জোর করে শিশুর স্বীকারোক্তি: তদন্ত কর্মকর্তার পদোন্নতিতে হাইকোর্টের বিস্ময়
বগুড়ায় ২০১৫ সালে নিহত একজনের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাইয়ের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া তৎকালীন পুলিশের উপ-পরিদর্শক নয়ন কুমারকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়ায় সরকারের প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার মন্তব্য করেন, একটি বারো বছরের শিশুকে তার ৮ বছরের ভাইকে হত্যার স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য নির্যাতন করা হয়েছিল। এটা কতটা অমানবিক! কেন এবং কীভাবে তিনি (নয়ন) এটি করেছেন তা তদন্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই তাকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বগুড়ার জুভেনাইল কোর্টে মামলার বিচার কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ফৌজদারি রিভিশন আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, আমরা তার (নয়নের) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। তবে উত্তরে তিনি বলেন, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে অনার্স ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তিনি এটা লিখে তার কাজকে ন্যায্যতা দিতে চেয়েছিলেন, যা ক্ষমার অযোগ্য।
নয়নের আইনজীবী শানজিদা খানম হাইকোর্টকে বলেন, তার (নয়ন) সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল কারণ তিনি তখন একজন নতুন কর্মকর্তা এবং একজন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হিসেবে নতুন।
নয়ন নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং তিনি ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
নয়ন, যিনি এখন একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়নের অফিসে রয়েছেন, তার আগের নির্দেশ অনুসারে বেঞ্চের সামনে হাজির হন।
পিটিশনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টকে বলেন, নয়নের কাজকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। তিনি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছেও প্রার্থনা করেছিলেন।
শুনানি শেষ করার পর, হাইকোর্ট পিটিশনে আদেশ দেওয়ার জন্য ১৩ ডিসেম্বর ধার্য করে এবং নয়নকে সেই দিনে হাজির হতে বলেন।
২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়ার কাটাখালীতে একটি পাট খেতে মো. সোহাগ নামে আট বছরের এক শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়।
গত ১১ জুন, ডেইলি স্টার হত্যা মামলায় 'বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারিবল' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে সোহাগের বড় ভাই ১২ বছরের সৌরভ মিয়ার উপর নির্যাতন এবং তাদের পরিবারের দুর্ভোগের বর্ণনা আছে।
যা সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন আইনজীবীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের কাছে জনস্বার্থ মামলা হিসাবে আবেদন করতে অনুপ্রাণিত করে।
Comments