লিংক ক্লিকে সাবধান

তাদের কোনো ডিগ্রি নেই। কেউ কেউ প্রাথমিক শিক্ষাও শেষ করতে পারেননি। তবে কীভাবে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আইডি ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করতে হয়, তা ঠিকই শিখে গেছেন।
প্রতীকী ছবি

তাদের কোনো ডিগ্রি নেই। কেউ কেউ প্রাথমিক শিক্ষাও শেষ করতে পারেননি। তবে কীভাবে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আইডি ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করতে হয়, তা ঠিকই শিখে গেছেন।

ইউটিউব ভিডিও দেখে তারা 'ফিশিং লিংক' তৈরি করতে শিখেছেন। এসব লিংক তারা ব্যবহারকারীদের কাছে এমনভাবে পাঠান, যাতে দেখে মনে হয় ওই ব্যক্তির কোনো ফেসবুক বন্ধু এটি পাঠিয়েছেন।

লিংকগুলো সাধারণত কোনো কনটেস্টে আমন্ত্রণের মতো দেখায়। কেউ যখন এসব লিংকে ক্লিক করে, তখন একটি পপ-আপ আসে এবং ব্যবহারকারীকে আবার লগইন করতে বলে। ব্যবহারকারী লগইন করা মাত্রই তার সব ডেটা হ্যাকারদের কাছে চলে যায়।

তখন ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং তারা ব্যবহারকারীকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের শিবচর থেকে ৩ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ কৌশলটি প্রকাশ করেছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ওবায়দুর রহমান নোবেল (২০), শামীম সরদার (২১) ও সজিব খলিফা (২১)।

নোবেল নারীদের পার্স বিক্রেতা। তিনি এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। শামীম একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সজিব পেশায় দর্জি এবং তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ডিবির স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ২ বছরে ওই ৩ জন প্রায় ২ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পেরেছেন। কোনো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর হ্যাকাররা ম্যাসেজ ও ব্যক্তিগত বিবরণ ঘাটাঘাটি শুরু করতেন। এরপর  অ্যাকাউন্টে পাওয়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিতেন তারা।

এই প্রতিবেদক ২জন নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা চক্রটিকে ৪ থেকে ৫ হাজার  টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তাদের একজন বলেন, 'হ্যাকাররা আমার ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় আমাকে টাকা দিতে হয়েছিল।'

৩ জনের গ্রেপ্তারের খবর শুনে ওই ২ নারী সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে যান এবং দেখেন তাদের কনটেন্ট এখনো গ্রেপ্তারদের ফোনে আছে।

হ্যাকাররা টাকার বিষয়ে আলোচনার সময় তাদের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠাতেন। এই ধরনের কিছু ক্লিপ ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

এগুলোতে একজন সন্দেহভাজনকে বলতে শোনা গেছে, 'টাকা পরিশোধ করুন। না হলে আপনি বিপদে পড়বেন। এটা আপনার জীবনের বিষয়।'

ডিবির সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা এই হ্যাকারদের 'নিরাপদ স্বর্গে' পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা গত দেড় বছরে এ এলাকাগুলি থেকে প্রায় ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।'

ডিসি শরিফুল বলেন, 'এ ৩ জনের মতো প্রতারকরা বেশ কিছুদিন ধরেই এ অঞ্চলে সক্রিয়। তারা আগে মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে মানুষকে ঠকাতেন।'

এমএফএসে নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণে কারণে তারা অন্য পদ্ধতিতে প্রতারণা করা শুরু করেন।  

ডিবি পুলিশ কোনো অচেনা ইউআরএলে ক্লিক না করার, অচেনা পোর্টালে ব্যক্তিগত আইডি বা পাসওয়ার্ড না দেওয়ার, টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সক্রিয় করার এবং সংবেদনশীল ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank headquarters is seen in Dhaka

Will BB steps build up reserves? Not so soon

Bangladesh Bank’s steps to boost the country’s foreign currency reserves will not yield any positive results overnight.

12h ago