মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের গণশুনানি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে আজ রোববার 'বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন' এর তদন্ত ও গণশুনানি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস।
আজ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ রোববার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
'বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন'-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক-এর নেতৃত্বে গণশুনানিতে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস-এর আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, প্রাক্তন আইজিপি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট-এর সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ অনেকে অংশ নেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণকমিশনের গণশুনানিতে ৩০ জন সাক্ষী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের তাণ্ডবের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্য প্রদানকারীর মধ্যে ছিলেন 'আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস'-এর সদস্য উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলামসহ অনেকে।
উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী বলেন, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে হেফাজত সমর্থকেরা শহরে তাণ্ডব শুরু করে। সরকারি স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা কোনো রকম বাধা ছাড়াই এ তাণ্ডব চালায়।
নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির মিয়া বলেন, '২৬ মার্চ সকাল থেকে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়। ছেলেরা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। সঙ্গে কিছু প্রশিক্ষিত লোক গান পাউডার নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়। তারা জেলা পরিষদ মিলনায়তন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করে পুরো স্টেশন পুড়িয়ে দেয়। আমি রেলস্টেশনের প্রত্যেকটি রুমের ভেতরে আগুন জ্বলতে দেখি।'
সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গণের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, 'এইবারেই প্রথম নয়- ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারিও সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গণে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গত মার্চ মাসে হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে গান পাউডার ব্যবহার করা হয়। এখানে ৩ দিন ধরে আগুন জ্বলেছে। বারবার ফোন করেও কোন সহযোগিতা পাইনি। মিলনায়তনের ধ্বংসযজ্ঞে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।'
জেলা সদরের শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্রী মদন মোহন চক্রবর্তীর ছোট ছেলে জীবন কুমার চক্রবর্তী বলেন, 'হেফাজতের হরতালের সময় আমাদের মন্দিরে ৩ দফায় হামলা হয়। প্রথম দফায় হরতাল সমর্থনকারীরা এসে হামলা চালায়। তাদের কাছে গান পাউডার ছিল। সবার হাতে দা, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে।'
গত ১২ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড়ের ঘটনার বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কুমিল্লার জেলার আহ্বায়ক সাংবাদিক দিলীপ মজুমদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'কুমিল্লার এই ঘটনার মাধ্যমে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও হামলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে 'হিন্দুশূন্য' করার এক সফল প্রয়াস এই ঘটনা।'
কুমিল্লা মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, 'কুমিল্লার ঘটনা এ অঞ্চল তথা সারাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা অপশক্তিকে দ্রুত বের করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করে প্রকৃত ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি করছি।'
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও সাতক্ষীরাসহ সারাদেশের গত পাঁচ বছরের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গণতদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশসহ শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে যা আগামী ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হবে বলে জানানো হয়।
Comments