অপরাধ ও বিচার
ফরিদপুর 

পদ্মায় বেড়া দিয়ে মাছ শিকার

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীর ২টি ধারায় বাঁশের দুটি বেড়া দিয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। একটি বেড়ার দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার এবং অপরটি ১২০ মিটার। আইন না মেনে এভাবে মাছ ধরায়, বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত মৎস্যজীবী ও সাধারণ জেলেরা।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীর ২টি ধারায় বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীর ২টি ধারায় বাঁশের দুটি বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। একটি বেড়ার দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার এবং অপরটি ১২০ মিটার। আইন না মেনে এভাবে মাছ ধরায়, বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত মৎস্যজীবী ও সাধারণ জেলেরা।

উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছমীর বেপারীর ডাঙ্গী ও আমীন খার ডাঙ্গী গ্রামের মধ্যে পদ্মার একটি ধারায় এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর শালিপুর পূর্ব গ্রামে পদ্মা নদীর আরেকটি ধারায় জাল ও বাঁশ দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে ফাঁদ পেতে ভেসাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে।

১৯৫০ সালের মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নদীতে কিংবা কোনো জলাধারে এভাবে আড়াআড়ি বেড়া দিয়ে মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় প্রতি বছর পানি কমলে এ দুটি স্থানে বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হয়। জেলেদের মাছ ধরতে ওই বেড়ার কাছে যেতে দেওয়া হয় না।

জানা যায়, ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি বেড়া দিয়েছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের হরিণা গ্রামের বিকাশ হালদার (৫২)।

বিকাশ হালদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১০ দিন আগে জাল ছাড়াই ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এ বাঁশের বেড়া দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'বেড়ার দুই পাশে দুটি ভেসাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এ কাজে ৪ জন জেলে সবসময় নিয়োজিত আছে। সাধারণত এখানে টাটকিনি, পুঁটি ও চিংড়ি মাছ ধরা পড়ছে।'

বিকাশ হালদার জানান, চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য কবির খানের ভাই আজিজ খানকে ১০ হাজার টাকা ও যে এলাকায় ওই বেড়াটি দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর খানকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি সেখানে মাছ ধরছেন।

গত ২৫ বছর ধরে তিনি ওই এলাকায় মাছ ধরছেন বলে জানান তিনি।

এ অভিযোগের বিষয়ে আজিজ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমার ও আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অনেকেই অনেক অভিযোগ করতে পারেন। সামনা সামনি করলে তার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়।'

তিনি বলেন, 'আমি ও আমার ভাই ওই এলাকার মাছ ধরার কোনো কাজে যুক্ত নই। ওই এলাকায় কেউ অবৈধভাবে পদ্মার শাখায় বেড়া দিয়ে মাছ ধরছেন কিনা তাও আমার জানা নেই।'

১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের অপর বেড়াটি দিয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহাদুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী হারান হালদার (৬৫)।

হারান হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অবৈধ জেনেও তিনি বাঁধ দিয়েছেন। কেউ বাঁধা দেয়নি, তাই তিনি মাছ ধরে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমীর হোসেন খান জানান, তার এলাকার দুটি জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে বলে তার জানা নেই।

তিনি বলেন, 'সামনে নির্বাচন। তাই এখন অনেক কিছুই আমাদের দেখেও না দেখার ভান করতে হবে।'

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মাহমুদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার আমি এ দুটি বেড়ার বিষয়ে জানতে পারি। চরভদ্রাসনে বর্তমানে ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেই। ফরিদপুর সদরের ইউএনও অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। বিষয়টি নিয়ে তার (ইউএনও) সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

জানতে চাইলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ইউএনও মো. মাসুদুল আলম বলেন, 'আমি বিষয়টি আজ জানতে পেরেছি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।'

Comments