বিক্রি না হওয়ায় চামড়া নদীতে ফেলে দিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
মৌলভীবাজারে ২০০ বছরের পুরনো চামড়া ব্যবসাকেন্দ্র বালিকান্দিতে বিনামূল্যেও কোরবানির পশুর চামড়া নিতে রাজি হননি অনেক আড়তদার। তাই, বাধ্য হয়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বিক্রি না হওয়া চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন।
এসব মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা বলছেন, এখানে গত মৌসুমেও চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায়নি। এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ।
জেলার আমিরপুর মাদরাসার মোহতারিম ওয়ালিদুর রহমান এতিমদের সহযোগিতার জন্য প্রতি বছর নিজ উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করেন। এবার তিনি ঈদের দিন সন্ধ্যায় সংগৃহীত চামড়া নিয়ে বালিকান্দি গেলে কোনো ক্রেতার দেখা পাননি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি সেগুলো পাশের মনু নদীতে ফেলে দেন।
বালিকান্দির চামড়ার আড়তদার মো. এলিন মিয়ার ভাষ্য, এবার চামড়া কিনতে যে পরিমাণ টাকা তিনি বিনিয়োগ করেছেন, আর ব্যবসার যে পরিস্থিতি, তাতে তিনি তার আসল উঠে আসা নিয়েই চিন্তিত।
বালিকান্দি কেবল মৌলভীবাজারেই নয়, গোটা সিলেট অঞ্চলের মধ্যে কাঁচা চামড়ার একটা বড় ব্যবসাকেন্দ্র। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও এখানে শতাধিক আড়তদার ছিলেন। কিন্তু পুঁজির অভাব আর সিন্ডিকেটের বেড়াজালে পড়ে ক্রমাগত লোকসানের মুখে বেশিরভাগ এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন টিকে আছেন মাত্র পাঁচ থেকে সাত জন।
এক সময় চামড়া ব্যবসা করতেন মো. খলিল মিয়া। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার সব পুঁজি ঢাকার হাজারিবাগের আড়তদারদের কাছে লোকসান করে শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও ব্যাংকের ঋণ আছে তার। চামড়া ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে দিয়ে জীবিকার তাগিদে তিনি এখন কাঠ ব্যবসা করেন।
বালকান্দি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত আলী বলেন, 'ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে কয়েক বছরের পাওনা বাকি। আবার প্রতি বছর সরকারিভাবে চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, সেই দাম দেন না মালিকরা। ফলে লোকসানের বোঝা বাড়তে থাকে।'
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৩ হাজারের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে।
এদিকে কাঁচা চামড়া নদীতে ফেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, 'কাঁচা চামড়া সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে নদীর পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিও তৈরি হয়।'
অবশ্য মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও শিক্ষা) মো. মেহেদী হাসান জানান, চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়ার কোনো অভিযোগ তারা এখন পর্যন্ত পাননি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবনের সঙ্কট হলে প্রয়োজনে তা সরবরাহ করা হবে।'
Comments