মিয়ানমারের সেনাবিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহীদের ‘ক্রাউডফান্ডিং’

জাপানের ছোট এক শহরে থাকেন মিয়ানমারের এক নারী। অন্যদের কাছে তিনি পরিচিত ‘বার্মিজ বিস্ট’ নামে। নিজ দেশের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে নিতে ‘ক্রাউডফান্ডিং’ বা অর্থ সংগ্রহ করছেন তিনি।
মিয়ানমারে সেনাবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত আছে। ছবি: এএফপি

জাপানের ছোট এক শহরে থাকেন মিয়ানমারের এক নারী। অন্যদের কাছে তিনি পরিচিত 'বার্মিজ বিস্ট' নামে। নিজ দেশের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে নিতে 'ক্রাউডফান্ডিং' বা অর্থ সংগ্রহ করছেন তিনি।

আজ সোমবার সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রকৃত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী পেশায় সহকারী অধ্যাপক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সেনাবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে তহবিল সংগ্রহ করছেন। পোর্ট্রেট বা প্রতিকৃতি এঁকে যে অর্থ পান, তা জমা পড়ে সেই তহবিলে।

৩০ বছরের কোঠায় থাকা এই নারী আল-জাজিরাকে বলেন, 'নির্জন এই শহরে আছে শান্তি, আছে নিরাপত্তা, যা মিয়ানমারে নেই।'

'বার্মিজ বিস্ট' মিয়ানমার ছেড়েছিলেন প্রায় ১ দশক আগে। জাপান থেকে তিনি অর্থ পাঠাচ্ছেন ত্রাণকর্মীদের কাছে। তিনি অর্থ পাঠিয়েছেন মিয়ানমারে ধর্মঘটে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের কাছেও। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি তিনি সেনাবিরোধী জাতীয় ঐক্যমতের সরকারের (এনইউজি) সামরিক শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) কাছেও অর্থ পাঠিয়েছেন।

মিয়ানমারের সেনারা এই সংগঠন দুটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

'তহবিল সংগ্রহকারী হিসেবে আমি অনেক তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা পিডিএফে যোগ দিয়েছেন। তারা সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, কারণ তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।'

তিনি মনে করেন, সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া ছাড়া সেই তরুণদের আর কোনো উপায় ছিল না।

সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে মিয়ানমারে যে গণ-আন্দোলন শুরু হয়, শুরুতে তা শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু সেনারা সেই আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন শুরু করলে গড়ে তোলা হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ। ইতোমধ্যে আন্দোলনে ১ হাজার ৩০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

সেনাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে গত সেপ্টেম্বরে 'জনতার প্রতিরোধ সংগ্রাম'র ঘোষণা দেয় এনইউজি। তবে 'প্রতিরোধ সংগ্রাম' চালিয়ে নিতে নানাবিধ সমস্যায় পড়ে সংগঠনটি। তারা মিয়ানমারে কর্মবিরতিতে যাওয়া প্রায় ২ লাখ কর্মচারীকে ৬০ ডলার করে 'সহযোগিতা' দেওয়ার অঙ্গীকার করে।

কিন্তু গত আগস্টে দেখা যায় ৪ লাখের বেশি মানুষ কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক তহবিল সংগ্রহের কাজ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে ধর্মঘটে অংশ নেওয়া সরকারি কর্মচারীদের অর্থায়ন করতে লটারির আয়োজন করে এনইউজি। পাইলট স্কিমের মাধ্যমে ৮০ লাখ ডলার যোগাড় করা হয়।

স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, লটারির ৭৮ বিজয়ীর মধ্যে ৫৫ জন তাদের অর্থ সংস্থাটির তহবিলে জমা দিয়েছেন।

এ ছাড়াও, সেনাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে নিতে বাজারে সুদবিহীন বন্ড ছেড়েছে বিদ্রোহীরা। এনইউজির দাবি, বাজারে ছাড়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ লাখ ডলারের বন্ড বিক্রি হয়ে যায়। এখন বন্ড থেকে ২০ কোটি ডলার তহবিল যোগাড়ের পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার বিষয়ক উপদেষ্টা রিচার্ড হরসে আল-জাজিরাকে বলেন, 'এনইউজি লটারি, র‌্যাফেল ড্র ও বন্ড বিক্রিতে সাফল্য দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা কয়েক মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ থেকে বোঝা যায়, মিয়ানমারের প্রবাসীরা সেনাবিরোধী আন্দোলনে অর্থ যোগান দিতে আগ্রহী।'

ইউরোপে বসবাসকারী এনইউজি'র এক সমর্থক সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, তিনি ২ হাজার ডলার মূল্যের বন্ড কিনেছেন। এর বিপরীতে তিনি কোনো আর্থিক সুবিধা প্রত্যাশা করেন না। তিনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে এই বন্ড কিনেছেন।

তবে বসে নেই সামরিক সরকারও। দেশটির জনগণের ওপর নির্যাতনের পাশাপাশি তারা আর্থিক খাতেও কঠোরনীতি নীতি গ্রহণ করেছে। এটিএম কার্ড ও অনলাইন লেনদেনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।

বন্ড ছাড়ার খানিক পরেই সেনাদের মুখপাত্র হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যারা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করবে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।'

এনইউজি তাদের অধীন সশস্ত্র যোদ্ধাদের জানিয়েছে, তারা যেন বেসামরিক ব্যক্তি, বিশেষ করে শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করেন। তারা যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে যুদ্ধ চালিয়ে যান।

সামরিক শাসকের হুঁশিয়ারিকে জনগণ যে আমলে নিচ্ছে না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বার্মিজ বিস্টের কথায়। তিনি বলেন, 'যেসব সংগঠন জেনেভা কনভেনশন মেনে চলেছে তাদের কাছেই অর্থ পাঠানো হচ্ছে। আমাদের জনগণকে উদ্ধার করতে এই তহবিল কাজে লাগানো হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
IMF calls for smaller budget

IMF suggests raising power, gas and fertiliser prices

The International Monetary Fund yesterday recommended reducing government subsidies by hiking prices of power, gas and fertiliser, and spending the saved money on society safety net programmes.

16h ago