নির্বাচন

শরীয়তপুরে ভোটকেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগ-গুলি-সাংবাদিক অবরুদ্ধ

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বোমা বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে। এই কেন্দ্রে অন্তত ৫ জন সাংবাদিককে প্রায় ১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
ভোজেশ্বর ইউনিয়নের দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। ছবি: এমরুল হাসান বাপ্পী/স্টার

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বোমা বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে। এই কেন্দ্রে অন্তত ৫ জন সাংবাদিককে প্রায় ১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দুপুর সোয়া ২টার দিকে চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারীর সমর্থকরা ওই কেন্দ্রে বোমা হামলা ও গুলি করে ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর তারা কেন্দ্র থেকে ৩টি ভোট বাক্স, ৩ হাজার ব্যালট ও নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ সময় আনুমানিক ১০ জন আহত হন।

যাওয়ার সময় তারা কক্ষের দরজা বাইরে আটকে দিলে নির্বাচন কর্মকর্তা, আনসার সদস্য ও ভোটাররা আটকা পড়েন। সেখানে আরও আটকা পড়েন দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক এমরুল হাসান বাপ্পী, যমুনা টিভির সাংবাদিক মনিরুজ্জামান, কালের কণ্ঠের সাংবাদিক শরীফুল আলম ইমন, প্রথম আলোর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ ও মানবাধিকার খবরের সাংবাদিক হেমন্ত দাস।

পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেল। ছবি: এমরুল হাসান বাপ্পী/স্টার

এ সময় ওই কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং আবারও বোমা হামলা ও গুলি করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় যমুনা টিভির সাংবাদিক কাজী মনিরুজ্জামান, কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি শরীফুল আলম ইমন ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জাকারিয়া মাসুদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোটরসাইকেল।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুঁড়ে কেন্দ্র রক্ষার চেষ্টা করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাইয়ের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্কুল ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনার পর দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে অবরুদ্ধ ৪ জন সাংবাদিক, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট ও স্থানীয়দের সঙ্গে।

প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ৩টি বোমা বিস্ফোরণ হয়। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের প্রতিহত করলে তারা পালিয়ে যায়। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে হঠাৎ কেন্দ্রে আবার হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি ছুঁড়ে কেন্দ্র দখল করা হয়। সাংবাদিক ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করা হয়। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিলে তারা গুলিবর্ষণ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।'

তবে হামলাকারীরা ৩টি ভোটবাক্স, ৩ হাজার ব্যালট ও নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী ছিনতাই করে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক শরীফুল আলম ইমন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরেছি। তারা বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিল সব সাংবাদিকগুলারে মাইরা ফেল। আমরা ভয়ে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বসে থাকি। এর মধ্যে আমাদের উদ্দেশ্য করে তারা জানালায় গুলি করে। তারা আমার ও যমুনা টিভির প্রতিবেদকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে।'

'এ ঘটনায় আমরা মামলা করব,' বলেন তিনি।

হামলার বিষয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার জয় নিশ্চিত জেনে চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোট কেন্দ্রে এ হামলা ঘটিয়েছেন।'

দেলোয়ার সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হকের চাচাত ভাই হওয়ার ক্ষমতাবলে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে বারবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল ধরেননি। তার মোবাইল নম্বরে মেসেজ পাঠালেও তার জবাব পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য জানতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হককে ফোন করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঘটনাস্থল আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।'

ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'যারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন খুব দ্রুত তাদের বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments