বাংলাদেশ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরুষের চেয়ে নারী ১৪ ভাগ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়

পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, দেশে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী পুরুষের চাইতে শতকরা ১৪.১ ভাগ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি কাটিয়ে কীভাবে নারীর অবদানকে আরও উঁচুতে তুলে ধরা যায়, সেজন্য সরকার আগামী বছরের জুন নাগাদ একটি জাতীয় অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, দেশে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী পুরুষের চাইতে শতকরা ১৪.১ ভাগ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি কাটিয়ে কীভাবে নারীর অবদানকে আরও উঁচুতে তুলে ধরা যায়, সেজন্য সরকার আগামী বছরের জুন নাগাদ একটি জাতীয় অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

তিনি আজ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত 'জলবায়ু মোকাবিলায় গ্রামীণ নারী: চর, উপকূল ও পার্বত্য এলাকা' শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানের আলোচনায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে, জলবায়ু সহনশীলতা সৃষ্টিতে, অপুষ্টি, খাদ্য সংকট ও দারিদ্র ঠেকাতে নারীর ভূমিকা মূল হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এবং সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে নারীদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার মতো প্রসঙ্গগুলোও উঠে এসেছে।

বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে বীজ সংরক্ষণ, অভিযোজন এবং জলবায়ু সহনশীল কৌশল গ্রহণ করার মাধ্যমে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নারীরা কতটা কার্যকর গুরুত্বপূর্ণ রাখছেন, তা চিহ্নিত করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জুডিথ হারবাটসন, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কোঅপারেশন কোরিন হেনচজ পিগনানি, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম তরিকুল ইসলাম, এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিনড।

এমজেএফের সিডা প্রকল্পের আওতায় 'স্ট্রেনদেনিং সিভিল সোসাইটি এন্ড পাবলিক ইন্সটিটিউশন টু এড্রেস কমবেটিং জেন্ডার বেইসড ভায়োলেন্স এন্ড বিল্ড কমিউনিটি রেসিল্যান্স টু ক্লাইমেট চেঞ্জ' কর্মসূচি চলাকালে লক্ষ্য করেছে যে নারী তাদের পরিবার ও সমাজের মঙ্গলের জন্য অনেক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারা প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

সভাপ্রধানের বক্তব্য প্রদানকালে এমজেএফ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমরা দেখেছি যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীর জ্ঞান, দক্ষতা এবং সৃষ্টিশীল ধারণা খুবই শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ নারীর দাবিদাওয়াকে উচ্চকিত করার জন্য এবং অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য এমজেএফ কাজ করে যাচ্ছে।

এই অনুষ্ঠানে তৃণমূল থেকে নারীরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তারা বলেন, গ্রামের নারীরা স্বাভাবিক সময়ে এবং দুর্যোগকালেও তাদের সংসার, সন্তান, বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দেখাশোনার পাশাপাশি রান্না, খাবার পানি যোগাড়, মূল্যবান জিনিষসহ বীজ ও খাদ্য সংরক্ষণের কাজটি করেন।

ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ইউএন উম্যান এর ডিআরআর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড হিউম্যনিটারিয়ান একশনস, প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট দিলরুবা হায়দার এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. ফজলে রাব্বি সিদ্দিক আহমেদ।

আলোচনাকালে বক্তারা বলেন যে জলবায়ু পরিবর্তন, বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবে নারী ভিন্নভাবে এবং অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন: জ্বালানি ও জলাধারে নারীর প্রবেশাধিকার, নতুন উৎস সন্ধান, খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই কৃষি, জীবিকা, শিক্ষা, নিরাপদ কাজের সুযোগ ও সুন্দর জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে টেকসই উন্নয়নের জন্য রূপান্তরিত অর্থনীতি, পরিবেশ এবং সমাজ পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে নারী।

এমজেএফ তাদের সিডা প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি কৃষিতে গ্রামীণ নারীর দায়িত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনার প্রভাব বিষয়ে ইতোমধ্যে তিনটি জরিপ করেছে। প্রতিটি জরিপেই দেখা গেছে গ্রামীণ নারী, আদিবাসী নারী বিশেষ করে উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকার নারী মাছ ধরা, গৃহপালিত পশুর পরিচর্যা, চাষাবাদ, ভিটায় বাগান করা, মৎস্য চাষ ও জুম চাষের সঙ্গে জড়িত। সাঁওতাল ও চাকমা নারীরা চাষাবাদ থেকে বাজারে পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া সব কাজই প্রায় একা হাতেই করেন।

Comments

The Daily Star  | English
IMF suggestions for Bangladesh

IMF suggests raising power, gas and fertiliser prices

The International Monetary Fund yesterday recommended reducing government subsidies by hiking prices of power, gas and fertiliser, and spending the saved money on society safety net programmes.

17h ago