রাজনীতি

ইসি গঠন নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: তথ্যমন্ত্রী

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আজ বুধবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আজ বুধবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এ ধরনের সংগঠন থাকা ভালো। কিন্তু সেই সংগঠনের কোনো প্রতিবেদন যদি ভুল তথ্য-উপাত্তের ওপর হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গতানুগতিক হয়, তখন সেই সংগঠনের মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। গতকালকের প্রতিবেদনও গতানুগতিক, একপেশে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন আগে নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে টিআইবি একটি বিবৃতি দিয়েছিল। টিআইবি কাজ করে দুর্নীতি নিয়ে। নির্বাচন কমিশন আইন কিংবা নির্বাচন কমিশন গঠন পুরো বিষয়টাই রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক ইস্যুতে বিবৃতি দিয়ে প্রমাণ করেছে টিআইবি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। টিআইবির বিবৃতি আর বিএনপির বিবৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। অর্থাৎ তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে।

তিনি আরও বলেন, ফ্রান্সের লা মন্ড পত্রিকার মতো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের জরিপে কোনো দেশের দুর্নীতির আর্থিক মাত্রা পরিমাপ করতে পারে না। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা নিয়ে এই জরিপ পরিচালিত হয়, যা সম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে নয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে অর্থে এটি পরিচালিত হয় সেসব সংস্থার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এটি ফ্রান্সে বহুল প্রচারিত পত্রিকা লা মন্ডের বিবৃতি। ২০১৪ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সিমেন্স কোম্পানি থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার ফান্ড গ্রহণ করে। যে সিমেন্স কোম্পানি ২০০৮ সালে বিশ্বে দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

টিআইবি বলেছে, কোনো দেশে মত প্রকাশে স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেটিও তারা বিবেচনায় নেয়। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, তাদের যে প্রতিবেদন সেখানে সিঙ্গাপুরকে তারা দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেখানে যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে একটি অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, সিঙ্গাপুরে হাতো গোণা কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, কয়েকটি পত্রিকা। সেখানে আমাদের দেশের মতো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, বলেন হাছান মাহমুদ।

বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা যখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করলেন তখন তিনি বললেন, বিএনপি ভালোর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে। এত দিন যে তারা বলে আসলেন, তারা লবিস্ট নিয়োগ করেনি সেটি সত্য নয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অকপটে স্বীকার করেছেন, তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। আমরা এত দিন যে কথাগুলো বলে আসছিলাম তিনি সেটি স্বীকার করে নিলেন। তিনি সম্ভবত তার সহকর্মীদের চাপের মুখে ৫ মিনিট পরে আবার এসে বললেন, আমরা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করিনি। আসলে প্রথমটাই সত্য ছিল।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তথ্য-উপাত্ত বলে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি মার্কিন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অর্ধ শতাধিক চিঠি চালাচালি করেছিল। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মার্কিন সিনেট কমিটিসহ ৩টি কমিটিকে বিএনপি মহাসচিব নিজের স্বাক্ষরে চিঠিতে লিখেছেন, মার্কিন সরকারের দেওয়া বাংলাদেশকে সাহায্যের অনুদানের ব্যাপারে পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল মার্কিন সরকারের বিদেশ বিষয়ক হাউস ও সিনেটের ৫ জন চেয়ারম্যান ও এ সংক্রান্ত অন্যান্যদের চিঠি লেখেন মির্জা ফখরুল। সেই চিঠিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছে, তাকে যেন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি এবং জামায়াত যৌথভাবে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। বিএনপি সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার করার জন্য এফবিআইয়ের এজেন্ট ভাড়া করেছিল। যে এজেন্টকে পরে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে, সেই অপরাধে। বিএনপির শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।

সরকার পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকার দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করার জন্য, ট্যুরিজমকে প্রমোট করার জন্য পিআর ফার্ম নিয়োগ করে। বাংলাদেশ সরকারও সেটি করেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন সরকার করে। কিন্তু বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করার জন্য। এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের স্বাক্ষরে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশকে সাহায্য বন্ধ করার জন্য। বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র করছে, রাষ্ট্রের মানুষের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র করছে। এটি আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এটি যখন স্পষ্ট হয়ে গেছে তখন তাদের একেক নেতা একেক রকম বলছে, আবোল-তাবোল বকছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, নির্বচন কমিশন গঠনে জাতীয় সংসদে যে নতুন খসড়া আইন আনা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই প্রক্রিয়া নিয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির বক্তব্য আমি পত্রিকায় পড়েছি। এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে আসবে না। এই সরকারের মাধ্যমে বা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কোনো নির্বাচন কমিশন গঠন হলেও তারা নির্বাচনে যাবে না। তারা বলেছিল ২ দিনের নির্বাচন কমিশন আইন করা যায়। সিভিল সোসাইটির কয়েকজন প্রতিনিধি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, সময় না থাকলে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করে আইনটা করতে। তখন বলেছিল, ১৫ দিনের মধ্যে আইন করা যায়। যেই সরকার আইন করার উদ্যোগ গ্রহণ করল, তখন তারা উল্টো সুরে কথা বলতে শুরু করল।

বিএনপির সময় বেশ কয়েকবার টিআইবি প্রতিবেদন দিয়েছে। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পরপর ৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখন আপনারা সমর্থন করেছিলেন এবং এটার পক্ষে কথা বলেছেন। বিএনপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে—এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, টিআইবিতে যারা আজ কাজ করছে তাদের অনেকে তখন ছিলেন না। তখন অন্য অনেকে ছিলেন। তখন যে দুর্নীতি হয়েছে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। আরাফাত রহমান কোনো টাকা বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়ে। হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে প্যারালাল সরকার পরিচালনা করে দুর্নীতি করা হতো সেটি প্রমাণিত। আদালতের বিচারেও সেটি প্রমাণিত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

The contradiction of comfort

How comfortable is it to not have clean air to breathe?

5h ago