গ্যাস সংকট: ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের বাস্তবতা

ঢাকা ও আশেপাশের এলাকাগুলোর বাসাবাড়ি, শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেন বাঘের দুধের মতোই দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা ও আশেপাশের এলাকাগুলোর বাসাবাড়ি, শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেন বাঘের দুধের মতোই দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোদের বাসিন্দা গৃহবধু নিলুফার মান্নানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমের শুরু থেকে তাকে সারাদিনের রান্না সকাল ১০টার মধ্যে শেষ করতে হয়। এরপর থেকেই পাইপের মাধ্যমে আসা গ্যাসের সরবরাহ একদম বন্ধ হয়ে যায়।
 
গতকাল তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা আমাকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রাখে।' 

নিলুফার যে মহল্লায় থাকেন, সেখান থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে যাত্রাবাড়ীতেও একই ধরনের পরিস্থিতি।
 
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সোহেল রানা শুভ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোর থেকেই আমরা গ্যাসের সরবরাহ পাই না। সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে বাইরে থেকে নাস্তা কিনে আনা এখন প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।' 

দ্য ডেইলি স্টার রাজধানীর রাজাবাজার, জিগাতলা, মহাখালি, আদাবর, বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবী ও পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং সবাই একই কথা জানিয়েছেন। এসব এলাকার বাসিন্দাদের গ্যাস স্বল্পতার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

পূর্ব রাজাবাজারের সুরভীর রোজারিওর পরিবার চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় একটি ব্যায়বহুল সমাধানে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রান্নাঘরের জন্য তাদের একটি বৈদ্যুতিক চুলা ও ওভেনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। 

সুরভী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা টাকা দিয়েও গ্যাস পাচ্ছি না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল। এটি অন্যায়।'

শুধু বাসাবাড়িতেই নয়, ঢাকার চারপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্প কারখানাতেও গ্যাসের সংকটের কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এই দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই বললেই চলে।
 
গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখা শুরু করেছে। এতেও চলমান সংকটের সমাধান হয়নি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানী বিভাগের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া গ্যাসের সরবরাহ সংকটের একটি বড় কারণ।

দেশে গ্যাসের বর্তমান চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিতরণকারীরা ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করতে পারছে। 

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মোট চাহিদার ৭৫ শতাংশ গ্যাস উৎপাদিত হয় এবং ২০ শতাংশ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৫ শতাংশ গ্যাস আন্তর্জাতিক খোলা বাজার থেকে আনা হয়।
 
বাংলাদেশ ২০২১-এর অক্টোবর মাসে প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট) ৩৬ ডলার দামে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে। সেসময় একজন সরবরাহকারী সর্বোচ্চ ৫১ ডলার দাম হেঁকেছিলেন।
 
বিশেষজ্ঞরা জানান, নতুন গ্যাসের উৎস না খুঁজে সরকার যে খোলা বাজারের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে, সেটি দুর্ভোগ আরও বাড়াবে।

Comments

The Daily Star  | English
IMF calls for smaller budget

IMF suggests raising power, gas and fertiliser prices

The International Monetary Fund yesterday recommended reducing government subsidies by hiking prices of power, gas and fertiliser, and spending the saved money on society safety net programmes.

16h ago