আমি রবিউল, আমি কুষ্টি‍য়ার মাস্তান: যুবলীগ সভাপতি

কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেছেন, তার কিছু ছেলেপেলে আছে। তিনি চাইলে ২-৩ ঘণ্টা থানার সামনে লড়াই করতে পারেন, লড়াই করে থানাকে ‘হটায়ে দিতে’ (হারাতে) পারেন।
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেছেন, তার কিছু ছেলেপেলে আছে। তিনি চাইলে ২-৩ ঘণ্টা থানার সামনে লড়াই করতে পারেন, লড়াই করে থানাকে 'হটায়ে দিতে' (হারাতে) পারেন।

গত ২৩ অক্টোবর তালবাড়িয়া ইউনিয়নে একটি এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় রবিউল এসব কথা বলেন। প্রায় ৩৫ মিনিটের ঐ বক্তৃতায় রবিউল আরও প্রসঙ্গ তুলে আনেন। ঐ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভয় দেখাতে বক্তব্য দেন তিনি।

কুষ্টিয়ার এক নেতার বাসায় বসে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি রবিউল কুষ্টিয়ায় বসে থাকবো, কাল যদি (আপনি) মনে করেন ১০ হাজার লোকের সমাবেশ করবো, আমি করে দেখাতে পারি। আমি সেই রবিউল।'

রবিউল বলেন, 'আমি রবিউল, আমি কুষ্টিয়া জেলার মাস্তান, আমাকে কুষ্টিয়া জেলা মাস্তানির সার্টিফিকেট দিয়েছে। খোকসা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত (জেলার দুই প্রান্ত) যত লোক আছে, মাস্তান আছে, আমার হাতে চলে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার শত শত ছেলেপেলে। না খেয়ে মরে যাচ্ছে। মাস্তান। চায়ের বিল দেওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। আমার রুবেল-নভেল গ্রুপ, আমার বাদশা গ্রুপ, আমার সজিব আইছে তার একটা গ্রুপ মজমপুর গেটে আছে, আমার সম্রাট গ্রুপ এই রকম বহু গ্রুপ আমার আছে।'

'আমাকে বারুইপাড়া, বহলবাড়িয়ায় সময় দিতে হয়। আমি একটা হুংকার দিয়েছিলাম বাইরুপাড়ায় ইউনিয়নে। আমাকে বাদে তারা মিটিংই করছে না। এখন সেখানকার নেতারা আমাকে ছাড়া প্রচারণা চালাচ্ছে না, তারা আমাকে ডাকছে।'

তালবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা আরিফুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি প্রয়োজনে তাকে উঠিয়ে নেব, তাকে বাড়ি থেকেই বাড়াতে (বের হতে) দেব না। আমি যদি মনে করি, কালকেই এটা করতে পারি। ওকে কুষ্টিয়া শহরে আসতে দেব না। প্রয়োজনে আলফার মোড়ে ওর অফিসে আসা বন্ধ করে দেব। দেখি ওর কোন বাপ ঠেকায়।...আমার ক্ষমতা দেখাব। এবার বুঝবি ক্ষমতা কত প্রকার কী কী এবার দেখিয়ে দেব।'

একপর্যায়ে রবিউল মিরপুর থানার ওসির সম্পর্কে বলেন 'তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে কোনো ঝামেলা করতে বারণ করেছেন। ওসি বলেছেন ২৭ তারিখের পর তিনি (ওসি) নৌকার ভোট করবেন।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালবাড়িয়া ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌসিফ আহাম্মেদ সোহান। আর মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হান্নান মন্ডল। তৌসিফ আহাম্মেদ সোহানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন এই যুবলীগ নেতা। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান জাসদ নেতা আরিফুল ইসলাম।

এ বিষয়ে শনিবার সকালে রবিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি বক্তব্য দিয়েছেন ২৩ অক্টোবর। সেটা এতদিন পর বাইরে এসেছে। এর মানে হলো এটিতে (ভিডিওতে) কোনো গড়বড় করা হতে পারে। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান।

রবিউল বলেন, 'কিছু বক্তব্য অনেক রাজনৈতিক, সেগুলো বড় বড় নেতা-মন্ত্রীরাও বলেন। সেগুলো কেটে কেটে আলাদা করে হিসেব করলে বক্তব্য অন্যরকম শোনাবে। আমার বক্তব্যেও ধারাবাহিকতা ছিল। এখানে সেটা মিসিং।'

তিনি দাবি করেন, 'ওরাও (অন্য প্রার্থী) যাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে।'

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি রবিউল ইসলামকে ফোন করেছিলেন তার আগের একটি জনসভায় দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে। সেখানেও তিনি উত্তেজিত হয়ে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, রবিউলকে তিনি শান্ত থাকতে বলেছেন।

বিষয়টি স্বীকার করেন রবিউল বলেন, 'ওসি সাহেব আমাকে ঠান্ডা থাকতে বলেছেন, আমি তখন বলি আমি ঠান্ডা হয়ে যাই তাহলে আপনি নৌকার ভোট করেন। ব্যাস এটুকুই।'

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে কাউকে হুমকি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। জনগণ এমনিতেই বর্তমান সরকারের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেবে।'

যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলামের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটা তার (রবিউলের) ব্যক্তিগত বক্তব্য।'

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

11h ago