কমই দেখা যাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Desire for mobile data trumps all else

As one strolls along Green Road or ventures into the depths of Karwan Bazar, he or she may come across a raucous circle formed by labourers, rickshaw-pullers, and street vendors.

14h ago