বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে: সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপি ও জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪টি এবং ২০১৯ সালে ১টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি ৩টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, '২০১৪ সালে জামায়াত ১টি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার, প্রতি বছর প্রতিমাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে।'
'দুঃখের বিষয় হচ্ছে লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে,' যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি লবিস্টের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে আমেরিকাকে বাংলাদেশে সাহায্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছিল। উন্নয়ন যেন ব্যাহত হয় সেজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলেছে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'মাঠে ময়দানে যারা বিএনপির কর্মী আছেন তারা কেউ চাইবেন না দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাক। তাদের কিছু নেতৃস্থানীয় মানুষ তাদের অগোচরে এমন কাজ করেছেন। বিএনপির সদস্যরাও নিশ্চয় চান না দেশ রসাতলে যাক। তাদের নেতারা কীভাবে এভাবে লেখতে পারেন। শেম অন দেম।'
মোমেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা সে দেশের আইনে একটি বৈধ প্রক্রিয়া। ভারত, পাকিস্তান, কাতার সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী সেটা হলো মুখ্য।'
'সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেনি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকার পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। একটা হচ্ছে সিনেট, স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লবি করে, তদ্বির করে, সরকার সে ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি। সরকার যেটা করেছে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য যেগুলো ছড়ানো হয় তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানোর জন্য।'
'বিজিআর নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বন্ধের জন্য বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের জন্য, অপপ্রচারের বদলে সত্য কথা বলার জন্য বাংলাদেশ সরকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা নেবে। তার একটি নমুনা হচ্ছে বিজিআর। তারা অসত্য তথ্য দিচ্ছেন, তখন বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল,' বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, 'বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের প্রতি ধিক্কার।'
মন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি যে এতগুলো ফার্মে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে এত টাকা ব্যয় করলেন তারা কি তাদের দলের আয় ব্যয়ের হিসাবে দেখিয়েছেন? তাদের সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে কি এই কাজগুলো হয়েছে?'
'সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতামতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে দেশের অনিষ্ট করা যাবে না,' যোগ করেন তিনি।
র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, 'বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের অপপ্রচারের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে শুধু মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনা প্রকাশ করেনি, সেই সঙ্গে 'র্যাব খুব খারাপ প্রতিষ্ঠান' উল্লেখ করে বিশ্বের বড় বড় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে নিয়মিত ফিডব্যাক দিয়েছে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, 'বিএনপির লবিস্টরা দেশবিরোধী এমন সব তথ্য দিয়েছে আমেরিকার কাছে যা জানলে দেশবাসী তাদের ধিক্কার জানাবে। সরকারের কাছে প্রমাণ আছে যে বিএনপির লবিস্টরা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং র্যাবকে শান্তিরক্ষা মিশনে না নেওয়ার অপচেষ্টায় জড়িত।'
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এই প্রক্রিয়া কালকেই শুরু হবে না, সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবো, আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।'
তিনি বলেন, 'কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের অপপ্রচারের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'র্যাব জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দেশের সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে, মানবপাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে। এই বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে।'
'র্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেররিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে বিবেচিত হবে বরং টেররিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ,' যোগ করেন তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছে। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।'
Comments